বংশ পরম্পরায় ভারত তোষণ করে আসছে আওয়ামী লীগ: গয়েশ্বর
ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ বংশ পরম্পরায় ভারত তোষণ করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কিন্তু ক্ষমতা চলে গেলে ভারত আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে নেওয়া উদ্যোগে আজ সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা জেলা বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র করা হোক জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে পারবে না সরকার।’
সমাবেশে বাধা দেয়াসহ সরকারের সব অন্যায়ের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
কেএফ
মন্তব্য করুন
ফেসবুকে মনের কথা লিখলেও তুলে নিয়ে যায় : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার সারাদেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফেসবুকে মনের কথা লিখলেও তুলে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঈদ উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে শামিল হওয়ায় আমাদের ছাত্রদল-যুবদলের ছেলেদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা কোনো চিকিৎসা পায়নি। তাদের নির্যাতন করে জেলে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর জেলেও তাদের কোনো চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা খবর পেয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
কারাবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি ছেলের সিরাজগঞ্জে বাড়ি, ফেসবুকে একটি পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে র্যাব তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় ১৪ দিন নির্যাতন করার পর আরেকটি মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছে। সে এখনও জামিন পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, সুশান ও মানবাধিকার নেই। একটি জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু সম্ভব নয় তার চেয়েও বেশি সংগ্রাম আমরা করছি। হাজার হাজার মানুষ রাজপথে আসছে, রাজপথে আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে।
মঈন খানের বাসায় এবার জার্মান ও সুইস রাষ্ট্রদূত
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের পর এবার রাজধানীর গুলশানে মঈন খানের বাসায় নৈশভোজ করলেন ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত আসিম টর্স্টার ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি।
রোববার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ইফতার ও নৈশভোজের আমন্ত্রণে আসেন তারা। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, এসময় চীনের উপ–রাষ্ট্রদূত ইয়ান হুয়ালং ও দ্বিতীয় সচিব গু ঝিকিনও তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, শনিবার (৬ এপ্রিল) মঈন খানের বাসায় ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক।
কারাগারেই ঈদ বিএনপির যেসব নেতার
গ্রেনেড হামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বছরের পর কারাগারে ঈদ করছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। গত জাতীয় নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের অসংখ্য কর্মীও জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে এখনও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় ১২ জন নেতা কারাগারে রয়েছেন।
বাবাকে ছাড়া ঈদ করা নিয়ে আক্ষেপের কথা জানিয়ে সম্প্রতি কারাগারে যাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমী সূচনা বলেছেন, ৪৯০টিরও বেশি মামলায় কেরানীগঞ্জের কারাগারে আছেন বাবা। বছরের ছয় মাস জেল কিংবা ছয় মাস পলাতক থাকেন, ফলে কোনো উৎসব আয়োজনে বাবাকে পাওয়া যায় না। সন্তান হিসেবে বাবার দেখা মেলে না।
বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন। এবারের ঈদে এসব নেতাকর্মীদের পাশে পাবে না পরিবার।
তিনি জানান, এ মুহূর্তে কারাগারে আছেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসন উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আসলাম চৌধুরী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, নির্বাহী সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবর, নির্বাহী সদস্য ও যুবদল সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ খোকন, উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার, সাবেক কমিশনার হারুন অর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজী জিয়াউদ্দিন বাসিত প্রমুখ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে চারটি ঈদ কেটেছে বিএনপির চেয়ারপারসনখালেদা জিয়ার। এরপর ২০২০ সালের পর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ঈদ করে আসছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাঝে ২০২৩ সালের ২টি ঈদ কেটেছে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। এবার তিনি ঈদ করবেন গুলশানের বাসভবনে।
নেতাকর্মীদের ঈদ পালন করতে হয় শোকাচ্ছন্ন পরিবেশে : রিজভী
বিএনপির নেতাকর্মীদের এক শোকাচ্ছন্ন পরিবেশে ঈদ পালন করতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা এমন এক দুঃসময় পার করছি, আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের ঈদ পালন করতে হয় এক শোকাচ্ছন্ন পরিবেশে। যার বাসায় যাব, দেখব গুলিতে তার এক পা পঙ্গু, নাহলে তার চোখ অন্ধ। অথবা পরিবারের একটি সন্তান গুম হয়ে গেছে। হয়তো তিন মাস-চার মাস, তিন বছর-পাঁচ বছর-দশ বছর। যদি কারও বাসায় যাই দেখব, তার সন্তানটি কিছু দিন আগেই বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে ঈদের আনন্দ যেন এক নিরানন্দ পরিবেশের মধ্যে পালন করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ কষ্টে আছে। ঈদের আগে বাজারে তেমন ভিড় নেই। দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্য। এ যেন ছোঁয়া যায় না! একটা লেবুর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ইফতারের জন্য মানুষ লেবু কিনতে পারে না। চিনি অধরা থেকে গেছে। এই তো পরিস্থিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাম নেই। একটি দেশ তাদের সঙ্গে রয়েছে। তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে। ভোট নিয়ে যে তেলেসমাতি, সেখানেও এই পার্শ্ববর্তী দেশ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে। পিনাক রঞ্জন নামে তাদের একজন কূটনীতিক, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। তিনি দিল্লিতে বলেছেন, যখন সবকিছু হয়ে যাচ্ছে, নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর আত্মগোপনে চলে গেছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে জালিয়াতির নির্বাচন, আমরা আর মামুরার নির্বাচন, ডামি নির্বাচন, আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ নিজেদের নির্বাচন এবং এটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নয়; এটা আজকে প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতন্ত্রকামী দেশের এই মত।’
যেখানে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসা ‘ফিরোজায়’ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বুধবার (১০ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ, গুলশানের বাসায় মেডিকেলে বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন। বোর্ডের চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে আছেন তিনি।
তিনি জানান, ঈদের দিনে ঢাকায় তার যেসব নিকটাত্মীয়-স্বজন আছেন, তারা বাসায় দেখা করতে আসবেন। তাদের নিয়ে সময় কাটাবেন ম্যাডাম। এ ছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়েদা রহমান ভার্চ্যুয়ালি তার সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি আরও জানান, এর আগের কয়েকটি ঈদে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান সিঁথি এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান ঢাকায় এসেছিলেন। খালেদা জিয়া তাদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। তবে এবার তাদের কেউ আসেননি। যদিও বড় বোন (খালেদা জিয়া) প্রয়াত খুরশীদ জাহান হকের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে প্রবাসী তিন ছেলে ছাড়াও আরেক বোনের ছেলের মেয়ে ঢাকায় এসে এই রোজার মধ্যেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে চলে গেছেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানান জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
২০২২ সালের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। এরপর থেকে কয়েক দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
ইসরায়েল থেকে ঢাকায় ফ্লাইট নামা রহস্যজনক : রিজভী
ইসরায়েল থেকে কার্গো বিমান বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ওঠা-নামা নিয়ে রহস্যের গন্ধ পেলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের অর্থনীতিক নগরী তেল আবিব থেকে সম্প্রতি সরাসরি একটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনীতিক কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সেখান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে ফ্লাইট অবতরণ করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
রিজভী বলেন, ইসরায়েল থেকে ঢাকায় ফ্লাইট নামার বিষয়ে আমি এখনও বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে যতটুকু শুনতে পাচ্ছি তাতে এ ঘটনা খুবই রহস্যজনক ও উদ্বেগজনক বলে মনে করছি।
গত ১১ এপ্রিল ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় রওনা হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকায় অবতরণ করে ফ্লাইটটি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এনসিআর-৮০৬ নম্বর ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকায় এখন বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশ এখন ব্যাপকভাবে দুর্নীতি চাষের উর্বর ভূমি। বাংলাদেশ দুর্নীতির এমন একটি পাহাড় রচিত হয়েছে, সেই পাহাড়ের চূড়ায় এখন ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর লোকেরা অবস্থান করছে।
রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা মতে বর্তমানে দুর্নীতির শীর্ষ দশের মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থায় বাংলাদেশ অবস্থান করেছে। এমনকি দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করে টাকার পাচার করে বিশ্বের উন্নত দেশের শীর্ষ ধনীদের মাঝেও নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছেন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনরা। বাংলাদেশ এখন দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত। দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় অর্থ হরিলুট করেই চলছে ক্ষমতাসীনরা। পৃথিবীর ধনী দেশে দুর্নীতির টাকা দিয়ে স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে পারছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিকে আশকারা দিয়ে, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকতে সুযোগ দিয়ে, দুর্নীতির টাকা নিয়ে সমাজে আধিপত্য বিস্তারে মত্ত হয়ে উঠেছে। এখন দেখছেন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আধিপত্যের জেরে জনপথের পর জনপথ রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। আজও মুন্সিগঞ্জে তাদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একজন খুন হয়েছেন।
পিটার হাসকে নিয়ে বিএনপির বোধোদয়
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জন্য ‘অবতার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি নিয়ে সরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বহুভাবে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য তৎপরতা চালিয়েছেন তিনি। তবে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডবের পর অনেকটা পথ পাল্টে ফেলেন পিটার হাস। নির্বাচনের পর পিটার হাসের অবস্থান পরিবর্তন হয় আর বিএনপির বোধোদয় হয় যে, কেউ ক্ষমতায় এসে বসিয়ে দেবে না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানা বিএনপি আয়োজিত সদ্য প্রয়াত জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানের স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কারো ওপর নির্ভর করে আপনারা গণতন্ত্র আনতে পারবেন না। নিজের পায়ের ওপর নির্ভর করতে হবে, নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। আমাদের নিজেকেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে জনগণকে সঙ্গে দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে, একটা সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে, বিএনপির ঘুম ভেঙেছে এবং বোধোদয় হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গতিবিধি ছিল অন্যরকম। অনেকটা বিএনপির পক্ষ নিয়ে দরকষাকষির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। যার কারণে বিএনপি নেতারা নেতাকর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাদের সঙ্গে পশ্চিমারা আছেন ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’। গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপি নেতারা পিটার হাসকে তাদের ‘অবতার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ নিয়ে নানা আলোচ-সমালোচনার জন্ম নেয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। বাংলাদেশের অন্যতম এ রাজনৈতিক দলটি জনগণের শক্তির ওপর কেন তাদের আস্থা হারিয়ে বিদেশি দূতদের কাঁধে ভর করেছে, তখন সেই প্রশ্ন সবার মনে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা ‘শান্তিপূর্ণ’ সমাবেশ রূপ নেয় তাণ্ডবে। বিএনপি কর্মীদের হামলায় সেদিন অনেক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। শুধু তাই নয় বিএনপি কর্মীরা হামলা করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। সেদিন নির্দয়ভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের তাণ্ডবের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছে অন্তত ২৫ সাংবাদিক।
এই ঘটনার পর পশ্চিমাদের অবস্থান অন্যদিকে মোড় নেয়। অথচ, এ ঘটনার দুইদিন আগেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন পিটার হাস। সংঘাতের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত শান্তিপূর্ণ সংলাপের আহ্বান জানান। অথচ ২৮ অক্টোবরের আগে আওয়ামী লীগ সংলাপে রাজি থাকলেও বিএনপি সংলাপে বসতে রাজি হয়নি। বরং তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আসছিল।
এ রকম ডামাডোলের মধ্যেই বিএনপিকে রেখে হঠাৎ পরিবারসহ দেশের বাইরে চলে যান পিটার হাস। তার এই চলে যাওয়া নিয়েও ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছিল। তবে অভিযোগ আছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ভারতের চাপে আত্মগোপন করেছিলেন। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
দিল্লির থিংক ট্যাংক ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’ (ওআরএফ) নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও ঢাকায় সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত যে মোটেই পছন্দ করছে না, বাইডেন প্রশাসনের কাছে দিল্লি এটা স্পষ্ট করে দেয়ার পরেই ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল।
ছুটি থেকে ফেরত এসে পিটার হাস নিয়মিত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে নির্বাচনের আগে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে অংশ নিতে দেখা যায়। ব্রিফিং শুরুর আগে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সারা কুকসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন পিটার হাস। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেই গণমাধ্যমের পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাপ করেন তিনি। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নানা প্রসঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বসে আলাপ করেন। এ সময় দুজনই হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে মশগুল ছিলেন।
তবে কখনও দুয়েকজন কূটনৈতিকের সঙ্গে গুরুগম্ভীরভাবে আলাপ করতেও দেখা যায় পিটারকে। নির্বাচন নিয়ে ব্রিফিং মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। মিট অ্যান্ড গ্রিট শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের নানা রকম খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। কিন্তু পিটার হাস এতে অংশ না নিয়ে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন, যা অনেকেরই নজরে এসেছে। আর এ নিয়ে নানা কানাঘুষাও চলতে থাকে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির চত্বরে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচক মন্তব্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে ভিন্ন কথা। পিটার হাস বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলেও বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের পর মন্ত্রীসভার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন পিটার হাস। অন্যান্য অতিথির সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে আসন গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। মন্ত্রিপরিষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় ড. হাছান মাহমুদকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পিটার হাস।
নির্বাচনের পর মার্কিন রাষ্ট্রদুত পিটার হাসের সঙ্গে অত্যন্ত নীরবে দেখা করেছেন ড.মঈন খান। সেটিই ছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম কোন বিএনপি নেতার সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ। সেখানে কি আলাপ হয়েছে তা না জানালেও পিটার হাস জানিয়েছিলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে দেখা করে আমি আনন্দিত।
অন্যদিকে ঢাকায় এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয় বিএনপি’র সঙ্গে প্রতিনিধি দলের। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর এইলিন লাউবেখার ও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও দেশের এত মানুষের সমর্থন নিয়ে বিএনপি যে জনপ্রিয় দল তা প্রমাণে নির্বাচন ছাড়া অন্য তো কোনো পথ খোলা ছিল না। তাহলে বর্জন করে আন্দোলন করলে লাভ কী? ভোটে অংশগ্রহণ না করলে কেউ তো কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না। এখন তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে বিএনপি।