• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অভিনয়টা হচ্ছে আনন্দ ও প্রেম : দীপান্বিতা মার্টিন

  ০১ মার্চ ২০২২, ১৮:২৩
অভিনয়টা হচ্ছে আনন্দ ও প্রেম : দীপান্বিতা মার্টিন

দীপান্বিতা মার্টিন। অভিনয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ প্রায় দুই যুগ। এতটা বছর শুধু অভিনয়ের পেছনেই ছিলেন। প্রথমে মঞ্চ, পরে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। তবে খুব বেশি যে অভিনয় করেছেন তা কিন্তু নয়। ভালো কাজের প্রত্যয় নিয়েই হয়তো অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। রাষ্ট্র তাকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মান দিয়েছে। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০’-এর তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছেন। অভিনয়ে তার দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি ও সময়ের ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে। তার সঙ্গে একান্ত আলাপ শেষে লিখেছেন রিপোর্টার কুদরত উল্লাহ

আরটিভি : কেমন আছেন আপনি?

দীপান্বিতা মার্টিন : এই তো বেশ ভালো আছি।

আরটিভি : সকল পুরস্কার প্রাপ্তিই তো আনন্দের হয়। অভিনয়ে আপনি তো রাষ্ট্রের সব চেয়ে বড় পুরস্কার পেলেন। এই প্রাপ্তির আনন্দ কেমন?

দীপান্বিতা মার্টিন : এটি একটি স্বীকৃতি। এর পেছনে দীর্ঘদিনের ট্রাভেল আছে, জার্নি আছে। অনেক হতাশা ছিল, কঠোর পরিশ্রম ছিল। সেগুলোকে এখন সার্থক মনে হচ্ছে। এটাও মনে হচ্ছে সততা, ধ্যান, কাজের প্রতি ভালোবাসা। যেটাই বলেন না কেন সেটার মূল্যায়ন এটা। অনেক বড় ভালো লাগা এটা।

আরটিভি : যে চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলেন, তাতে অভিনয় করে কতটা তৃপ্ত আপনি?

দীপান্বিতা মার্টিন : হ্যাঁ, আমি এই চরিত্রটা করে অনেক তৃপ্ত। কারণ, ব্যক্তি জীবনে আমি মা না হলেও আমাকে একজন মা হয়ে উঠতে হয়েছে এই চরিত্রের জার্নির সঙ্গে। যে আমার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে সে ১৫-১৬ দিন পরে বিশ্বাস করেছে, আমি তার আসল মা নই। এটা তো অনেক বড় ভালো লাগার বিষয়, হয়তো এখানেই তৃপ্ততা।

আরটিভি : অভিনয় বিষয়টি আপনার কাছে কী?

দীপান্বিতা মার্টিন : অভিনয়টা হচ্ছে একটা আনন্দ, একটা প্রেম।

আরটিভি : আপনি তো নিয়মিত মঞ্চ করেছেন। মঞ্চের সেই পথচলা নিয়ে কী বলবেন?

দীপান্বিতা মার্টিন : মঞ্চের প্রতি ভালোবাসাটা আসলে অনেক দিনের। এটা আসলে একটা অনুভূতির জায়গা, অভিনয় শেখার জায়গা। আসলে বলতে গেলে মঞ্চ দলীয় বিষয়। গ্রুপ ওয়ার্কের দিনগুলো বেশ মনে পড়ে। একটা পরিবারের মতো ছিলাম। প্রতিদিন গ্রুমিং ছিল, অভিনয় ছিল। এখনও আছে তবে কিছুটা বদলে গেছে।

আরটিভি : এমন কখনো হয়েছে অভিনয় করতে করতে চরিত্র থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল?

দীপান্বিতা মার্টিন : হ্যাঁ, এটা একটা টেলিভিশনের কাজ ছিল। নির্মাতা ও লেখক মাতিয়া বানু শুকু আপার পরিচালনায় একটি নাটক ছিল। সেখানে আমি অটিস্টিক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। অভিনয় করতে করতে সেই চরিত্রের ভেতরে এতটাই প্রবেশ করেছিলাম যে আমি হ্যাংওভার হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর কিছুতেই আমি আর সেই চরিত্র থেকে বের হতে পারছিলাম না।

আরটিভি : সে সময়কার ভাবনাটা সংক্ষেপে যদি শেয়ার করতেন..

দীপান্বিতা মার্টিন : শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমি বিশ্বাস করছিলাম যে আমি অটিস্টিক। আমার খাওয়া, ঘুম, নিত্যদিনের চলাচল, কথাবার্তা সব কিছুই অটিস্টিটিকের মতো হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমার বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলছিলাম ওভাবেই। আমার ওই বন্ধু বুঝতে পারছিল যে আমার একটা সমস্যা হয়েছে। পরে আমি উত্তরায় সেই নাটকের শুটিং হাউজের আশপাশেই যেতে পারিনি দীর্ঘদিন। পরে আমার প্রায় মাসখানেক সময় লেগেছে সেই চরিত্র থেকে বের হতে। কারণ, প্রায় বিশ্বাসই করে ফেলেছিলাম আমি অটিস্টিক। সাইকোলজিক্যালি থেরাপিও নিতে হয়েছিল।

আরটিভি : অভিনয়ের প্রতি আপনি কতটা যত্নশীল?

দীপান্বিতা মার্টিন : অভিনয়ে আমি চেষ্টা করি আমার শতভাগ দেওয়ার জন্য। এখন সেটা অন্যদের কাছে মানদণ্ড কেমন হবে তা আসলে আমি জানি না। আমি আমারটা যদি বলি তাহলে বলব অভিনয়ের সঙ্গে শতভাগ সৎ। সততার সঙ্গেই আমি অভিনয়টা করি।

আরটিভি : অভিনয় তো আসলে একটা চর্চার বিষয়, আপনি কীভাবে এই চর্চায় নিজেকে দেখেন?

দীপান্বিতা মার্টিন : আমি সকাল থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত একটা অভিনেত্রীর জীবনযাপন করি। আমার নিজের শরীরের যত্ন নেই। নিয়মিত মুভি দেখি, পড়ি, চরিত্র নিয়ে চিন্তা করি যে চরিত্র এখনও আমার কাছে আসেনি। সেগুলো নিয়ে আমি ভাবি। হয়তো ইচ্ছা করে নানা রকম চিন্তায় নিজেকে প্রতিস্থাপন করি। এটা বেশি হয় বাইরে বের হলে। নিত্যনতুন চরিত্র দেখা যায় বাড়ির বাইরে, নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে গেলে। যেই চরিত্রটা আমার কাছে মজা লাগে বা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় ওটা বাসায় এসে একা একা প্র্যাকটিস করি। এরপর আরও চেষ্টা করি আমার শরীরের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়। মূলত একটা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করার চেষ্টাই আমার থাকে, এটা অনেক বেশি করি। বিশেষ করে গত ছয় বছর ধরে নিয়মিত এই প্রাকটিস করি।

আরটিভি : এত বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত, তো নিজের অভিনয়ে তৃপ্ত কতটুকু?

দীপান্বিতা মার্টিন : শিল্পীর আসলে পুরোপুরি আত্মতৃপ্তি কখনো আসে না। আজকে একটা শেষ করলে, কালকে মনে হয় যে আমি যদি আসলে ওই রকম আরেকটা চরিত্র করতে পারতাম। তবে যদি বলতেই হয় তাহলে আমি ‘গোর’ সিনেমায় যে চরিত্রটা করেছি এতে তৃপ্ত। তবে আরও যদি কিছু চরিত্র নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে।‘পায়ের তলায় মাটি নাই’, ‘পাতাল ঘর’, ‘মানুষের বাগান’, ‘পায়ের ছাপ’সহ আরও বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে যেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে শেষ হবে না। অল্প কথায় এতটুকুই বললাম।

আরটিভি : অভিনেত্রীর জীবন তো অনেক রঙিন হয়, এই রঙের ছোঁয়ায় আপনি কতটুকু রঙিন?

দীপান্বিতা মার্টিন : সাইফুল ইসলাম নান্নুর ‘পায়ের ছাপ’ চলচ্চিত্রে আমি খুবি ইন্সপায়ার্ড একটা চরিত্র করেছি। লাইক... আমি একটা মানুষকে ইন্সপায়ার্ড করি। আবার নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য। এটা আসলে আমার জীবনের কাছাকাছি একটা চরিত্র ছিল। এগুলো অনেক কালারফুল। প্রতিটি চরিত্রই কালারফুল। এক একটা চরিত্রের আলাদা রং আছে। প্রতি চরিত্রের ভিন্ন ভিন্ন একটা রং অবশ্যই আছে। মায়ের একটা কালার থাকে, সে সেটা ধারণ করে গ্রিন। স্ত্রীর চরিত্র সেটা হয় তো মাল্টিপুল কালার। তো প্রতিটি চরিত্রই একরকম ভিন্ন ভিন্ন জীবনের রং। আমি যে কয়টা চরিত্রের কথা বলছি আসলে প্রতিটা চরিত্রই রঙিন কোনো না কোনোভাবে রঙিন।

আরটিভি : সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে কিছু বলুন...

দীপান্বিতা মার্টিন : আমি এই মাসেই একটা সিনেমার শুটিং শেষ করলাম। আর একটা ওয়েভ সিরিজ করছি। সামনে আরও কয়েকটি ওয়েব সিরিজ ও ফিল্মের কথা চলছে। দেখা সামনে কি হয়।

আরটিভি : ওয়েবে প্লাটফর্মে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

দীপান্বিতা মার্টিন : আমার অভিজ্ঞতা ভালোই। কাজটা আসলে বড় পরিসরে হয়, সময় নিয়ে হয়, যত্ন আছে, স্ক্রিপ্টটা চিন্তা করেই করা হয়। ওটিটি প্লাটফর্মে সেটা তো সবাই দেখতে পারবে। এটা তো আমরা বলতে পারি আন্তর্জাতিক মাঠে নেমেছি। এখানে চিন্তা ধারা নতুন। মাত্র তো শুরু করলাম ওয়েবে এখন ভালোই মনে হচ্ছে। তার মধ্যে দুইটাই দেশের বাইরে করা। আমার কাছে মনে হয় এটা ভালো উদ্যোগ। আমি চেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি এই প্লাটফর্মের কাজে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • সাক্ষাৎকার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন বিদ্যা
এমন মুগ্ধ হয়ে এর আগে দেখিনি : পরীমণি
ফের বাংলাদেশের সিনেমায় পাওলি
বেআইনি কাণ্ডে এবার অভিনেত্রী তামান্নাকে পুলিশের তলব
X
Fresh