• ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
logo

ভোটের হাওয়া- ফেনী- ২ ও ৩

আওয়ামী লীগ চাঙ্গা, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নীরব বিএনপি

আজাদ মালদার, ফেনী

  ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৫

ফেনী ২ ও ৩ আসনে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে ছুটছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা। তারা বলছেন, এলাকায় নিজ জনপ্রিয়তা আর যোগ্যতা দিয়েই দলকে আশ্বস্ত করতে চান। অন্যদিকে, নিজেদের লাভ-ক্ষতি নিয়ে চুল-চেরা বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররাও।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে দেশের রাজনীতির হাওয়া উত্তপ্ত। এ বছরের শেষের দিকে যেহেতু নির্বাচন হওয়ায় কথা রয়েছে তাই মত পার্থক্য থাকার পরেও ফেনী-২ সদর আসনে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নীরব। তবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের নিশ্চয়তা পেলেই প্রচার-প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে দলটি।

এদিকে, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সূত্র মতে, টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে দলটি। তারা প্রচারণায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনকে প্রচারণার অংশ হিসেবে নেবে।

বর্তমানে ফেনী-২ সদর আসনে সংসদ সদস্য হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। একসময় বিএনপির ভিপি জয়নাল আর আওয়ামী লীগের জয়নাল হাজারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সমানে সমান। বর্তমানে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলেন ফেনী তরুণ সমাজের অহংকার এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।

১৯৯৬ সালে জাসদ থেকে ফেনী জেলা বিএনপিতে যোগ দেন ফেনী সরকারি কলেজের ভিপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন। এর আগে ১৯৮৮ সালে জাসদ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনেও সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়নাল হাজারীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও। এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রেক্ষাপট বদলে যায় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে।

ফেনী সদর আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এবার এককভাবে নিজাম উদ্দিন হাজারী ও বিএনপি থেকে জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল), সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়।

এদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব খন্দকার নজরুল ইসলামকে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে দলীয় একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগে নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিপরীতে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী নমিনেশন পেতে পারেন। আর বিএনপিতে ভিপি জয়নালের বিপরীতে মজনুকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ফেনী-২ সদর নির্বাচনী এলাকাটি এক পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৪ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মরহুম খাজা আহাম্মদ ছাড়াও জয়নাল হাজারী তিনবার, অধ্যাপক ভিপি জয়নাল তিনবার, সর্বশেষ বর্তমান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগ ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি ও আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার নির্বাচিত এমপি জয়নাল হাজারী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ব্যাপক তৎপর রয়েছে বলে জানা যায়।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী আশাবাদী তাকে দল থেকে এবারও মনোনয়ন দেবে। তিনি আশা করেন নেত্রী এবার তাকে মনোনয়ন দিলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন হাজারী জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সমর্থন রয়েছে বর্তমান ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রতি। ফেনীকে সন্ত্রাসমুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজাম হাজারীর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, নিজাম হাজারী নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। ফেনীর সাধারণ জনগণের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ফেনীর মানুষ বর্তমানে শান্তিতে আছে তাই তারা আগামীতে এমপি হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারীকে দেখতে চায়।

নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তা আপনারা চোখের সামনে দেখছেন। ফেনীতে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভার হয়েছে। সোনাগাজী ও মিরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে।

সরেজমিনে খবর নিয়ে জানা যায়, দলের স্থানীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে নিজাম হাজারীর যে জনপ্রিয়তা তাতে তার কোনও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে লালন করে ফেনীর গণমানুষের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজাম উদ্দিন হাজারীর কোনও বিকল্প নেই।

ফেনী জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি বলেন, ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো আজ নিজাম উদ্দিন হাজারীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। গণমানুষের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি হওয়ার পর ফেনী এখন শান্তির জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে।

এদিকে এ আসনে নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে থাকার ব্যাপারে আশা করছে স্থানীয় বিএনপির নেতারা। আসনটি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন দলের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ভিপি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি প্রতিনিয়ত বেগম জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে জেলাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ, মিছিল, মিটিং করে যাচ্ছেন।

অধ্যাপক ভিপি জয়নাল বলেন, বিএনপি যদি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। তাহলে নেত্রী দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দিবেন আমি তার পক্ষে কাজ করব।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু।

রফিকুল আলম মজনু বলেন, আমি ফেনীর সন্তান। যদিও ঢাকায় থাকি দীর্ঘদিন ধরে। আমি এলাকার সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। আমি আশা করি দল থেকে চেয়ারপারসন বেগম জিয়া আমাকে মনোনয়ন দিবেন।

ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী মানিক ফেনী-২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি সবসময় দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন বলে জানা যায়। ক্ষমতাসীন দলের মিথ্যা মামলায় তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। তিনিও মনোনয়নের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে মহাজোটের আরেক শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে মাঠে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার নজরুল ইসলাম। তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

ফেনী-৩

ফেনী-৩ নির্বাচনী এলাকাটি দাগনভূঞা উপজেলা ও সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে সোনাগাজীতে এক লাখ ৪৩ হাজার ১৬ জন ও দাগনভূঞায় এক লাখ ৩৯ হাজার ৬২ জন ভোটার রয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় পরিমণ্ডলে প্রার্থিতা পাওয়ার জন্য চলছে জোর লবিং ও তদবির। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় আলোচনায় থাকতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।

মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি রহিম উল্লাহ, গেল নির্বাচনে বিএনপির কাছে পরাজিত যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীসহ বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফেনী জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন ও রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন এগিয়ে আছেন।

এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার বর্তমান মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে জাসদ (রব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনও সম্ভব্য প্রার্থী এবং ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশও এ আসন থেকে তাদের প্রার্থী দিবে বলে জেলা কমিটির সভাপতি গোলাম সরওয়ার জানান।

আরও পরুন :

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফেনীতে বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু 
মায়ের চোখের সামনে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলো মেয়ে
ফুলগাজীতে জাল ভোট দিতে গিয়ে আটক ১১
নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ নৌ সৈনিক, মরদেহ উদ্ধার
X
Fresh