• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ইথিওপিয়ায় মিললো ৩৮ লাখ বছর আগের মানুষের খুলি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ৩০ আগস্ট ২০১৯, ২২:৪০
ইথিওপিয়া, আদি মানব
ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন

পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় ৩৮ লাখ বছর আগের এক মানুষের পূর্ণাঙ্গ মাথার খুলি পাওয়া গেছে। ৩৮ থেকে ৪২ লাখ বছর আগের মানুষকে অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেনসিস বলা হয়। এই প্রথম ৩৮ লাখ বছর আগের কোনও মানুষের খুলি পাওয়া গেল। এটি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর সিএনএন।

ইথিওপিয়ার আফার রিজিওনাল স্টেটে গত ১৫ বছর ধরে ওরানসো-মাইল প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলোজিক্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট গবেষণা নিয়ে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন গবেষকরা।

এই খুলির ওপরের চোয়াল পাওয়া গিয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। এরপর খুলিটির অন্যান্য অংশগুলো খুঁজে বের করার আশায় অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়।

বুধবার যুক্তরাজ্যের ন্যাচার নামের বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে খুলিটির বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং এটি কোথায় পাওয়া যায় তা প্রকাশ করা হয়েছে। এটিকে এমআরডি বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির ফিজিক্যাল অ্যানথ্রোপোলোজিক্যালের কিউরেটর জোহানেস হেইলে-সেলাসি বলেন, এটি দেখে আমি আমার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারিনি।

তিনি বলেন, এটি ছিল কোনও কিছু আবিষ্কার করতে পারার আনন্দঘন মুহূর্ত এবং এর ফলে একটি স্বপ্ন সত্য হয়েছে। এটি ছিল আমাদের খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নমুনাগুলোর একটি।

এটি ২৯ থেকে ৩৯ লাখ বছর আগে আফ্রিকায় বসবাসকারী এক মানুষের মাথার খুলি। ২৯ থেকে ৩৯ লাখ বছর আগের মানুষদেরকে অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস বলা হয়। এর আগে ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ার যেখানে লুসি নামের অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিসের খুলি পাওয়া যায়, সেখান থেকে মাত্র ৩৪ মাইল উত্তরে পাওয়া গেছে এমআরডিকে।

জিওলজিস্ট, প্যালিওবোটানিস্ট ও প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলোজিস্টদের একটি আন্তর্জাতিক দল যেখানে খুলিটি পাওয়া গেছে, সেখানকার পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিত্তিতে এটির বয়স নির্ণয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্তরবিন্যাস ও পললবিদ্যার অধ্যাপক বেভারলি সেলরের মতে, এটি পুরুষের খুলি। মৃত্যুর পর মরদেহটি একটি নদীর পাশে কবর দেয়া হয়।

এই অ্যানামেনসিস সম্ভবত নদীটির কাছাকাছি বসবাস করতো। নদীটি গাছগাছালিতে ঘেরা ছিল। এটি থেকে বেশকিছু দূরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গুল্মজাতীয় গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের জিওলজিস্ট নাওমি লেভিন বলেন, একটি বড় হ্রদের কাছাকাছি শুষ্কভূমিতে বাস ছিল এমআরডির। আমরা তখনকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার চেষ্টা করব।

এর আগে গবেষকদের ধারণা ছিল, অ্যাফারেনসিসদের আগে পৃথিবীতে বসবাস করতো অ্যানামেনসিসরা। একাধিক বিচ্ছিন্ন হাড়ের টুকরো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান তারা।

কিন্তু এই খুলি পাওয়ার পর মনে হচ্ছে পৃথিবীতে অ্যানামেনসিসদের পর অ্যাফারেনসিসদের আগমন ঘটে। কিন্তু উভয় প্রজাতি পৃথিবীতে কমপক্ষে এক লাখ বছর সহাবস্থান করেছে।

এতদিন ধরে মানুষ একটি রৈখিক গঠন প্রক্রিয়ায় বিবর্ধিত হয়েছে বলে যে ধারণা প্রচলিত ছিল, সেটিকে এই এমআরডি খুলি রীতিমতো প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষকদের মতে, তারা এর আগে কখনোই এমন খুলি দেখেননি। এই খুলির সঙ্গে পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার মনুষ্য প্রজাতির তুলনা করা যেতে পারে। তবে কতটা মিল আছে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর ইভল্যুশনারি অ্যানথ্রোপোলোজির গবেষক স্টেফানি মেলিলোর মতে, পূর্ব আফ্রিকায় ৪০ লাখ বছর আগে বসবাসকারী অস্ট্রালোপিথেকাস জেনাসদের মুখ ছিল অনেক বড়। এই এমআরডি খুলির সঙ্গে আমাদের অব্যবহিত পূর্বপুরুষদের মুখের অনেক মিল আছে। বিশেষ করে অস্ত্র ব্যবহারকারী এবং খাদ্য গ্রহণকারী আদি মানবদের মুখের সঙ্গে এই খুলির মিল আছে।

অস্ট্রালোপিথেকাস জেনাসদের সবচেয়ে পুরোনো সদস্য হিসেবে পরিচিত অ্যানামেনসিসদের একটি মিশ্র আকর্ষণীয় গঠন ছিল। তাদের মুখ লম্বা এবং চোখের নিচের হাড় সামনের দিকে প্রসারিত ছিল।

মেলিলো বলেন, এই বিশাল মুখের মানুষ শক্ত খাবার খেত। তাদের মুখের হাড় শক্ত খাবার চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী ছিল। এই খুলির দাঁতগুলো বেশ বড় হলেও অ্যাফারেনসিসদের তুলনায় ছোট।

হেইলে-সেলাসির ধারণা হলো অস্ট্রালোপিথেকাসদের তুলনায় পরবর্তী হোমো প্রজাতির মানুষেরা অনেক অস্ত্র ব্যবহার করত, তারা মাংস খেত এবং নিজেদের আবাসস্থলের কাছাকাছি থাকত।

এমআরডি খুলিতে একটি আদিম ও অদ্ভুত মুখাবয়ব এবং বিশেষ গঠনের মিশ্রণ আছে, যা আমি কখনোই প্রত্যাশা করিনি বলেও জানান ক্লিভল্যান্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির এই কিউরেটর।

মেলিলো বলেন, এখন মনে হচ্ছে ৬০ লাখ বছর আগের এই পূর্বপুরুষ এবং লুসির মতো ২০ বা ৩০ লাখ বছর আগের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আমাদের অনেক ব্যবধান আছে।

তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দিকগুলোর একটি হলো নতুন আবিষ্কারটি কিভাবে এই দুই মনুষ্য প্রজাতির অঙ্গসংস্থানসংক্রান্ত ব্যবধানের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে।

অ্যানামেনসিস শনাক্তের মাধ্যমে গবেষকরা বুঝতে পারে কিভাবে আদিম মানুষ বিবর্ধিত হয়েছে। এখন বেলোহডেলি ফ্রন্টাল পরিচিত ৩৯ লাখ বছর আগের খুলির সঙ্গে এমআরডিকে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

গবেষকরা অ্যানামেনসিস দেখতে কেমন ছিল জানেন বলেই বেলোহডেলি ফ্রন্টাল এবং লুসিকে অ্যাফারেনসিসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। উভয় প্রজাতি কমপক্ষে এক লাখ বছর পৃথিবীতে সহাবস্থান করেছে।

হেইলে-সেলাসি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমরা মনে করতাম আমাদের বিবর্তন হয়েছে একটি রৈখিক প্রক্রিয়ায়। এখন প্রশ্ন হলো পিতৃ প্রজাতির উপস্থিতিতে একটি নতুন প্রজাতি কিভাবে এলো।

তিনি বলেন, অবশ্য একাধিক ছোট জনগোষ্ঠী অনেক পরিবর্তনের মধ্যেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হতেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। তারা বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকতেই পারে। অ্যানামেনসিসরা ও অ্যাফারেনসিসরা কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করত। তাই জিওলজিস্টরা এক্ষেত্রে তাদের বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর তাদের বসবাসের এলাকাটি সক্রিয়, বৈচিত্র্যময় ও পাহাড়ে পরিপূর্ণ ছিল। এছাড়া ফাটলের কারণে অ্যানামেনসিসদের আবাসস্থলটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

মেলিলো বলেন, অ্যানামেনসিসদের পর অ্যাফারেনসিসদের আগমন ঘটেছে ভাবতেই অভ্যস্ত আমরা। সাধারণত একটির সঙ্গে আরেকটির পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের সম্পর্ক ছিল বলে মনে করি আমরা।

তিনি বলেন, এখন স্পষ্ট যে আফারে তারা কিছু সময় পাশাপাশি বসবাস করত। এটি প্রচলিত বিবর্তন প্রক্রিয়াকে বদলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন তারা কি খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা করত?

এই দুই প্রজাতি একে অন্যের সঙ্গে মিশেছিল কিনা তা তর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু গবেষকরা এখন এই আদি মানব সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আগ্রহী এবং সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেলিলো বলেন, অ্যানামেনসিস নামের একটি প্রজাতির কথা অনেক আগেই জানা গেছে। কিন্তু এই প্রজাতি সম্পর্কে বেশিকিছু জানা যায়নি। এবার অ্যানামেনসিসদের সম্পর্কে আরও জানা যাবে।

কে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh