• ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

টাকা ছাড়া পণ্যছাড় হয় না মোংলা ও বুড়িমারীতে : টিআইবি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৩১

বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন এবং মোংলা বন্দর ও কাস্টমস হাউস উভয় প্রতিষ্ঠানেই পণ্য ছাড় ও শুল্কায়নের প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন হয়। পণ্য ছাড় ও শুল্কায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশ এবং শ্রমিক, দালাল ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের একাংশের যোগসাজশে গড়ে ওঠেছে একটি অসৎ চক্র। সকল নথিপত্র নির্ভুল থাকা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ না দিয়ে পণ্যের শুল্কায়ন বা পণ্যছাড় সম্ভব হয় না। নথিপত্রে কোন ভুল থাকলে অথবা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। এসব দাবি করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি কর্তৃক পরিচালিত ‘মোংলা বন্দর ও কাস্টমস হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার (২৩ সেপ্টম্বর) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেএ তথ্য জানায়।

২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস সময়ে পরিচালিত গবেষণা এ তথ্য ওঠে এসেছে।

-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : সাংবাদিকরা যাতে সত্য প্রকাশ করতে না পারে, সেজন্যেই ডিজিটাল আইন: নজরুল
-------------------------------------------------------

এ গবেষণায় বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, স্টিভিডোর, ক্যারিয়ার, সাংবাদিক, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক ও অন্যান্য অংশীজন থেকে প্রত্যক্ষ তথ্য সংগ্রহীত হয়েছে। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট বন্দর ও কাস্টমস হাউস সংক্রান্ত বিভিন্ন দাপ্তরিক দলিল, প্রবন্ধ, সাময়িকী, ওয়েবসাইট এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকাশনা থেকে গবেষণার পরোক্ষ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।

এতে বলা হয়, উভয় বন্দর ও কাস্টমস হাউসের সেবা প্রদানে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়সহ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো ব্যবস্থা উপস্থিত থাকলেও তার কার্যকরতায় ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানীকরণ ঘটছে, যা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।

এখনো পেপারলেস অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং বিদ্যমান ওয়ান স্টপ সার্ভিস অকার্যকর। উভয় বন্দরে পণ্যছাড়ের ক্ষেত্রে অটোমেশন অনুপস্থিত।

তবে বুড়িমারী বন্দর দিয়ে ১৮টি বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে মিস ডিক্লারেশন এবং ওভার-আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ কমে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ সালে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলনে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে কমপক্ষে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং মোংলা কাস্টমস হাউস থেকে কমপক্ষে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুরূপভাবে, সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং বুড়িমারী স্থল বন্দরে ৪৮ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

সকল নথিপত্র নির্ভুল থাকা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ না দিয়ে পণ্যের শুল্কায়ন বা পণ্যছাড় সম্ভব হয় না। নথিপত্রে কোনও ভুল থাকলে অথবা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বন্দরে পণ্য ছাড় ও শুল্কায়নের ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থ প্রদান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ক্ষেত্রেও পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থ প্রদান করতে হয়। যেমন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ট্রাক-প্রতি ন্যূনতম ৯০০ টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করে থাকে। দালালের সাহায্য ছাড়া বুড়িমারী স্থল বন্দরে ট্রাক ভাড়া পাওয়া যায় না বিধায় ট্রাক-প্রতি দালালকে প্রায় ৪০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কর্তৃক বছরে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে গবেষণায় প্রাক্কলিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, মোংলা কাস্টমস হাউসে আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৬টি এবং রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে ১২টি ধাপে নথি যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন সম্পন্ন হয় যার ফলে সময়ক্ষেপণ, দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি ও দুর্নীতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আবার আমদানি পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষণের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ, হয়রানিসহ পণ্যের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ আগমন-নির্গমনে বিভিন্ন অনুমোদন ও মাশুল আদায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শুধু কাস্টমস হাউসে ন্যূনতম ৮টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তবে উভয় বন্দরেই ইতিবাচক কিছু অগ্রগতি ও পরিবর্তন হয়েছে যা সুশাসনের ঘাটতি সামান্য হলেও উন্নতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ ও পদ্ধতির উপস্থিতির বিষটিও ইতিবাচক। কিন্তু এসব ইতবাচক অগ্রগতি ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উভয় বন্দরেই যোগসাজশের দুর্নীতি ও বলপূর্বক ঘুষ আদায়ের দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন :

আরসি/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় টিআইবির উদ্বেগ 
জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি
তন্বীর প্রেমের টানে নারায়ণগঞ্জ থেকে মোংলায় সুবর্ণা
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির নজির, বেনজির ও দায়মুক্তি
X
Fresh