• ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১
logo

ঈদে ঘরে ফেরা

‘সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমবে’

আরটিভি নিউজ

  ১৩ জুন ২০২৪, ২০:০৭

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। কর্তৃপক্ষের ধারণা এবার ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাবে। এতো মানুষের চাপ মোকাবিলা করা কঠিন। তবে ঈদযাত্রায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে। এ ছাড়া একটা আধুনিক মহাসড়কের রূপ রেখা কি হতে পারে তার উদাহরণ এখন বাহিরে না দেশের ভিতরেই রয়েছে। আর তাই আমাদের চিন্তা করে ঠিক করা দরকার সড়ক ব্যবস্থা কেমন হতে পারে।

বুধবার (১২ জুন) দিবাগত রাতে আরটিভির বিশেষ আয়োজন ‘ঈদে ঘরে ফেরা’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দ আশিক রহমান।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং গণপরিবহন ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান।

অনুষ্ঠানে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আমাদের কারিগরি সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কারণ আমরা কিন্তু এখন চিহ্নিত করতে পরছি যে, আমাদের কোথায় কোথায় যানজটের শঙ্কা আছে। এবারও কিন্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় ১৫৫টা পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা করা হচ্ছে। গত এক যুগে পরিবহনের জন্য সড়ক অবকাঠামোর একটা ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঈদের অল্প সময়ে যে চাপটা আসে, এই চাপটা নেওয়ার পরিবহনের যে সক্ষমতা থাকার কথা সে সক্ষমতার জায়গাটাতে আমাদের দুর্বলতা আছে। ঈদে আমাদের চাহিদার তুলনায় জোগান (পরিবহন) কম।

তিনি বলেন, কোরবানি ঈদে রোজার ঈদের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষের যে একটা গণজোয়ার ঢাকা থেকে বের হয়। অপরদিকে কোরবানি ঈদে পশুবাহী ট্রাকের জোয়ারও কিন্তু ঢাকার দিকে ঢুকবে। রোজার ঈদের আমরা কিন্তু একমুখি জোয়ার দেখি এবার কিন্তু উভয়মুখি। এ ছাড়া প্রতিবছরই ঈদের আগে বলা হয়, লক্কড়-ঝক্কড় আনফিট গাড়ি মহাসড়কে নামতে দেওয়া হবে না। ঢাকা শহরে আনফিট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অভিযান চালানোর কথা ছিলো, সেটা কিন্তু আমরা দেখিনি। আমাদের হিসেবে ৩০ লাখ লোক বের হবে তার বিপরীতে ৮ লাখের জোগান আছে। বাকি যে ২২ লাখ লোক আছে তারা কি করবে? বাধ্য হয়ে তারা ট্রেনের ছাদে, পশুবাহী ট্রাকে করে কিংবা বাসের ছাদে করে যাবে। অর্থাৎ ঝুকি নিয়ে তারা বাড়ি ফিরবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, গতবার চন্দ্রায় কিছুটা জ্যাম ছিলো। রাতভর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেটা ম্যানেজ করেছে। এবার আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ভোগড়া মোড়। কারণ পশুবাহী সব গাড়ি মদনপুর হয়ে ভোগড়া দিয়ে ঢুকবে, আবার উত্তর বঙ্গের গাড়িগুলো ভোগড়া হয়ে যাবে। এ জায়গাটিতে যানজট নিরসনে আমার একাধিক বৈঠক করেছি।

তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বৃষ্টি হয়ে আমাদের পরিকল্পনায় একটু সমস্যা হতে পারে। যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন নাও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তার ওপর ট্রাক থামিয়ে পশু নামানো হচ্ছে, এটা খুব দুঃখজনক। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাস্তার দিকে গরুর হাটের মুখ থাকবে না, কিন্তু করে ফেলে। আমাদের কাছে এসব অভিযোগ আসছে, এ ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে হাট যখন শুরু হয়ে যায় তখন জনগণও মানে না, ইজারাদারেরও কিছু করার থাকে না। অনেক জায়গায় ভালো ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। কয়েকটা জেলা পারলে অন্যেরা কেনো পারবে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, আমি এক কথায় বলবো- ঈদযাত্রায় ভোগান্তি মুক্ত করতে পারি না এ জন্য যে, ভোগান্তি মুক্ত করার দায়িত্ব যাদের তারা এ দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করছেন না। এই যে প্রস্তুতি নিয়ে উনারা কথা বলেন। প্রস্তুতি থাকে না কোন বছর। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন তারা কোনো একটা বছর কি বলেছেন আমরা এ বছর প্রস্ততি ছাড়া আছি। এত এত প্রস্তুতি নিয়ে কি হচ্ছে। আমার মনে হয় যারা দায়িত্বে আছেন তারা অবহেলা করছেন না হয় তারা অযোগ্য।

অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ঈদের সময় আমাদের যে চাহিদা থাকে তার ২০ থেকে ২২ শতাংশ আমরা বহন করতে পারি। অর্থাৎ আমি ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ বহন করতে পারবো না। আমাদের সে সংখ্যক বগি বা ট্রেন নেই।

তিনি বলেন, উত্তর বঙ্গের দিকে আমাদের যেসব ট্রেন যায় অনেক ক্ষেত্রে সেসব ট্রেন এক ঘণ্টাও রেস্ট পায় না। একটা ট্রেন পঞ্চগড় যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে আধা ঘণ্টাও থাকতে পারে না কোনো রকম পরিস্কার করে ফিরতে হয়। এ ছাড়া আজ থেকে ঈদের বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে, সুতরাং আমরা এ সমস্ত ট্রেনের কোনোটায় একটা কোনোটায় দুইটা বগি অতিরিক্ত লাগিয়েছি। এসব বগি লাগাতে গিয়ে এখানে আমাদের কিছুটা সময় ব্যয় হচ্ছে।

নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যানজটে যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত সেগুলো অপসারণে আমরা কেনো কার্যত ব্যর্থ হচ্ছি। মহাসড়কের যে সংজ্ঞা এবং মহাসড়কের যে আইন সেটা বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ বছরকে বছর ব্যর্থ হচ্ছে। ২৩১ কিলোমিটারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৫৩৯টা জায়গায় বাজার রয়েছে, মহাসড়কের পাশে। অথচ মহাসড়কের আইনে এটা থাকার কোনো সুযোগ নাই। আইন বলছে দু’পাশে ৫০ মিটারের মধ্যে কোনো ধরনের কাঠামো থাকবে না। আমি মনে করি এটা সমাধান করা ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর যে হাটের ঘটনা, এটা তো এমন না যে এ বছর প্রথম। এটা নিয়ে আমাদের বছরের পর বছর যদি ভাবতে হয়। তাহলে ওই ভাবনাগুলা এমনভাবে করা দরকার। যেমন, ঢাকা-মওয়া মহাসড়ক তৈরি করেছি আমরা। একটা আধুনিক মহাসড়কের রূপ রেখা কি হতে পারে তার উদাহরণ এখন বাহিরে না দেশের ভিতরেই রয়েছে। আর তাই আমাদের চিন্তা করে ঠিক করা দরকার সড়ক ব্যবস্থা কেমন হতে পারে।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে গরুর হাট নিয়ে চ্যালেঞ্জ টা বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মিলে এবার ২০টি গরুর হাট রয়েছে। প্রতিটি হাটে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন, সহজভাবে কোনো জ্যাম ছাড়াই গাড়িগুলো ঢাকা থেকে বের হতে পারে। এর জন্য অতীতের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা কিছু সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি যেন সব গাড়িকে আমরা সহজে ঢাকা থেকে বের হতে দিতে পারি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যে তথ্য পেয়েছি ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ২৫ লাখ পশু কোরবানি হয়। এ ঘটনাটা একদিনের। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু বলা আছে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দেওয়ার কথা। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি হলে ময়লা পরিস্কার করতে আমাদের কিন্তু ৮ ঘণ্টা সময়ও লাগে না। এবার কিন্তু বৃষ্টি আমাদের জন্য বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। তবে এবার আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • আরটিভি অনুষ্ঠান এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ভোগান্তি, ঝুঁকিতে সব ধরনের যানবাহন 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাজধানীতে তুমুল বৃষ্টি, জলজটে ভোগান্তি
দর্শকদের ভোগান্তি দূর করতে বিসিবির নতুন পদক্ষেপ