খাবার সামনে এলে যে দোয়া পড়তে হয়
জীবনের প্রতিটি বিষয়ের মতো খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত রয়েছে। রাসুল (সা.) কীভাবে খাবার খেতেন ও খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তার সুন্নত কী— এসব আলোচিত হয়েছে হাদিসের কিতাবগুলোতে।
আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, খাবার সামনে এলে আল্লাহর রাসুল (সা.) এই দোয়া পাঠ করতে বলেন। (আল-আজকারুন নাবুওয়াহ, হাদিস : ৫৫৬)
আরবি
اللَّهُمَّ بارِكْ لَنا فِيما رَزَقْتَنا، وَقِنا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফিমা রাজাকতানা ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যে জীবিকা দান করেছেন, তাতে বরকত দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান।
এসএস
মন্তব্য করুন
যেখান থেকে আসে গরমের তীব্রতা
গত কয়েক দিন ধরে দেশে গরমের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে এবং দুর্ভোগ নেমে এসেছে জনজীবনে। গরমে বাড়ছে জ্বর ও ডায়রিয়াসহ নানান রোগ। গরম প্রসঙ্গে হাদিসে কী বলা আছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো (বোখারি, হাদিস : ৩২৬০)।
প্রচণ্ড গরমের সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। তাই বেশি গরম পড়লে জোহরের নামাজ দেরিতে আদায় করা সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে হজরত আবু জার রা. বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পুনরায়) বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা আসে জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় কর (বুখারি ৫৩৯)।
গরমের তীব্রতা মূলত জাহান্নামের তীব্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই প্রচণ্ড গরমে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিত।
গোসলের পর নতুন করে অজু করতে হবে কি?
ইসলামের পরিভাষায়, গোসল হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। কতিপয় ধর্মীয় উপাসনা এবং আচার-অনুষ্ঠান পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে গোসল। শুক্রবার জুমার নামাজের পূর্বে, ঈদের নামাজের পূর্বে, এহরামের পূর্বে, হজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়, অজ্ঞান হওয়ার পর সচেতন হলে অথবা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মস্তাহাব।
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের বলেছেন, ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
গোসল করার পর নামাজের জন্য কি নতুন করে অজু করতে হবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) গোসলের পরে নতুন করে অজু করতেন না। (তিরমিজি: ১০৭)
এ থেকে বোঝা যায়, গোসলের পর অযু করতে হবে না। কারণ, গোসলের মাধ্যমে অজু হয়ে যায়। গোসলের পর অজু ভঙ্গের কারণ পাওয়া না গেলে নতুন করে অজু করতে হবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে গোসলের পর অজু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গোসল অপেক্ষা কোনো অজু ব্যাপকতর? (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৭৪৮)
মূলত গোসল করার পর অজু করার কোনো বিধান ইসলামে নেই। ফরজ গোসল হলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ফরজ এবং পরিপূর্ণ অজু করে নেওয়া সুন্নত, যা গোসলেরই অংশ। আর গোসল ফরজ না হলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত এবং পরিপূর্ণ অজু করা মোস্তাহাব। তাই যথাযথভাবে গোসল করার পর নতুন করে আবার অজু করা ঠিক নয়। (সহিহ বুখারি: ২৪৮; উমদাতুল ক্বারি: ০৩/৮৬; বাহরুর রায়েক: ০১/৯৪; আদ্দুররুল মুহতার: ০১/৩২৩)।
আগে ইকামত না দিলে কি নামাজ শুদ্ধ হবে?
নামাজ একটি দৈনিক নিয়মিত ইবাদত। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে হয় যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে। এটি মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ। তবে প্রতিদিন আবশ্যকরণীয় বা ফরজ ছাড়াও বিবিধ নামাজ রয়েছে যা সময়ভিত্তিক বা বিষয়ভিত্তিক। ইসলামে ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ না পড়া কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ।
নামাজ (সালাত) ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন। নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধি-জ্ঞান সম্পন্ন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে, প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয়। পবিত্র কুরআনের ১৭টি আয়াতে বলা হয়েছে সালাত প্রতিষ্ঠা করো।
ফরজ নামাজের জামাতের আগে ইকামত দেওয়া সুন্নতে মুআক্কাদা। নবিজি সব সময় ইকামত দিয়েই নামাজ পড়াতেন। তাই জামাতে নামাজ পড়ার সময় ইকামত না দেওয়া মাকরূহ। একা নামাজ পড়ার সময়ও ইকামত দেওয়া উত্তম।
তবে ভুল করে বা অন্য কোনো কারণে ইকামত ছাড়া জামাতে নামাজ আদায় করলে সুন্নতের খেলাফ ও মাকরুহ হলেও নামাজ শুদ্ধ হবে। পুনরায় ওই নামাজ আদায় করতে হবে না।
নামাজের ইকামত শুরু হলে মুক্তাদীদের করণীয় হলো দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতে থাকা যেন ইকামত শেষ হতে হতে জামাতের কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হলে ইমাম নামাজ শুরু করতে পারেন।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, বেলাল (রা.) আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসতে দেখে ইকামত শুরু করতেন। মুক্তাদিরা কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার আগেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। (সহিহ মুসলিম: ১/২২০)
টাকা জমা না দেওয়ায় ২২ হজ এজেন্সিকে চিঠি
সৌদি পর্বের খরচের পুরো টাকা জমা না দেওয়ায় ২২ হজ এজেন্সির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
রোববার (২১ জানুয়ারি) এজেন্সিগুলোর মালিকের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, হজের ভিসা প্রদান কার্যক্রম আগামী ২৯ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু একাধিকবার পত্র ও জুম সভায় নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আপনার হজ এজেন্সিসহ মোট ২২টি হজ এজেন্সি সৌদি পর্বের খরচ নির্বাহের জন্য হাজী প্রতি এক লাখ ১০ হাজার বা এর চেয়েও কম টাকা (প্রাক-নিবন্ধনের অর্থসহ) জমা দেওয়ার পরে আর কোনো টাকা জমা করেননি। আপনার এমন কার্যক্রমের ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমতাবস্থায় সোমবারের (২২ এপ্রিল) মধ্যে সৌদি পর্বের খরচের পুরো অর্থ জমা দেওয়াসহ কেন আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ জমা করেননি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হজ এজেন্সিগুলো হলো ডিবিএইচ ইন্টারন্যাশনাল, গাউছিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরস, স্মার্ট টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ওয়ার্ল্ড লিংক টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আনসারী ওভারসিজ, এয়ার ফিলিস্তিন ইন্টারন্যাশনাল, আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সি লিমিটেড, ফারিহা ওভারসিজ, গ্লোবাল ভিশন ট্রাভেলস, গালফ ট্রাভেলস, জিয়ারত বাইতুল্লা ট্রাভেলস, মেসার্স ঢাকার তরী, মাশ-আরে-হারাম হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, মুবাশ্বিরা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, নর্থ বেঙ্গল হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, রোজিনা এয়ার ট্রাভেলস, সিনসিয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেড, স্কাই ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মেহমান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হলি দারুন্নাজাত হজ ওভারসিজ ও ফিকাস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল।
উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ পালন করবেন। আগামী ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
তীব্র গরমে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন
তাপদাহে পুড়ছে দেশ। দিনদিন তাপমাত্রার পারদ ওপরের দিকে উঠছে। প্রখর তাপে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। চলমান এই অবস্থা আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর, ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার সময় আরও তিন দিন বাড়িয়েছে।
হাদিসের বর্ণিত আছে যে,
প্রখ্যাত সাহাবি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ও প্রচণ্ড গরম পড়ায় একদিন নবী (সা.) এর কাছে কিছু লোক এলো। (গরমের তীব্রতায়) তারা কাঁদছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের জন্য এভাবে দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাস কিনা গাইসান মুগিসান মুরিয়্যান নাফিয়ান গাইরা দাররিন আজিলান গাইরা আজিলিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করো।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাদের ওপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়)। (আবু দাউদ ১১৬৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৪১৬)
হাদিসে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে। আর আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন দান সদকা করতে বলেছেন, তেমনি দোয়াও শিখিয়ে গেছেন।
দোয়াটি হলো-
اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি-মাতিকা ওয়া তাহাউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহের অপসরণ, নিরাপত্তার প্রত্যাবর্তন, আকস্মিক পাকড়াও এবং যাবতীয় অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম ২৭৩৯, আবু দাউদ ১৫৪৫)
তাই আসুন দুর্বিষহ এ সময়ে শান্তির বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। সম্ভব হলে ‘সালাতুল ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ পড়ি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
তীব্র গরম থেকে বাঁচার দোয়া
রাজধানীসহ সারাদেশেই চলছে তীব্র তাপদাহ। তাপদাহের কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর অতিরিক্ত গরমের ফলে ডায়রিয়া, ঠান্ডা-কাশিসহ অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নানা বয়সি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.) আমাদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় কর। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস। (মিশকাত : ৫৯১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো (বোখারি, হাদিস : ৩২৬০)।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে- আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবিজি (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবিজি পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা হয় জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় কর। (বোখারি ৫৩৯)।
তীব্র গরম থেকে বাঁচার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি'মাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামি'য়ি সাখাত্বিকা
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ থেকে।
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাস কিনা গাইসান মুগিসান মুরিয়্যান নাফিয়ান গাইরা দাররিন আজিলান গাইরা আজিলিন।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
যে কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন
জাকাত মানে পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি। যা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। আল-কোরআনে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনাও রয়েছে ৮২ বার। জাকাত আদায় না করলে আল্লাহর কঠিন শাস্তি রয়েছে। এটি আদায়ে গড়িমসি করলেও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা।
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত আর জাকাত আদায় না করলে তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তার রসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৯)
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সুরা: তাওবাহ, আয়াত: ৩৪)
সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। (সূরা তাওবা, আয়াত ৩৫)
তাপদাহে পুড়ছে দেশ। দিনদিন তাপমাত্রার পারদ ওপরের দিকে উঠছে। প্রখর তাপে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। চলমান এই অবস্থা আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর, ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার সময় আরও তিন দিন বাড়িয়েছে। দেশের নানান জায়গায় ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ আদায় করা হচ্ছে।