• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মিয়ানমারের জঙ্গল থেকে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০৮

মিয়ানমারের জঙ্গল থেকে হংকংয়ের রাস্তায়, পুরো এশিয়াজুড়ে পুলিশ ভয়াবহ এক মাদক মেথামফেটামিনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। কিন্তু সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, এই লড়াইয়ে তারা হেরে যাচ্ছে।

সাধারণত মেথ ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে তৈরি ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবা ট্যাবলেটের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। তাই এসব মাদকের উৎপাদনও নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বাংলাদেশ ও ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলোর সরকার ভয়াবহ এই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আর এতে প্রাণ হারিয়েছে শত শত মানুষ।

কিন্তু মেথ শুধু গরিব এবং সমাজের নিচু লোকেরাই ব্যবহার করে না। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ অফিসের (ইউএনওডিসি) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অপারেশন্স-র জেরেমি ডগলাস বলেছেন, মেথ এশিয়ায় আর বৈষম্যপূণ্য নয়; বরং শ্রেণি, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে পুরো অঞ্চলজুড়ে এটি প্রাধান্য বিস্তারকারী মাদকে পরিণত হয়েছে।

ডগলাস বলেন, আমার ১৬ বছরের চাকরিজীবনে মাদকের এমন চাহিদা আর কখনও দেখিনি। কোনও পরিস্থিতিই তুলনা করা যায় না, কিন্তু এটি সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় ও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে মাদকের আকস্মিক বিস্তার ঘটেছে যা আঞ্চলিক মাদক গ্রুপগুলোর জন্য সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।

থাইল্যান্ড, লাওস ও মিয়ানমারের সঙ্গমস্থলে একটি আইনবর্জিত সীমান্ত এলাকা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের গভীর জঙ্গলে অধিকাংশ মেথ উৎপাদিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখানে লুকিয়ে মাদক উৎপাদন সহজ এবং কম সময়ের মধ্যে অন্যত্র চালান করা যায়।

এদিকে বিশ্ববাজারকে সংযোগ করতে চীনের ট্রিলিয়ন-ডলারের প্রকল্পের জন্য যে নতুন রাস্তা ও অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে; মানুষজনের প্রবাহ এবং বৈধ পণ্যের আড়ালে মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে তার পুরো ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

আর মাদক ব্যবসার এই লাখ লাখ ডলার জটিল আন্তর্জাতিক স্কিমে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রায় যেসব দেশে মানি লন্ডারিং আইন শিথিল সেসব দেশের প্রথম সারির কোম্পানিকে ব্যবহার করে এসব গ্রুপ।

অস্ট্রেলিয়া স্ট্র্যাটিজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে কাজ করা জন কোয়নে বলেন, মেটামফেটামিন উৎপাদনের জন্য এটা একটা নিখুঁত ঝড়। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের কৌশলগত গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক এই প্রধান বলেন, এটা দক্ষিণপূর্ব এমন একটা অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে যা এক সময় মেটামফেটামিনের মহামারিতে পরিণত হবে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে জব্দ করা ব্যাপক পরিমাণ মেথের উৎস মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশ, যেখানে মিলিশিয়া ও ওয়ারলর্ডদের কথাই চূড়ান্ত।

মিলিশিয়া ও ওয়ারলর্ডরা ওয়া উপজাতি জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে বহু বছর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের সঙ্গে প্রতিবেশি শান প্রদেশের এই ওয়া জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতিগত মিল ছাড়াও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।

শান প্রদেশে পপি উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বল্পতা রয়েছে। বহু বছর ধরেই, বিশ্বের অবৈধ হিরোইন ও আফিমের প্রধান উৎস এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল।

মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল

বহুদিন ধরেই পশ্চিমা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মাদক উৎপাদন থেকে পাওয়া মুনাফা দিয়েই মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) ও ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ)। ধারণা করা হয়, ইউডব্লিউএসএ-র প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। ২০১৬ সালে ইউডব্লিউএসএ ওই অঞ্চলে সাংবাদিকদের ঘুরে দেখার বিরল সুযোগ দেয়। ওইসময় অবশ্য মাদক চোরাচালানের বিষয়টি অস্বীকার করে তারা।

আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে গেলে, ইউডব্লিউএসএ যে আর হেরোইন উৎপাদন করছে না তাদের এমন দাবি প্রথম দৃষ্টিতে সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে হেরোইনের উৎপাদন ও বিতরণ কমতির দিকে।

কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের হেরোইন ছেড়ে দেয়ার কারণ সম্ভবত নতুন, সস্তায় উৎপাদনযোগ্য বিকল্প: মেটামফেটামিনের প্রতি আগ্রহ।

ডগলাস বলেন, পুরো অঞ্চল থেকে আমরা যে তথ্য-প্রমাণ পাচ্ছি তা একই গ্রুপ, একই লোকেশনের দিকে নির্দেশ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেথ ব্যবসায় ইউডব্লিউএসএ-র জড়িয়ে পড়ার পেছনে বাজারের চাহিদা একটা কারণ কিন্তু মুনাফা ও উৎপাদন সহজ হওয়ার কারণেও তারা উৎসাহিত হয়েছে।

মেটামফেটামিন একটি সিনথেটিক মাদক। এটি রাসায়নিক ব্যবহার করে ল্যাবে তৈরি করা হয় এবং হেরোইনের ক্ষেত্রে যেমন পপির মতো কোনও অর্গানিক শস্যের চাষাবাদ করতে হয়, এটিতে তেমনটা প্রয়োজন নেই।

১৯৯৫ সালে একটি পপি ক্ষেতের সামনে ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির একজন সেনা

এসব ল্যাব ত্রিপল দিয়ে ঢেকেই তৈরি বা খুব সহজেই স্থানান্তর করা যায়। কিন্তু পপি ক্ষেতের ক্ষেত্রে এমনটা করার সুযোগ নেই।

মেথ একবার প্রস্তুত হয়ে গেলে, পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেটির পরিবহন। বহু বছর ধরে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং অনুন্নত জায়গাগুলোর একটি ছিল; কিন্তু বিশ্বকে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির সঙ্গে সংযোগস্থাপন করতে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ-র জন্য যে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে তাতে মাদক ব্যবসায়ীদের সেই চ্যালেঞ্জ দূর হয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমারকে নিয়ে বেইজিংয়ের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের ভূমি দিয়ে ঘেরা ইউনান প্রদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বন্দরনগরীগুলোর সংযোগ স্থাপনের জন্য মিয়ানমারে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বেইজিং।

কোয়নে বলেন, এ ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি অনিচ্ছাকৃত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে যে শান রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উৎপাদিত মেথ পুরো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পরিবহন করা চোরাকারবারিদের জন্য এখন খুব সহজ হয়ে গেছে।

‘এতে করে ব্যাপক পরিমাণে, মানুষজনের বৈধ জিনিসপত্রের ভেতর মাদক লুকিয়ে তা মিয়ানমার থেকে লাওস পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে’, বলছিলেন কোয়নে।

উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশে উৎপাদিত মেথ ক্রিস্টাল ও ট্যাবেলেট আকারে জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। গত ডিসেম্বরে পশ্চিমাঞ্চলীয় অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ ৮০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থের মেথ জব্দ করে, যা শান প্রদেশে থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

চলতি বছর থাইল্যান্ড, চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ কয়েক ডজন অভিযানে বিপুল পরিমাণ মেথ জব্দ করেছে।

ডগলাস বলেন, আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, মাত্র পাঁচ মাসে মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ মেথ জব্দ করা হয়েছে, তা ২০১৭ সালে জব্দ হওয়া পরিমাণের চেয়েও বেশি।

এই বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হচ্ছে তাতে মনে হতে পারে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই লড়াইয়ে জয়ী হচ্ছে; কিন্তু এরমধ্যে আরও একটি জিনিস বেরিয়ে আসছে, তা হলো কতটা ব্যাপক পরিমাণে মেথ পরিবহন করা হচ্ছে।

কোয়নে আরও একটি সম্ভাবনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা মেথের ‍উৎপাদন মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ফলে উৎপাদন খরচও কমে গেছে, তাই ব্যাপক পরিমাণে মাদক জব্দ করা হলেও তাতে মাদক ব্যবসায়ীরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না।

তিনি বলেন, তাদের বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার পরও তারা ঠিকই মুনাফা অর্জন করছে।

থাইল্যান্ডে জব্দ করা মাদক পরীক্ষা করে দেখছে দেশটির পুলিশ বিভাগের কেমিস্টরা

কিন্তু মাদক ব্যবসা করে যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা পাচ্ছে এসব গ্রুপ, সেই অর্থ কোথাও না কোথাও লুকাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অবৈধভাবে অর্জিত এসব অর্থ লুকাতে মাদক ব্যবসায়ী জটিল আর্থিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুপরিচিত, অন্তত স্বীকৃত নামটা হচ্ছে ধনশালী জুয়ারি ঝাও উই। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিযোগ লাওসে নিজের ক্যাসিনোর মাধ্যমে মেথ বিক্রি করে ইউডব্লিউএসএ আয় করা অর্থপাচারে সাহায্য করছেন ঝাও।

যেহেতু ক্যাসিনোতে নগদে লেনদেন হয়, তাই অর্থপাচারের জন্য ক্যাসিনোকেই বেছে নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে ইউএনওডিসি’র ডগলাসের ভাষায় একটি ‘অপরাধী ক্ষুদ্র-রাষ্ট্র’র ভেতর ক্যাসিনো চালানোয় বাড়তি সুবিধা পান ঝাও।

ডগলাস বলেন, কেননা সেখানে তিনি সামন্তপ্রভুর মতো কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত এলাকায় ক্যাসিনো চালানোর জন্য লাও সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের ইজারা নিয়েছেন ঝাও। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও লাওসের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া মেকং নদীর তীরঘেঁষে এই জোন অবস্থিত। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে ঝাওয়ের কিংস রোমানস ক্যাসিনো।

লাও সরকারের সঙ্গে ঝাওয়ের ওই চুক্তি অনুযায়ী, নিজের তৈরি করা আইন, নিয়ম এবং বিধিনিষেধের অধীনে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

২০১১ সালে ঝাও চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ এবং কম্বোডিয়ার বিদেশনীতি মেনে নিয়েছেন।

আপতদৃষ্টিতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যদিও গত জানুয়ারিতে মার্কিন অর্থ বিভাগ ঝাও এবং তার ক্যাসিনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ঝাও শিথিল বিধিনিষেধ ব্যবহার করে ‘হেরোইনের মজুদ ও বিতরণ, মেটামফেটামিন এবং প্রতিবেশী বার্মায় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির মতো অবৈধ নেটওয়ার্কের অন্যান্য মাদককে’ সহজলভ্য করছেন।

ঝাও জোর দিয়েই বলেছেন যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’।

মার্কিন অর্থ বিভাগের ওই নিষেধাজ্ঞার পর ফেব্রুয়ারিতে ঝাও বলেন, অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের ওপর মার্কিন সরকারের একতরফা নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক এবং হাস্যকর আচরণ এবং এর অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। এ ধরনের আচরণের কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে বহু বিনিয়োগকারী ও পরিদর্শকদের মধ্যে অযথা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, কিংস রোমানস গ্রুপের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কঠোরভাবে আইন এবং চুক্তি মেনে পরিচালিত হয়। অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা কোনও কারণ বা অনুপ্রেরণায় আমাদের নেই। উল্টো অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রতিরোধে আমরা লাওস সরকারকে সহযোগিতা করছি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিএনএনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি লাওসের পরিকল্পা ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ‘এই মামলা সংক্রান্ত কার্যক্রম চলছে’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি এই নিউজের জন্য সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

সিএনএনের এই নিউজ নিয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে গণমাধ্যমটির ডাকে সাড়া দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগও। তবে মার্কিন অর্থ বিভাগের অভিযোগ ঝাওয়ের ক্যাসিনোর আসল কগ বা চাকার দান্ত হাজারের বেশি কিলোমিটার দূরে হংকংয়ে।

ওই চাকার দান্তের নাম হচ্ছে কিংস রোমানস ইন্টারন্যাশনাল (হংকং) কো. লিমিটেড। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই প্রতিষ্ঠান এবং ঝাওয়ের ওপর মার্কিন অর্থ বিভাগ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মার্কিন অর্থ বিভাগ এবং হংকংয়ের করপোরেট রেজিস্ট্রির তথ্যানুযায়ী শহরের ব্যস্ত ওয়ান চাই এলাকার উ চাং হাউজ টাওয়ারে কিংস রোমানস ইন্টারন্যাশনাল (হংকং) কো. লিমিটেডের অফিস অবস্থিত।

ওই অফিসে ঠিক কী ঘটে সেটি অবশ্য নির্দিষ্টভাবে জানায়নি মার্কিন অর্থ বিভাগ। তবে নোংরা অর্থ স্থানান্তরের কুখ্যাত হাব হিসেবে হংকংয়ের পরিচিত রয়েছে, যেটি এমনকি শহরের কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যেই স্বীকার করে।

হংকং তহবিল কর্তৃপক্ষ (এইচকেএমএ)-র ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ আর্থার ইউয়েন বলেছেন, এখানে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হচ্ছে- অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ, মানুষ, পণ্য এবং তথ্য; সুপ্রতিষ্ঠিত আইনি ব্যবস্থা; উন্নত বাজার অবকাঠামো এবং অত্যাধুনিক পেশাদারমূলক সেবার কারণে আমাদের বাজার অপরাধীদেরও আকৃষ্ট করে যারা অর্থ লুকাতে বা স্থানান্তর করতে বা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চান। গত এপ্রিলে অ্যাসোসিয়েশন অব সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্টস আয়োজিত এক কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে ইউয়েন এসব কথা বলেন।

সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী উ চাং হাউজের ৩৬ তলায় কিংস রোমানসের অফিস থাকার কথা, কিন্তু, সিএনএন ওই অফিস পরিদর্শনে গিয়ে সেটির কোনও চিহ্ন খুঁজে পায়নি।

ওই ভবনের ডিরেক্টরি ঘেঁটে দেখা গেছে, সুয়েন ওয়েই হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই অফিস স্পেস ব্যবহার করছে। ওই জায়গার আসল মালিক সুয়েন ওয়েই হোল্ডিং লিমিটেড সেটা আবাসিক রেকর্ড থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

যদিও সুয়েন ওয়েই এবং কিংস রোমানসের এটি ছাড়া আরও কয়েকটি একই ঠিকানা ব্যবহারের ঘটনা রয়েছে। মাদক বিক্রির করে মুনাফা পাচারের জন্য ইউডব্লিউএসএ সুয়েন ওয়েইর সাহায্য নেয় এমন অভিযোগে ২০০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠাতা ও এর দুজন পরিচালকের ওপর মার্কিন অর্থ বিভাগ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা সংস্থা স্ট্রাটফরের একজন বিশ্লেষক ইভান রিস বলেন, ইউডব্লিউএসএ হংকংকে ব্যবহার করবে এটা পুরোপুরি অর্থবহ। কেননা অবৈধ আইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মেশানোর তাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং তাই তাদের কাজ করার জন্য হংকং উপযুক্ত জায়গা।

হংকংয়ের করপোরেট রেজিস্ট্রির তথ্যানুযায়ী ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হং প্যাং জেমস অ্যান্ড অ্যাম্প; অ্যাম্প; জুয়েলারি (এইচকে) কো. লিমিটেড এখনও সক্রিয় এবং ৩৬০৫ উ চাং হাউজে এটির অফিস অবস্থিত।

এত কিছু পরও সুয়েই ওয়েই অনেকটা প্রকাশ্যেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্ধকার হলওয়ে ধরে এগিয়ে গেলে অফিসের প্রবেশমুখে কেবল সুয়েই ওয়েই’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান হবে। একটি খালি সেক্রেটারি ডেস্কের ওপর উজ্জ্বল বড় অক্ষরে প্রতিষ্ঠানটির নাম লিখা রয়েছে। অফিসে অলংকৃত কাঠের ভাস্কর্য এবং মার্বেল ফ্লোর দিয়ে সজ্জিত, তবে অর্ধেক বাতি নেভানো এবং কাউকেই দেখা যায়নি।

কিন্তু এমন একটা প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন খবরে বেশ কয়েকজন নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ সিএনএনের কাছে তাদের বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি-র একজন নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ পিটার হারেল বলেন, এক্ষেত্রে তারা অন্তত (নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রতিষ্ঠান) অফিসের সাইন পুনরায় রঙ করার চেষ্টা করেন, এমনকি যদিও ঠিকানা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অপরিবর্তিতও থাকে।

উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জব্দকৃত একটি মেথ ল্যাবের ছবি শেয়ার করে মিয়ানমারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ইকোনোমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স-র কাউন্টার থ্রেট ফিন্যান্স অ্যান্ড সেকশনের সাবেক ডেপুটি অ্যাসিসেন্ট সেক্রেটারি হারেল আরও বলেন, নাম পরিবর্তন না করেই তারা ১০ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা খুবই নির্লজ্জ।

সিএনএন অফিসের ডোরবেল বাজালে একজন মাঝবয়সী, চশমা পরা ব্যক্তি হাজির হন। তিনি বলেন, আগে প্রতিষ্ঠানটি পান্না ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল কিন্তু এখন তারা শেষকৃত্যানুষ্ঠানের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তিনি সিএনএনকে নিজের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে তিনি কোম্পানিটিতে একজন অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার ছিলেন। মাঝবয়সী ওই ব্যক্তি বলেন, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সোয়েন ওয়েই’র বর্তমান দুই সহ-পরিচালককে তিনি চিনতেন।

তিনি বলেন, এই দুজন চীনের মূল ভূখণ্ডে থাকেন এবং বছরে কয়েকবারের জন্য আসেন, দুদিন করে অবস্থান করেন। তিনি ওই দুই সহ-পরিচালকের কাছে সিএনএনের বার্তা পৌঁছে দিতে সম্মত হন, যদিও তারা তাতে সাড়া দেয়নি। কয়েক দিন পর সিএনএন ফোন করলে ওই ব্যক্তি জানান, দুই সহ-পরিচালক সিএনএনের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নয়।

এদিকে উ চাং হাউজ সংযোগের ব্যাপারে জাতিসংঘের ডগলাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জোরারোপ করে বলেন, প্রত্যেকটা ঘটনা আলাদা এবং একটি নির্দিষ্ট হোল্ডিং কোম্পানির বয়স নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারেন না।

ডগলাস বলেন, যদি ওই হোল্ডিং কোম্পানি ১০ বছর ধরে মাদক ব্যবসার ফ্রন্ট কোম্পানি হয়ে থাকে তাহলে এটা খুবই গুরুতর এবং উদ্বেগজনক এবং কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে তদন্ত করা উচিত।

তিনি বলেন, যদি সংযোগ পাওয়া যায় এবং সংঘবদ্ধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে গুরুতর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কীভাবে একটি ফ্রন্ট কোম্পানি এতদিন ধরে প্রকাশ্যে হংকংয়ে কাজ চালাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

আরও পড়ুন :

এ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh