• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো জোটবদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ মে ২০১৯, ১১:০৭
সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাসিন্ডা আর্ডার্ন ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

ইন্টারনেট থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক সহিংস কনটেন্ট সরাতে একটি সনদে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের বৃহৎ সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার। খবর ডয়চে ভেলের।

মেধাসত্ব, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একে অন্যের পেছনে লেগে থাকলেও এ নিয়ে তাদের একমত হতে পারাটাকে বড় ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ‘ক্রাইস্টচার্চ কল' নামের এই সনদে স্বাক্ষর করেছে সাতটি প্রধান ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এই তালিকায় আছে- ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, অ্যামাজন, টুইটার, মাইক্রোসফট ও ডেইলিমোশন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হামলার লাইভ ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তাৎক্ষণিকভাবে সেই ভিডিও সরাতে না পারায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নও। এ বিষয়ে তিনি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।

বুধবার জাসিন্ডা আর্ডার্ন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই সনদ স্বাক্ষরে উপস্থিত ছিলেন। নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটা অভুতপূর্ব ঘটনা যে, আমরা এখানে সরকার এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পেরেছি।

ব্রিটেন, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, জর্ডান, ইউরোপীয় কমিশন, সেনেগাল এবং ইন্দোনেশিয়ার সরকারও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও ভারতও এতে সমর্থন জানিয়েছে।

কী বলা হয়েছে সনদে

সনদে স্বাক্ষর করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে তারা ইন্টারনেট থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক সহিংস কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। এই ধরনের কনটেন্ট চিহ্নিত করার জন্য নতুন নতুন অ্যালগরিদম নিয়ে তারা কাজ করবে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের জন্য কনটেন্ট আপলোডের নতুন নীতিমালাও নিয়ে আসা হবে।

ঘৃণা ছড়ায় এমন কনটেন্ট চিহ্নিত করে তা সরাতে ‘মেশিন লার্নিংয়ের’ মাধ্যমে নতুন টুলস উদ্ভাবনেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর কোনেও কিছু ইন্টারনেটে ছাড়ার পর সাথে সাথেই যেন তা ধরা পড়ে সে বিষয়েও জোর দেয়া হয়েছে।

ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত ছবি বা ভিডিও চিহ্নিত করা হবে। তার উপাত্তগুলো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সবাই ব্যবহার করতে পারবে এমন একটি ড্যাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে সেগুলো এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

নিয়ম বহির্ভূত কোনেও কিছু যাতে ভাইরাল না হয়ে যায়, সেজন্য ব্যবহারকারীরা কী দেখতে পান তার অ্যালগরিদম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে এই সনদে। প্রতিষ্ঠানগুলো ‘গ্লোবাল ইন্টারনেট ফোরাম টু কাউন্টার টেররিজম’ নামের আলাদা একটি উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৭ সালে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে অপব্যবহার রোধে ফেসবুক, মাইক্রোসফট, টুইটার ও ইউটিউব এটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ফেসবুকের উদ্যোগ

এই সনদ স্বাক্ষরের কয়েক ঘন্টা আগেই লাইভ স্ট্রিমিং বা সরাসরি ভিডিও প্রচারের ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। এক ব্লগ পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, নিউজিল্যান্ডে নৃশংস হামলার পর আমাদের মাধ্যম ব্যবহার করে ক্ষতি করা কিংবা ঘৃণা ছড়ানোর বিষয়গুলো রোধের উপায় নিয়ে পর্যালোচনা করেছি।

ওয়ান স্ট্রাইক নামে প্রতিষ্ঠানটি লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন একটি নিয়ম চালু করেছে। এর ফলে কোনও ব্যবহারকারী সবচেয়ে গুরুতর নীতিগুলোর কোনোটির বরখেলাপ করলে নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য তাকে লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় ৭৫ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।

ফেসবুকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জাসিন্ডা আর্ডার্ন। এটিকে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেব উল্লেখ করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যাতে সন্ত্রাসীদের জন্য বিকৃত একটি মাধ্যমে পরিণত না হয় সেজন্য বিভিন্ন দেশের সরকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে বলেও জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh