রমজান শুরুর তারিখ জানালো আমিরাত
পবিত্র রমজান মাস শুরুর তারিখ জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির জোর্তিবিদ্যার গণনা অনুযায়ী, এ বছর রমজান মাস ৩০ দিনের হবে।
আরব ইউনিয়ন ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেসের একজন সদস্য ইব্রাহিম আল জারওয়ান বলেছেন, আগামী ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। আর পবিত্র ঈদুল ফিতর হতে পারে ১৩ মে বৃহস্পতিবার।
এ বছর রমজান মাসে রোজার সময় কতক্ষণ হবে সেটাও জানিয়েছেন এই জোর্তিবিদ। আবুধাবিতে প্রথম রোজার দিন সেহেরির শেষ সময় হচ্ছে ভোর ৪টা ৪৩ মিনিট। আর ইফতার হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে। ফরে প্রথম দিনের রোজা হচ্ছে ১৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট দীর্ঘ।
৩০ রমজানে গিয়ে সেহেরির শেষ সময় হবে ভোর ৪টা ১৫ মিনিট। আর ইফতার হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে। ফলে তখন রোজার দৈর্ঘ্য হবে ১৪ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট।
এ
মন্তব্য করুন
সবার আগে যে দুই দেশে পালিত হলো ঈদ
সৌদি আরবসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশ সোমবার মুসলিমদের চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছে। তবে সেসব দেশে চাঁদ দেখা না গেলেও দুটি মুসলিম দেশে চাঁদ দেখা গেছে। ফলে ওই দুই দেশে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে চাঁদ দেখা না গেলেও সোমবার (৮ এপ্রিল) আফ্রিকার দুই দেশে চাঁদ দেখা গেছে। দেশ দুটি হলো মালি ও নাইজার। ফলে দেশ দুটিতে মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। দেশে দুটিতে ২৯টি রোজা পালিত হয়েছে।
চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নাইজারের চাঁদ দেখা কমিটি রুয়েত-ই-হিলাল। দেশটির পাঁচটি রাজ্যে চাঁদ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এছাড়া সোমবার চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মালির ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আফ্রিকার অন্যান্য দেশে চাঁদ দেখা না যাওয়ায় মঙ্গলবার রোজা থাকবেন সেখান নাগরিকরা। এসব দেশে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে বুধবার।
প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আরবি মাসের গণণা শুরু এবং শেষ করা হয়। সারাবিশ্বে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রোজা শুরু এবং ঈদ উদযাপন করেন মুসলিমরা। তাই চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ পালনের পার্থক্য দেখা দেয়।
ঈদ সালামি কি জায়েজ?
ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ খুশি, আনন্দ, ফিরে আসা ইত্যাদি। যেহেতু প্রতি বছর দিনটি ফিরে আসে তাই, একে ঈদ বলা হয়। ঈদ আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। আনন্দ ও খুশির মধ্যে শিশু-কিশোরদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে ঈদি বা ঈদ সালামি। বড়দের পক্ষ থেকে পাওয়া এই সালামি শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।
একটি সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক রীতি ঈদ সালামি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদ সালামি দেওয়ার এ প্রচলনে কোনো আপত্তি বা ধর্মীয় বাধা-নিষেধ নেই। বরং এর মাধ্যমে ছোটদের প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে পারস্পারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। তা ছাড়া ইসলামে উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে, সে তার ইমান পূর্ণ করল।’ (তিরমিজি: ২৫২১)
অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪)
তবে ছোটদের কল্যাণে ঈদ সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। সেগুলো হলো-
সেলামি দেওয়ার সময় ছোট ভাইবোন ও সন্তানদের কাউকে দেওয়া হবে আর কাউকে বঞ্চিত করা হবে-এমনটি যেন না হয়। এতে কারো মনে আঘাত লাগতে পারে। যা পারস্পরিক মনোমালিন্যেরও কারণ হতে পারে।
সবাইকে সমানভাবে উপহার দেয়া জরুরি নয় বরং বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী কমবেশি করা যাবে। যেমন- বড়কে বেশি আর ছোটকে কম, বিবাহিতকে এক রকম অবিবাহিতকে অন্য রকম— এতে কোনো আপত্তি নেই।
আমাদের দেশে ঈদ সালামি পাওয়ার জন্য ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে। এটি অনৈসলামিক কালচার। এর সম্প্রসারণ রোধ করা জরুরি। কেউ এমনটি করলে তাকে নিষেধ করতে হবে।
অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা হাতে টাকা পেয়ে যেন আজেবাজে ও গুনাহের কাজে ব্যয় না করে।
ঈদের দিনে যা করবেন, যা করবেন না
ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ খুশি, আনন্দ, ফিরে আসা ইত্যাদি। যেহেতু প্রতি বছর দিনটি ফিরে আসে তাই একে ঈদ বলা হয়। প্রতিবছর আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ফিরে আসে অনন্য এ আয়োজন। এটি এমন এক নির্মল দিন, যেদিন মুসলিমরা আত্মশুদ্ধির অনাবিল আনন্দে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের ময়দানে কাতারবদ্ধ হন।
ইবাদতময় এই আনন্দ উৎসব থেকে আরও কল্যাণ লাভের জন্য প্রয়োজন হলো মহান আল্লাহর বিধান এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং যেভাবে ঈদ উদ্যাপন করেছেন আমাদের জন্যও করণীয় হলো সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া এবং উদ্যাপন করা।
ঈদুল ফিতরের দিন যা করবেন
ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে এবং মন ফুরফুরে হয়। এতে ঈদের দিনের আমল এবং আনন্দ উদ্যাপনে বাড়তি ভালো লাগা কাজ করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন গোসল করতেন। (বোখারি: ১/১৩০)
নতুন ও ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ ছাড়া উৎসব হয় নিরানন্দের। ঈদের দিন সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) এর এমন একটি জুব্বা ছিল, যা তিনি দুই ঈদ ও জুমার দিন পরতেন।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমা ১৭৬৫)
রাসুল (সা.) সুগন্ধি খুব পছন্দ করতেন। তিনি নিজে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও সুগন্ধি ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। ঈদের দিনের সুন্নতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুসতাদরাকে হাকিম: ৭৫৬০, দররুল মুখতার: ২/১৬৮)
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার পর কিছু খাওয়া সুন্নত। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের আগে কিছু খেতেন না। (তিরমিজি শরিফ : ৫৪৫)।
ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া’। (তিরমিজি শরিফ : ৫৩৩)।
এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া আর অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নত। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, নবি করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন। (সহিহ বুখারি : ৯৮৬)।
ঈদের নামাজ শেষে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবি করিম (সা.)-এর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন, আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (আবু দাউদ শরিফ : ১১৫৭)।
রমজান মাসে রোজার যে ত্রুটি হয়েছে তা পূরণ করতে অভাবগ্রস্ত আর গরিবদের যে খাদ্যসামগ্রী দান করা হয় তাকেই সাদাকাতুল ফিতর বলে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি : ১৫০৩)।
খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়া সুন্নত। শরয়ী ওজর ব্যতীত ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করলে সুন্নতের খেলাফ হবে। (দুররুল মুখতার: ২/১৬৯)
ঈদের দিন একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এর সাহাবোয়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ অর্থাৎ আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুন। (ফাতহুল কাদির: ২/৫১৭)
ঈদের দিন যা করবেন না
ঈদের দিন এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা করতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন।
ঈদের দিন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নাচানাচি করা, পটকা ফুটানো বা যে কোনো আতশবাজি সম্পূর্ণ বর্জন করা আবশ্যক।
ঈদের আনন্দের নামে নারীদের বেপর্দায় বাইরে বের হওয়া বর্জনীয় কাজ।
আনন্দ করতে গিয়ে অমুসলিমদের আদর্শ ও সংস্কৃতি মুসলমানদের জন্য গ্রহণ করা উচিত নয়।
যে কোনো ধরনের অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
যে কোনো প্রকারের অশালীন খোলামেলা পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
নারী-পুরুষের বেশ বা পোশাক পরা এবং পুরুষ-নারীর বেশ বা পোশাক পরা নিষিদ্ধ।
পা ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?
আমাদের দেশে যে পা ছুঁয়ে সালাম করা বা কদমবুসি করার প্রথা প্রচলিত আছে তা ইসলামি সংস্কৃতি নয়। ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলা ইসলামের দৃষ্টিতে সালাম বলে।
হাদিসে মুসাফাহা-মুআনাকার কথা আসলেও কদমবুসির কথা আসেনি। আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুসাফাহা করবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিজি: ২৭২৮; ইবনে মাজাহ: ৩৭০২; আহমদ: ১৩০৪৪)
রাসুল (স.) মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, পা ছুঁয়ে ‘সালাম’ করার সময় সাধারণত মাথা ঝুঁকে যায়। আর ‘রুকুর কাছাকাছি হয়ে সালামের জন্য ইশারা করা, ঝুঁকে পড়া এসব মাকরুহ।’ (সাকবুল আনহুর: ৪/২০৫)
আরেক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন দুজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয়, তারপর তারা মুসাফাহা করে, তাহলে তারা পরস্পর আলাদা হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৪৭, ইবনে মাজাহ: ৩৭০৩, আবু দাউদ: ৫২১২, তিরমিজি: ২৭২৭)
হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের লক্ষ করে বললেন, হে বৎস! তুমি গৃহে পরিবার-পরিজনের কাছে প্রবেশকালে সবাইকে সালাম করবে। এতে তোমার এবং তোমার গৃহের সবার জন্য কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮, আলমুজামুল আওসাত: ৫৯৯১)
তবে কেউ কেউ কদমবুসি বা পদচুম্বনকে সম্মানসূচক জায়েজ বলেছেন। তবে সেই সঙ্গে শর্তও দিয়েছেন।
শর্ত হচ্ছে, ‘যদি রুকু বা সেজদার সুরত হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। (আলমুজতাবা: ৪/২০৫, আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/১১৮, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩৬৯)
ইসলামে উত্তমভাবে সালাম ও সালামের উত্তর দেওয়ার কথা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামরা রাসুল (সা.)-কে আসসালামু আলাইকুম বলেই সালাম দিয়েছেন। হাদিসে লক্ষণীয়, যত উত্তমভাবে সালাম দেওয়া যায় তত বেশি সওয়াব। আবার উত্তমভাবে সালামের জবাব দিতেও বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর নিকট এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসুলুল্লাহ (স.) তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর রাসুল (স.) বললেন ‘দশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’ রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দেয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে রাসুল (স.) বললেন ‘বিশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’, রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন ‘ত্রিশ’। (আবু দাউদ: ৫১৯৫; তিরমিজি: ২৬৮৯)
শাওয়াল মাসের ৬ রোজার ফজিলত
নফল রোজাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। এ মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজে এ আমল করেছেন। শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত বর্ণনা করে তিনি বলেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল। (সহিহ মুসলিম)
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত
হযরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি: ১/১৫৩৪)।
এ বিষয়ে ইমাম নববি বলেন, রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। রমজানের ৩০টি রোজা ও শাওয়ালের ৬টি রোজা মিলে মোট ৩৬টি রোজা হয়। আল্লাহ তাআলার কোরআনে বলেছেন,
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَا
অর্থ : যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। (সুরা আনআম: ১৬০)
সেই হিসাবে ৩৬টি রোজায় ১০গুণ সওয়াব পেলে ৩৬০ দিন বা পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
ছয় রোজা রাখার নিয়ম
ফকিহ ও আলেমগণের অভিমত হলো, যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব এবং ওই দিনে রোজা রাখা হারাম, তাই ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে।
কেননা হাদিসে শাওয়াল মাসের ভেতর ছয় রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। মাসের শুরুতে, মধ্যভাগে না শেষাংশে সেই বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি। কেউ চাইলে একাধারে ছয়টি রোজা রাখতে পারবে। আবার কেউ চাইলে বিরতি দিয়েও রাখতে পারবে। মূল কথা হলো, শাওয়াল মাসের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে।
১০০ বছর পর খুলল মসজিদ, ঈদের নামাজ পড়লেন মুসলিমরা
অটোম্যান শাসনামলে তৈরি গ্রিসের থেসালিনিকির ঐতিহাসিক ইয়েনি যামি মসজিদ ১০০ বছর পর নামাজের জন্য খুলে দিয়েছে গ্রিস সরকার। আর মসজিদটি খুলেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসলিমরা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) এ খবর জানিয়েছে এপি নিউজ, দি ইকোনোমিকস টাইমস, ওয়াসিংটনপোস্ট, ইরান প্রেস।
জানা গেছে, মুসলিমরা ১০০ বছর আগে গ্রিসে যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় অনেক মসজিদ বন্ধ করে দেয় অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক ইয়েনি যামি মসজিদ। দেশটিতে গত শতক থেকেই বহাল থাকলেও সম্প্রতি মত পাল্টায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। ফলে বুধবার (১০ এপ্রিল) খুলে দেওয়া হয় মসজিদটি। পরে মুসলিমরা এখানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। এদিন ৭০ হাজার মুসল্লি নামাজে অংশ অংশ নিয়েছেন।
এক শতাব্দি পূর্বে ইহুদি থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ডনমেহ সম্প্রদায়ের মানুষ। আর তাদের জন্য অটোম্যান শাসকরা এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯০২ সালে তৈরি মসজিদটির স্থাপত্যে দেখা মেলে ইসলামিক কারুকার্যের। ইতালিয়ান স্থপতি ভিতালিনো পোসেলির হাত ধরেই গড়ে ওঠে মসজিদটি। ১৯২৩ সালে গ্রিস এবং তুরস্কের মধ্যে দুই দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বিনিময় হয়। ফলে ইয়েনি যামি মসজিদটিতে নামাজ আদায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে এটি কখনো ব্যবহার হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, কখনো জাদুঘর হিসাবে। আবারও মসজিদটি খুলে দেওয়ায় দেশটির মুসলিমরা ফিরে পেয়েছেন হারানো ঐতিহ্য।
এ প্রসঙ্গে এআই গ্রিসো নামের এক গ্রিস নাগরিক বলেন, আমাদের দেশে ৯৮ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ২ শতাংশ মুসলিম বসবাস করেন। এবারের ঈদে প্রায় এক শতাব্দী আগের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাচীন মসজিদ খুলে দেওয়ায় প্রমাণ করে গ্রিসে মুসলিম আর সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
এ সময় এক মুসল্লি বলেন, গ্রিস সরকার জানিয়েছিল, একশো বছর পর মসজিদটির দরজা খুলে দেওয়া হবে। তাই নামাজ পড়তে এসেছিলাম। প্রায় ৬৩ বছর যাবৎ এখানে আছি, এতদিন এটাকে জাদুঘর হিসেবে চিনলেও, জানতাম না এটা একটা মসজিদ।
প্রসঙ্গত, অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ইউরোপের দেশটিতে ২০২০ সাল পর্যন্তও মুসলিমদের জন্য কোনো মসজিদ ছিল না। ভোটানিকোসে প্রথম সরকারিভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় ২০২০ সালে। যেটি পুরোপুরি চালু রয়েছে। এ ছাড়া এথেন্সের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মুসলিম কমিউনিটিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মসজিদ রয়েছে।
ওমরাহ ভিসার মেয়াদে পরিবর্তন
ওমরাহ ভিসার মেয়াদে পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব। এখন থেকে ভিসা ইস্যুর দিন থেকে ৯০ দিন গণনা শুরু হবে। যদিও আগে ওমরাহ ভিসার ৯০ দিন মেয়াদ গণনা শুরু হতো সৌদিতে প্রবেশের পর থেকে।
সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় নতুন এ নির্দেশনা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, আগে ওমরাহ ভিসার ৯০ দিন মেয়াদ গণনা শুরু হতো সৌদিতে প্রবেশের পর। বর্তমানে এ নিয়ম পরিবর্তন করে ভিসা ইস্যুর দিন থেকে ৯০ দিন সৌদিতে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে বর্তমানে যারা অবস্থান করছেন তাদের আগামী ১৫ জিলকদ তথা ২৩ মে’র আগেই দেশটি ত্যাগ করতে হবে। সৌদিতে আসার পর ৯০ দিন পূর্ণ হোক বা না হোক। এ সময়ের পরেও যারা ৯০ দিন পূর্ণ হয়নি বলে রয়ে যাবেন তারা আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওমরাহ ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় গত কয়েক বছর ধরেই ওমরা পালনকারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসে প্রায় তিন কোটি মুসলমান ওমরাহ পালন করেছেন।
সূত্র : সৌদি গ্যাজেট