বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি, অবৈধ সংযোগের সংখ্যাই বেশি (ভিডিও)
দেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঠিক হিসাব কারো কাছেই নেই। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বৈধ সংযোগের থেকে অবৈধ সংযোগের সংখ্যাই বেশি। আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মদদেই অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।
রাজধানীর করাইল বস্তিতে খাতা কলমে তিতাসের বৈধ সংযোগ না থাকলেও প্রতিটি ঘরেই জ্বলছে গ্যাসের চুলা।
শুধু বাসা নয় বস্তির দোকান আর রেস্তোরাগুলোতেও অবৈধ চুলা জ্বলে দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা।
অথচ গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী এই বস্তিতে গ্যাসের কোন বৈধ সংযোগ-ই নেই। ব্যবহারকারীরা বলছেন, তিতাসের লোকজনের মাধ্যমেই পাওয়া যায় গ্যাস সংযোগ।
অবৈধ বাণিজ্য এখানে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। চোরা লাইনে এক চুলার জন্য মাসে দিতে হয় ৭০০ টাকা। দোকানে সারাদিন চুলা জ্বললেও মাসে বিল ১৮০০-২১০০ টাকা আর রেস্তোরায় ৯০০০-১২০০০ টাকা।
দোকানের মালিক জানান, গ্যাসের চুলার বিল দিনেরটা দিন পরিশোধ করতে হয়। দোকানের চুলার জন্য প্রতিদিন ৭০টাকা দিতে হয়।
অপর এক গৃহিণী জানান, বাসায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি চুলার জন্য ৭০০ টাকা দিতে হয়।
কড়াইল বস্তির গৃহস্তলীর প্রায় ১০ হাজার চুলা, দোকান-রেস্তোরার ১ হাজার ৫০০ চুলা থেকে মাসে বিল ওঠে কম-বেশি আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। যার এক পয়সাও জমা হয় না সরকারি কোষাগারে। তাহলে এই টাকা যায় কোথায় ?
১৯ নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা বেগম জানান, এলাকায় গ্যাসের মূল ডিলার মঞ্জুরুল হক আর তিনি সাব ডিলার।
রাজধানীতে বস্তির পাশাপাশি বহু এপার্টমেন্ট আর কারখানা চলছে অবৈধ সংযোগে। যার হিসেব নেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। তবে সম্প্রতি নারায়নগঞ্জে অভিযানে গিয়ে অবাক করা তথ্য পায় তিতাস। দুটি এলাকায় বৈধ সংযোগের থেকেও কয়েকগুণ বেশি অবৈধ সংযোগ পায় তারা। এদিকে অবৈধ সংযোগের হিসেব না জানলেও ক্ষতির হিসাব জানে বিইআরসি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, অবিরত চুরি অব্যাহত রেখেছে। আজকে বছরের পর বছর ধরে শুনছি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ তা হলে আছে কতো? একদিকে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। অপরদিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হয় আমরা গণ-শুনানিতে বলেছি।
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
এসজে/এমএন
মন্তব্য করুন