১৬০০ মিটার দৌড়ে যেমন করলেন টাইগাররা
দেশের ক্রিকেটের নানান ঘটনার সাক্ষী বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক স্মৃতিময় মুহূর্তের জন্মও এখানেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে আজ (২০ এপ্রিল) ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন জাতীয় দল ও রাডারে থাকা ৩৪ ক্রিকেটার। এ সময়ে বর্তমানে বিসিবিতে কাজ করছেন এবং অতীতে ক্রিকেট খেলেছেন এমন অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তীর্থভূমিতে ফেরার পর তাদের পুরোনো স্মৃতিও স্মরণে আসে।
এদিকে এবার একটু ব্যতিক্রমী ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে টানা ৪ চক্করে ১৬০০ মিটার দৌড়ালেন মাহমুদউল্লাহ-শান্তরা। ১৭ জন করে দুটি দলে ৩৪ ক্রিকেটার রানিং পরীক্ষা দিয়েছেন। বিসিবির নতুন কন্ডিশনিং কোচ ও ট্রেইনার নাথান কেইলি পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন। এ সময়ে অন্য ট্রেইনাররাও তার সঙ্গে ছিলেন।
দুই ধাপের রানিং টেস্টে দুই পেসার প্রথম হয়েছেন। প্রথম ধাপে ১৬০০ মিটার দৌড়ে তানজিম হাসান সাকিব সবচেয়ে কম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বেশি সময় নেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে পেসার নাহিদ রানা প্রথম হয়েছেন। শামীম হোসেন সবচেয়ে শেষে ছিলেন। সব মিলিয়ে ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্টে শামীমই সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন।
৩৯ ক্রিকেটার টেস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও এই আয়োজনে সাকিব আল হাসান, তাসকিন, মোস্তাফিজ, তাইজুল ও সৌম্য অনুপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পরীক্ষা শেষে মিরপুরে ফেরেন খেলোয়াড়রা। সেখানে জিমসহ অন্যান্য পরীক্ষা দিয়েছেন।
রানিং টেস্ট প্রসঙ্গে ট্রেইনার ইফতেখার ইসলাম ইফতির ভাষ্য, ‘অনেক দিন আমরা ক্রিকেটারদের ফিটনেস পরীক্ষা নেইনি। এটাতে আসলে পাস-ফেলের কিছু নেই। খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা কী, তা জানা। বেশ কয়েকটা সিরিজ গেছে, বিপিএল গেছে, ডিপিএল যাচ্ছে, এরপর ওদের ফিটনেসের অবস্থা কী, সেটা জানার জন্য। এটা জানার পরে খেলোয়াড়দের আলাদা আলাদা কাকে কোন ফিটনেস ট্রেনিং করাতে হবে, এগুলো আমরা বের করব। এরপর তাদের জানিয়ে দেব, সেভাবে আমরা বাস্তবায়ন করব সেটি। ১৬০০ মিটার নিয়েছি, তাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করে বা তাদের সামর্থ্য কেমন সব মিলিয়ে ফিটনেসের জানার জন্য।’
ইফতি যোগ করেন, ‘অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক বেছে নেওয়ার কারণ আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয় আছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণ করি, তাহলে বেশ কিছু টেস্টিং মেথড আছে, আমরা আজ ১৬০০ মিটার টাইম-ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে যদি নেই, তাহলে প্রপার টাইমিংটা হয়। কারণ, ওইভাবেই হিসাব করা হয়। এটা ওদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।’
এদিকে দৌড় পরীক্ষা শেষে স্মৃতি ভাগাভাগি করলেন সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস। তার ভাষ্য, ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবারও ফেরা সত্যি দারুণ। আমাদের জীবনে খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া, খেলা দেখে শেখা—সব এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই।’
নাফীসের ভাষ্যমতে, ‘১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে আসি আমি। অনেক আইকন ক্রিকেটার এখানে খেলতেন। তাদের দেখতে মাঠে আসতাম। ২০০৪ সালে আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এই মাঠে খেলেছি, ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম। তখন হয়তো বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি সেই ইনিংসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রতিটা ইঞ্চি ইতিহাস বহন করে। আমাদের প্রজন্মের খেলোয়াড়, শুধু ক্রিকেটার নয়, অন্য খেলার খেলোয়াড়েরাও এ কথা বলবে।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সবার কাছেই আলাদা মাহাত্ম্য বয়ে আনে মন্তব্য করে নাফীস শোনালেন, ‘যারা একদম নতুন প্রজন্ম, তারা হয়তো এখানে খেলেনি। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে। অনেকের জন্ম ২০০০ সালের আশপাশে। তাদের খেলার কথাও নয়। তবে আইকনিক স্টেডিয়াম যেহেতু, এটার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছে। দেখুন, সাধারণত সকাল ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষের আশার কথা নয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, তাই এসেছে। সবার জন্যই দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’
মন্তব্য করুন