• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
নির্বাচনে যেসব অঘটন 
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত ২টায় পর্যন্ত ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টির ফলাফল পাওয়া গেছে। এসব ফলাফল বিশ্লেষক করে দেখা গেছে, মাত্র চারটি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বাকি ২৪টি দলের কোনো প্রার্থী জয়ের দেখা পাননি। তবে বেশ কিছু আসনে ঘটেছে অপ্রত্যাশিত হলেও জনগণের ভোটে আলোচিত প্রার্থীর জয়-পরাজয়। এমনই কিছু পার্থীর মধ্যে রয়েছেন- সাকিব আল হাসান  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নৌকা প্রতীকে সাকিব আসনটিতে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডাব মার্কার অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল পেয়েছেন ২ হাজার ৮৫৫ ভোট। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বিজয়ী হয়েছেন। মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সুমন ফেসবুকের অতি পরিচিত মুখ। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি টানা দুইবারের সংসদ সদস্য। দিনভর ব্যালটে ভোট শেষে রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানা বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, ব্যারিস্টার সুমন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েই চমক দেখিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জিতেছেন তিনি। পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী শামসুল আলম আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ ভোট। মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী টানা তৃতীয়বারের মতো হারালেন নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে। ফরিদপুর-৪ আসনে গত দুই বারের সংসদ সদস্য যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান ঈগল প্রতীকে ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির সভাপতিমণ্ডলীর কাজী জাফর উল্যাহ পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। ঝালকাঠি-১ (ঝালকাঠি সদর-নলছিটি) আসনে নৌকা প্রতীকে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। এই আসনে ৯০টি কেন্দ্র ছিল। তিনি পেয়েছেন ৬০ হাজার ৯৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকের পার্টির আবু বকর সিদ্দিক গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৩ ভোট। হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। জাসদ সভাপতি ইনু ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত জাসদ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালে এসে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে জয়ী হন বড় ব্যবধানে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইনু পেয়েছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৬ ভোট। মমতাজ বেগম মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ। নির্বাচনে ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন জাহিদ আহম্মেদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট। নায়িকা মাহিয়া মাহি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে সেই চৌধুরী সাহেবের কাছেই বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা মাহিয়া মাহি। ওই আসনের বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। ভোটের প্রচারণায় ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি তাকে ‘চৌধুরী সাহেব’ বলে সম্বোধন করতেন। দুই উপজেলায় মাহিয়া মাহি ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৯ হাজার ৯ ভোট। আর টানা তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট। কাদের সিদ্দিকী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয় ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে, গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তৈমুর আলম খন্দকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার হেরে গেছেন। এতে দেখা গেছে, এই আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের মো. শাহজাহান ভূঁইয়া পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট। আর তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট। সেই হিসাবে জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তৈমুরের ব্যবধান এক লাখ ৫৩ হাজার ২৯৩ ভোটের। এই আসনে মোট ভোট পড়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৬২৪টি। ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনে (ইসলামপুর) ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ জয়ী হয়েছেন। এ আসনে ট্রাকের কাছে হেরে গেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মুরাদ হাসান ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান হেলাল। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৬১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৮৯টি ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মুরাদ হাসান পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৩৩ ভোট এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান হেলাল পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৩৮ ভোট। মৃণাল কান্তি দাস মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের কাছে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ৮৩৩। বিপরীতে ৮৯ হাজার ৬৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ফয়সাল বিপ্লব।  আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে সাত বার অংশ নেয়া নৌকা প্রতীকের জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রধান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রথমবারের মতো হেরেছেন আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন মহারাজ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট। ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিন বারের সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদকে হারিয়ে এবার জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা। ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট। আর ঈগল প্রতীকে ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নতুন বাদশা।  হিরো আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ডাব প্রতীকে মাত্র ২ হাজার ১৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন হিরো আলম, হারিয়েছেন জামানতও। রোববার (৭ জানুয়ারি) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, বগুড়া-৪ আসনে নৌকা প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন এবং স্বতন্ত্র (ঈগল) জিয়াউল হক মোল্লার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। নৌকা প্রতীকে তানসেন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৭৮৭ ভোট। বিপরীতে ঈগল প্রতীকে জিয়া পেয়ছেন ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট। এদিকে বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে ডাব প্রতীকে প্রার্থী হয়ে হিরো আলম ভোট পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ১৭৫ ভোট। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় সারাদেশে একযোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে এই। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ। 
০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়