• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

এই বাজেট দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে না: জামায়াত

আরটিভি নিউজ

  ০৬ জুন ২০২৪, ২১:৪৬
ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট সংসদে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান সরকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছে, তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) এক বিবৃতিতে এ কথা জানান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। ঋণনির্ভর বিশাল আকারের কল্পনাবিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করেছে, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মাার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে এবং বিদেশে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করে ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এবার ব্যয় বেড়েছে ৮২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চার লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীবিদরা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয় সীমা গতবছরের মতই রাখা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি ও এলইডি তৈরির উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসি ও টিভির মূল্যসহ বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।

জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যেসব পরিসংখ্যান ও নীতি বাক্য উচ্চারণ করেছেন তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা সমাধানের বাস্তব কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বর্তমান সরকার গত ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিল তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে লুটপাট করেছে। ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিকখাতে দুর্নীতি রোধকল্পে বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথা পিছু ঋণ ছিল এক লাখ টাকা। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, গত তিন বছরে প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। যার সুদ দিতে হবে প্রতি বছর সোয়া লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ এবং তার সুদ দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে প্রায় ১১ শতাংশ, যা দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার চাইতেও বেশি। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা ২০০৬ সালের চাইতেও কম। বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।

অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী অর্থ বছরে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ১৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী অর্থবছরে তা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রপ্তানি আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদেশি রেমিট্যান্স সবকিছুতেই নিম্নগামী ধারা ক্রমেই বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫০টি দ্রব্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর এবং ভ্যাটের আওতা আরও বাড়িয়ে দরিদ্র জনগণকে শোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে চিকিৎসা খাতে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সেবার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল এক শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে এক শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্পকর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছে।

মন্তব্য করুন

  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নাশকতার মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার
জানা গেল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কম গতির কারণ
সেন্টমার্টিনে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া করবে আ.লীগ