রহস্য বাড়াচ্ছে পিরামিডের নিচের ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড টানেল’
পিরামিড শব্দটি শুনলেই রহস্যে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে মন। প্রাচীন আমলের কত না জানা কথা লুকিয়ে আছে পিরামিডের প্রতি স্তরে। আর এবার মেক্সিকোতে এমনই এক পিরামিডের নিচে গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান মিলেছে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড টানেল’।
মেক্সিকো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যানথ্রোপলজি অ্যান্ড হিস্ট্রি এবং ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর জিও ফিজিক্সের গবেষকরা কম্পিউটার চালিত টোমোগ্রাফির মাধ্যমে এর অবস্থান শনাক্ত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের নিচে গাছপালা, মানুষ, পশুপাখিসহ আলাদা একটা জগৎ থাকার সম্ভাবনা আছে।
প্রায় ২৬ ফুট গভীর সুড়ঙ্গ আছে এই পিরামিডের নিচে। এর ব্যাস প্রায় ৪৯ ফুট। এই পিরামিডকে বলা হয়, ‘চাঁদের পিরামিড’। এক দল ইতিহাসবিদের মতে, এই গোপন সুড়ঙ্গ উপাসনার জন্য ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন আমলের ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’র ধারণা ছিল এরকম। কোনও অপরাধ সংঘটিত করার জন্য এগুলো তৈরি করা হতো না।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে সুড়ঙ্গটি আবিষ্কৃত হলেও গবেষকরা জানিয়েছেন সম্প্রতি। এটি মেসোআমেরিকা সভ্যতার সূত্রপাতের ইতিহাস জানাবে বলে মনে করছেন তারা। কৃষি সভ্যতার ইতিহাসের আরও নতুন তথ্য উঠে আসবে এর মাধ্যমে।
সুড়ঙ্গের ভেতরে যতটুকু যাওয়া সম্ভব হয়েছে, তাতে পাওয়া গেছে মানুষের মাথার খুলি, ফুলের পাপড়ির অবশেষ, গয়না ও সবুজ পাথর বসানো নানা সামগ্রী। এই একই জিনিস পাওয়া যায় পিরামিডের ভেতরে সমাধিতেও। তবে সামরিক কোনও জিনিসপত্র মেলেনি। ফলে বাইরের জগতের কাছে এর অস্তিত্ব অজানা ছিল বলেই মনে করছেন নৃতত্ত্ববিদরাও।
‘পিরামিড অব দ্য মুন’-এর নিচে রহস্যজনক সুড়ঙ্গ এতটাই নিখুঁতভাবে তৈরি যে, বর্তমান উচ্চপ্রযুক্তির যুগেও তা চোখ কপালে তোলে। গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান, এই সুড়ঙ্গের ভেতর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হত, যা দেখতো প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
তেওতিহুয়াকান নামে মেক্সিকোর এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা কে তা জানা যায়নি। তবে এটাই ছিল শহরের সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। ৩০০ শতকে এটি তৈরি হয়। এক দল গবেষকের দাবি, একজনই এই সভ্যতার শাসক ছিল, যাকে ‘স্পিয়ার থ্রোয়ার আউল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আচমকা এই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর কারণ এবার সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রায় দুই লাখ লোক আচমকা কিভাবে উধাও হয়ে যায় তাও জানা যাবে। তবে এই ‘পিরামিড অফ দ্য মুন’ বা চাঁদের পিরামিড, এই নাম দিয়েছিলেন অ্যাজটেকরা। গবেষকদের মতে, সুড়ঙ্গের ভেতরের কেন্দ্রটি হলো ‘প্লাজা দে লা লুনা’ অর্থাৎ চাঁদের বাড়ি।
১৩০০ সাল নাগাদ অ্যাজটেকরা এই অঞ্চলে আসে। পিরামিডগুলোর নাম তাদেরই দেয়া। প্রাচীনকালে বলা হতো, এখানে মানুষ ঈশ্বরত্ব লাভ করে। অ্যাজটেক সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি। ১৭ শতক নাগাদ প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর সন্ধান পাওয়া শুরু হয়।
পিরামিডটিতে(তেওতিহুয়াকান প্লাজা অব দ্য মুন) প্রায় ১২টি ছোট পিরামিডের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এটি একেবারে সূর্যের পিরামিডের বিপরীতে অবস্থিত। ইতিহাসবিদদের দাবি, এখানে মানুষ ও পশু বলি দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।
পিরামিডের মাটিতে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে সেখানে থাকা পদার্থগুলোর ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকেই সুড়ঙ্গটির ২ডি ও ৩ডি গঠন তৈরি করা হয়।
১৯৯৯ সালে এই পিরামিডে খননের সময় পাওয়া যায় বেশকিছু পশুপাখি ও নর কঙ্কাল। ১০০ থেকে ২০০ শতকের মধ্যে তাদের সমাহিত করা হয় বলে অনুমান ইতিহাসবিদদের।
পিরামিড অব দ্য মুন’র পাদদেশ থেকে যে রাস্তাটি গিয়েছে, তাকে বলা হয় ‘অ্যাভিনিউ অব ডেড’। সূত্র আনন্দবাজার
আরও পড়ুন :
কে/এসএস
মন্তব্য করুন