১১ বছরের মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে ধ'র্ষণ, যেভাবে আটক হলো বাবা!
মেয়ে নাবালিকা। সেই মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবারই বিরুদ্ধে! এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিছে। অভিযুক্ত বাবাকে লাইটপোস্টে বেঁধে পিটিয়েছেন স্থানীয়রা। এরপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের হুগলি জেলার চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলি এলাকায়।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী নাবালিকার বয়স ১১ বছর। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাড়িতে তার মা না থাকলেই দিনের পর দিন নাবালিকা থেকে যৌন লালসা মেটাতো তার সৎ বাবা। হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করতো মেয়েকে। তাকে ভয়ও দেখাতো যেন কারো কাছে ধর্ষণের কথা না বলে। ভয়ে মন মরা হয়ে থাকত মেয়েটি।
এছাড়াও জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) নাবালিকা মেয়েটিকে শক্ত করে চেপে ধরেন স্থানীয়রা। এসময় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী। সকলের সামনেই সৎ বাবার কুকর্ম প্রকাশ করেন। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়। সূত্র : জি-নিউজ
এসআর/
মন্তব্য করুন
ভারতে মিলল অদ্ভুত গাছ!
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামা রাজু জেলার পাপিকোন্ডা ন্যাশনাল পার্কে বন কর্মকর্তারা ইন্ডিয়ান লরেন্স নামের একটি গাছের ছাল কেটে ফেলেন, তখন সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে পানি বের হতে থাকে। এই গাছটিকে ইন্ডিয়ান লরেল ট্রি বলা হয়, যেটি গ্রীষ্মকালে নিজের ভিতরে পানি জমা করে রাখে। বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা গাছটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। বিশেষ করে গোদাবরী অঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী উপজাতি গোষ্ঠী কোন্ডা রেড্ডি সম্প্রদায় এই গাছ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল। তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর বাকল কেটে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) একটি ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ছাল কাটার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে পানি বেরোতে শুরু করেছে। ওই সময় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি জি নরেন্দ্রন বন বিভাগের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নরেন্দ্রন বলেন, ‘যখন আমরা জাতীয় উদ্যানে ভারতীয় লরেল গাছের ছাল কেটে ফেলি, তখন সেখান থেকে পানি বেরিয়ে আসে। কোন্ডা রেড্ডি উপজাতি গাছটি সম্পর্কে তাদের আদিবাসী জ্ঞান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করেছিল। গ্রীষ্মকালে, ভারতীয় লরেল গাছে পানি জমে যা তীব্র গন্ধযুক্ত এবং টক স্বাদযুক্ত। ভারতীয় বনের গাছগুলোতে একটি আশ্চর্যজনক অভিযোজন দেখা গেছে।’
উল্লেখ্য, ভারতীয় লরেলের কাঠ সিলভার ওক নামেও পরিচিত। এর উচ্চ বাণিজ্যিক মূল্য রয়েছে। যে কারণে বন কর্মকর্তারা এসব গাছের প্রজাতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হিসেবে গাছগুলোর সঠিক অবস্থান প্রকাশ করেননি। সহজ ভাষায় একে কুমিরের ছাল গাছও বলা হয়। এই গাছের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট লম্বা হতে পারে এবং এটি বেশির ভাগ শুষ্ক ও আর্দ্র বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এই গাছের সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হলো এর কাণ্ড পানিতে ভরা, যেখানে অন্যান্য গাছের তুলনায় এর কাণ্ড ফায়ার প্রুফ। এই গাছের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা একে বোধিবৃক্ষ নামেও ডাকে। তারা বিশ্বাস করে যে, এই গাছের নিচে তপস্যা করার সময় বোধিসত্ত্ব জ্ঞান লাভ করেছিলেন।
যোগগুরু রামদেবকে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কড়া হুঁশিয়ারি
নিজের প্রতিষ্ঠিত আয়ুর্বেদিক পণ্যের সংস্থা পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি শুনেছেন ভারতীয় যোগগুরু বাবা রামদেব। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সেলিব্রিটি এ যোগগুরুকে কঠিন পদক্ষেপের জন্য তৈরি থাকতে বলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
এদিন রামদেবের সঙ্গে আদালতে হাজিরা দেন তার সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণও। এর আগে ভুল বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত মামলায় আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণকে। কিন্তু কোনও জবাব না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ২ এপ্রিল তাদের দুজনকে হাজিরা দিতেই হবে জানিয়ে কড়া নির্দেশ দেন আদালত। সেই নির্দেশ মেনেই আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দেন তারা।
প্রসঙ্গত, ভুল বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত উক্ত মামলায় পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ ছিল, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের অপমান করেছে রামদেবের সংস্থা। এছাড়া কোভিড ১৯-এর ভ্যাকসিন নিয়েও এই সংস্থা ভুল প্রচার করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, পতঞ্জলির করা দাবিগুলো আদৌ সত্য বলে প্রমাণিত নয় এবং তা ১৯৫৪ সালের ড্রাগস অ্যান্ড আদার ম্যাজিক রেমেডি আইন এবং ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনের মতো আইনগুলোকে সরাসরি লঙ্ঘন করে।
সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পুরো বিষয়টি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারেরও সমালোচনা করেন সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে পুলিশের অভিযানে ১৩ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত
লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে বাকি মাত্র কয়েক সপ্তাহ৷ এমন সময়ে ছত্তিশগঢ়ে পুলিশের এক অভিযানে মারা গেছে ১৩জন মাওবাদী বিদ্রোহী৷
ভারতে নির্বাচনের প্রচার এখন তুঙ্গে৷ তার মধ্যেই ছত্তিশগঢ়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ৷ ১৪ ঘণ্টা ধরে চলে অভিযান৷ এই অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় চলতি বছর পুলিশের অভিযানে মোট ৫০জন মাওবাদী নিহত হলো৷
পুলিশের দাবি, ছত্তিশগঢ়ের বিজাপুর জেলায় মঙ্গলবার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়৷
বার্তা সংস্থা এএফপিকে স্থানীয় পুলিশ প্রধান পি সুন্দারা বলেন, নিহত মাওবাদীদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি৷ নিহতদের মধ্যে তিনজন নারীও ছিলেন৷ এই অভিযানের পর পুলিশ বেশ কিছু রাইফেল, মেশিন গান, গ্রেনেড লঞ্চার ও গোলাগুলি বাজেয়াপ্ত করে৷
মাওবাদী বিদ্রোহী বা নকশালপন্থিরা দাবি করেন যে, তারা ভারতের প্রান্তিক গরিব মানুষের অধিকারের জন্য লড়েন৷ এই গোষ্ঠীর উত্থান পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে৷ ১৯৬৭ সালে সেখানেই শুরু হয়েছিল মাওবাদীদের সরকারবিরোধী আন্দোলন৷ সেই থেকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী নানা ধরনের গেরিলা হামলা চালিয়ে আসছে বলেই ভারত সরকার তাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করে৷
ভারত সরকারের মতে, এমন বিদ্রোহীরা ২০২৩ সালে দেশের ৪৫টি জেলায় সক্রিয় ছিল৷ ২০১০ সালে মাওবাদী বিদ্রোহীদের সক্রিয়তা লক্ষণীয় ছিল ৯৬টি জেলায়৷ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলের মাওবাদী-অধ্যুষিত রেড করিডোর-এ হাজার হাজার সামরিক বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সব মিলিয়ে সাতটি দফায় ভোট গ্রহণ চলবে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত৷
বাংলাদেশে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত
‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক’ দিয়ে দেশে গত প্রায় তিন মাস ধরে যে প্রচারণা চলছে, তা নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত সরকার।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা নষ্ট করতে পারবে না। দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপ্তি সর্বগামী, এই সম্পর্ক এমনই থাকবে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশে গত বেশ কিছুদিন ধরে তথাকথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চলছে, যাতে মূলত ভারতের পণ্য বয়কট করার ডাক দেওয়া হচ্ছে। সে দেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতাও সেটাতে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এই আন্দোলন নিয়ে কি আপনি কোনো মন্তব্য করতে চাইবেন? আর দ্বিতীয়ত, এর ফলে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানির পরিমাণে কি কোনো প্রভাব পড়ছে?’
জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘দেখুন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আসলে খুব শক্তিশালী ও গভীর। আমাদের দুই দেশের মধ্যে আসলে একটি কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ আছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত। অর্থনীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে উন্নয়ন সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি থেকে শুরু করে পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট–মানবজীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো একটা বিষয়ের নাম নিন, দেখবেন সেটা কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের সামগ্রিক সম্পর্কের অংশ। আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্ব ঠিক এতটাই প্রাণবন্ত। আর এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’
ভারতের ৩ অঞ্চলে দেখা গেছে চাঁদ
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ এবং কেরালায় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে সেসব অঞ্চলে আগামীকাল বুধবার ঈদুল ফিতর পালিত হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ ও কেরালায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেছে। তবে দেশটির রাজধানী দিল্লিসহ বেশিরভাগ অঞ্চলে চাঁদ দেখা যায়নি। যেসব অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেছে সেসব অঞ্চলে আগামীকাল বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় চাঁদ দেখা যায়নি সেখানে ঈদ পালিত হবে বৃহস্পতিবার।
ভারতের রাজধানী দিল্লির জামে মসজিদের ইমামরা এবং ফতেহপুর মসজিদ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, যেহেতু চাঁদ দেখা যায়নি ফলে বৃহস্পতিবার ঈদ পালিত হবে।
এদিকে পাকিস্তানেও দেখা গেছে শাওয়ালের চাঁদ। ফলে আগামীকাল বুধবার দেশটিতে ঈদ উদযাপন করা হবে। পাকিস্তানে এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলেও বাংলাদেশে দেখা যায়নি। তাই বাংলাদেশের মুসলিমরা এবার ৩০টি রোজা পালন করবেন। আর ঈদ পালন করবেন আগামী বৃহস্পতিবার।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
বাংলাদেশ ও আমিরাতে ভারতের পেঁয়াজ কূটনীতি
ভারতে বেশ কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটানের মতো কয়েকটি দেশে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজের দাম বাড়লেও ভারত থেকে ওই দেশগুলোতে কম দামে পেঁয়াজ রপ্তানিকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ ভারতের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, ভারতীয় কৃষকদের এক কেজি পেঁয়াজের জন্য ১২ থেকে ১৫ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই একই পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছালে তার দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো- রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারত সরকার নির্বাচিত দেশগুলোর কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছে? পেঁয়াজ রপ্তানি কি তাহলে ভারতের কাছে কূটনীতির একটা অংশ হয়ে উঠেছে?
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রীতি একেবারে নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ভারত তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে খাদ্যপণ্য, প্রয়োজনীয় সামগ্রী রপ্তানি করেছে এবং পরিষেবা দিয়েছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পেঁয়াজ এবং তার দাম ভারতে বেশ সংবেদনশীল একটি বিষয়। বিভিন্ন সময়ে পেঁয়াজের দাম নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের নির্বাচনে পেঁয়াজের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব সম্ভবত দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মনে করা হয়, ওই বছর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল পেঁয়াজের চড়া দাম।
আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভালো থাকাটাও পাশের দেশের জন্য কল্যাণকর। সেই কারণেও বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান চলতে থাকে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, পেঁয়াজের ঘাটতির আশঙ্কায় গত ডিসেম্বর মাস থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। গত মাসে সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। তবে ভারত সরকার রাজনৈতিক চ্যানেল মারফত একথা একপ্রকার মেনে নিচ্ছে যে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।
এদিকে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই কৃষকরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। সরকারের তরফে ঘোষণার পর মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। নাসিকের লাসলগাঁও, নন্দগাঁও, পিপলগাঁও এবং উমরানেতে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেন। প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলগুলো পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র।
নিষেধাজ্ঞার মাঝেই রপ্তানি
নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেই ভারত থেকে একাধিক দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছে। সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে, পহেলা মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার এমনটাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তবে পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হলেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, ত্রৈমাসিক ‘কোটা’ হিসাবে মাসে ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে না।
গত মাসে ভারত থেকে তিন হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ত্রৈমাসিক বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, ভারতে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি ভুটানে ৫৫০ টন, বাহরাইনে ৩ হাজার টন এবং মরিশাসে ১২০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববাজারে সাধারণত কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে থাকে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ভারত, পাকিস্তান ও মিসর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় এই দাম বেড়েছে।
দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রতি টন ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলার দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পেঁয়াজ পাঠানোর তথ্য পেয়েছেন রপ্তানিকারকরা। যদি আমরা ভারতীয় টাকার নিরিখে বলি তাহলে এই মূল্য কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছেন।
দশ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে আমদানিকারকরা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা পাবেন। বিবিসি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মুখে সতর্ক ভারত
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত৷ ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের একটি কনস্যুলার ভবনে বিমান হামলায় দুই জেনারেলসহ রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন৷ এই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানিয়েছে৷ ইরান শিগগিরই ইসরায়েল আক্রমণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
এমন অবস্থায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক নাগরিকদেরকে ইরান ও ইসরায়েল সফর না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে৷ কেন্দ্র বলেছে, যারা বর্তমানে ইরান বা ইসরায়েলে রয়েছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে৷ নিজেদের চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ একইসঙ্গে সীমিত করতে হবে গতিবিধি৷
ফ্রান্স এবং রাশিয়া তাদের নাগরিকদের উদ্দেশেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে৷ ইসরায়েলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সেখানে প্রায় ৯০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন৷ ইসরায়েলে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার৷ এপ্রিল, মে মাসে ভারতীয় আরো শ্রমিক, কর্মচারীদের যাওয়ার কথা ছিল৷
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়ায় গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু সরকার দিল্লির কাছে আবেদন জানায়৷ দুই দেশের সরকারি বোঝাপড়ায় ভারত থেকে এপ্রিল ও মে মাসে ছয় হাজার শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা পিটিআই৷ এর অংশ হিসেবে গত ২ এপ্রিল হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ৬৪ জন নির্মাণ শ্রমিক প্রথম দফায় ইসরায়েলে গিয়েছেন৷ চলতি মাসে মোট দেড় হাজার শ্রমিকের ইসরায়েল যাওয়ার কথা৷ তারা লোহার কাঠামো, ইমারত নির্মাণ, টাইলস বসানোর কাজ করবেন৷ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই যাত্রা অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷
সংখ্যায় কম হলেও ইরানেও ভারতীয় নাগরিকেরা রয়েছেন৷ বিশেষত, তেহরানে বহু দশক ধরে ভারতীয়রা বসবাস করছেন৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যোগ রয়েছে সেখানকার ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়ের৷
অসুরক্ষিত আকাশপথ সামরিক সংঘাতের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে ইরান ও ইসরায়েলের আকাশপথ যাত্রীবাহী বিমানের জন্য নিরাপদ নয়৷ তাই এয়ার ইন্ডিয়া ইরানের একাংশের আকাশপথ ব্যবহার করছে না৷ শনিবার লন্ডনগামী একটি বিমানকে ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়৷ এর ফলে ইউরোপগামী বিমানের গন্তব্যে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাড়তি সময় লাগবে৷ যদিও ইরানের দক্ষিণ অংশের আকাশপথ ব্যবহার এখনই বন্ধ করছে না এয়ার ইন্ডিয়া৷
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার মতোই ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে যাচ্ছে৷ তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই সর্তকতা বজায় থাকবে৷ বিশ্ব মিত্র ভারত দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ অন্যদিকে ইরানের সাথেও রয়েছে সুসম্পর্ক৷ দুই বন্ধু দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে দিল্লির অবস্থান কী হবে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অনিন্দ্য মিত্র বলেন, ইসরায়েল ও ইরান দুটিই ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র৷ ফলে তাদের মধ্যে সংঘাত ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে৷ ভারতকে চেষ্টা করে যেতে হবে যাতে দুই পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখা যায় বা সীমিত থাকে৷
২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিকশিত ২০৪৭-এর লক্ষ্য সামনে রেখেছে৷ তাতে ভারত বিশ্ব মিত্র হিসেবে নিজেকে স্থাপন করতে চায়৷
এশিয়ার চলতি উত্তেজনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী বলেন, এটা সার্বিক যুদ্ধ হবে না৷ যদি হয়ও, তা হলে দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে হবে ভারতকে৷ যুদ্ধের আগে দেশগুলির পারস্পরিক আলোচনার সঙ্গে দিল্লির যুক্ত হওয়া প্রয়োজন৷
তার মতে, মিত্রতার মাধ্যমে যুদ্ধের বাতাবরণ সরিয়ে ফেলা উচিত৷ ভারত সেই চেষ্টায় করবে যেহেতু তারা নিজেদের বিশ্ব মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷