• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হোস্টেলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা

আরটিভি নিউজ

  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৩২
Parents, worried, safety, students, hostel
হোস্টেলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা

প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরমুখী হচ্ছেন। শহরে পড়তে এতে শিক্ষার্থীরা পদে পদে বাধার মুখে পড়ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকও থাকেন দুশ্চিন্তায়। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও মিলছে না আবাসন। এতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেলে। কিন্তু হোস্টেলগুলো নোংরা, অন্ধকার, নিরাপত্তাহীনতা ও দম বন্ধ পরিবেশ। এসব মনিটরিং করার মতো দেশে যেন কোন সংস্থা নেই।

রাজধানীর ফার্মগেট, আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল করা হয়েছে। দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমসহ ১২টি সিট বসানো হয়েছে। যে ফ্ল্যাটে চার থেকে ছয় জন শিক্ষার্থীর সিট থাকলে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারতেন সেখানে গাদাগাদি করে ১২টি সিট বসানো হয়েছে। অমানবিক অবস্থায় বসবাস করছেন রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। হোস্টেল ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রে মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছেন। হোস্টেল কিংবা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সংগ্রামের সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছেন। বহু হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। টাকা খরচ করে ছাত্রীরা এসব হোস্টেলে থাকলেও নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকতে হয় তাদের। বেশির ভাগ হোস্টেলেই নেই মানসম্মত পরিবেশ, উপযুক্ত আবাসিক সুবিধা। অথচ ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন মালিকরা।

জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে হল বন্ধ রেখে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজসহ বেশকিছু কলেজে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তাদের নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও আজিমপুরের আশেপাশে হোস্টেল ভাড়া নিতে হয়েছে। ৮০০ থেকে ৯০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটে পাঁচ-ছয়টি রুম।

চটকদার বিজ্ঞাপনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, সার্বক্ষণিক পানি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে রাজধানীর অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু ছাত্রী বা কর্মজীবী নারীদের আবাসিক হোস্টেল। বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে রেখে যাচ্ছেন এসব হোস্টেলে। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার্থী, চাকরিপ্রত্যাশী, চাকরিজীবী কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত হাজারো মেয়ে হোস্টেলে ওঠেন। বাসাবাড়ির চেয়ে তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া দিয়েও মানসম্মত পরিবেশ, মানসম্মত খাবার বা আবাসিক সুযোগ-সুবিধা মেলে না বেশির ভাগ হোস্টেলে। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা বেশির ভাগ বিষয়ের দেখাই মেলে না এসব হোস্টেলে। অথচ এসব হোস্টেলে নজরদারি করার যেন কেউ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।

ফার্মগেটের একটি ভিআইপি ছাত্রী হোস্টেলে সার্বক্ষণিক পানি-বিদ্যুৎ, আইপিএস, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি সুবিধা থাকার কথা বললেন হোস্টেল ম্যানেজার রফিক। থাকা-খাওয়াসহ নেবেন পাঁচ হাজার টাকা। তবে শর্ত—হোস্টেলে উঠলে দুই মাসের আগে ছাড়া যাবে না। দুই মাস পর ছাড়তে হলে সময় দিতে হবে আরো ৪৫ দিন। ম্যানেজার বললেন, ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্যই আছে হোস্টেল। ছেলে-মেয়েদের হোস্টেল পাশাপাশি আলাদা বিল্ডিংয়ে। শুধু ফার্মগেটেই হোস্টেলের জন্য ২৭টি বিল্ডিং আছে তাদের।

ইডেন কলেজের ছাত্রী গাজলা শাহীন নামে এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সার্ভিস চার্জের নামে সর্বনিম্ন তিন থেকে চার হাজার টাকা অফেরতযোগ্য এককালীন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোথাও রাত ৮টায়, কোথাও রাত ১০টায় গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আজিমপুরে গাজলা শাহীনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তার বড় ভাই রতন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ইডেন কলেজের হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ছোট বোনকে একটি হোস্টেলে তুলে দিতে ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু হোস্টেলগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখলেও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছেন ছাত্রীরা।

আজিমপুরের ইরাকি মাঠ, খালেক লেন, ছাপরা মসজিদ, কবরস্থানসংলগ্ন রোডজুড়ে চলছে ছাত্রী হোস্টেলের রমরমা বাণিজ্য। কবরস্থানসংলগ্ন একটি হোস্টেলে গিয়ে দেখা গেল চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র। ছয়তলা বাসার তিন ও চারতলায় এতিমখানা। বাকি অংশজুড়ে মহিলা-ছাত্রী নিবাস। আজিমপুরের বেশির ভাগ বাসায় হোস্টেল-মেস আর সাবলেট বাণিজ্য চলছে পুরোদমে।

ফার্মগেটের পূর্ব তেজতুরী বাজারে রোজা হোস্টেল নামে একটি ছাত্রী হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার। ১১ জন মেয়ের জন্য মাত্র একটি গোসলখানা। ছোট আর নোংরা পরিবেশের এসব গোসলখানা নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না। পাশাপাশি দুটি হোস্টেলের দায়িত্ব পালন করছেন এক ব্যক্তি। মালিকরা যেমন খুশি তেমন নিয়ম করে হোস্টেল চালাচ্ছেন।

রাজধানীজুড়ে কতটি বেসরকারি হোস্টেল রয়েছে এর কোনও পরিসংখ্যান নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। স্থানীয় থানায়ও মেলেনি এমন কোনও নির্দিষ্ট তথ্য। অনুমোদন ও নিয়ম-নীতি ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছামাফিক এসব হোস্টেল চালিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন মালিকরা।

তেজগাঁও থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, স্পষ্টভাবে কোনও অভিযোগ না পেলে আমরা কিছু করতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা সম্পৃক্ত কোনও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হোস্টেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হোয়াব) নামের একটি সংগঠন রাজধানীতে বেসরকারি হোস্টেলের নিবন্ধন দেয়। এ সংগঠনের কর্মকর্তা টিটু জানান, হোস্টেল নিবন্ধনের জন্য প্রথমে তাদের কাছে আবেদন করতে হয়। পরে তারা হোস্টেল পরিদর্শন ও অবজারভেশনে রাখেন। এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। শুধু নিবন্ধন করা হোস্টেলের ব্যবস্থাপনা তারা দেখভাল করেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু অনিবন্ধিত হাজারেরও বেশি হোস্টেলের কার্যক্রমের নজরদারি নেই প্রশাসনের।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফাহমিদা নবীর গানের অ্যালবাম 
বুবলীকে নিয়ে নতুন করে যা বললেন অপু বিশ্বাস
বিতর্কিত ক্যাচ নিয়ে মুশফিকের নীরব প্রতিবাদ
ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য
X
Fresh