ইথিওপিয়ায় জরুরি অবস্থা, গ্রেপ্তার ১১ হাজার
ইথিওপিয়ায় গেলো মাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অরোমো ও আমহারা থেকে অধিকাংশ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩শ’ ৪৭ জন নারীও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের ৬টি কারাগারে রাখা হয়েছে।
দেশটির রাজধানী আদ্দিস আবাবায় এখনো বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট সার্ভিস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জরুরি অবস্থায় বিরোধী দলের কর্মসূচি, কারফিউ ও রাজধানীর বাইরে কূটনীতিকদের ৪০ কিলোমিটারের বেশি পথ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবার কূটনীতিকদের দেয়া ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। রাজনীতি, ব্যবসা ও মানবাধিকার ইস্যুতে আন্দোলন শুরুর পর গেলো অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ৬ মাসের জরুরি অবস্থা জারি হয় ইথিওপিয়ায়।
ডিএইচ
মন্তব্য করুন
চাকরি ছেড়ে বসের সামনে ঢোল বাজিয়ে কর্মীর নাচানাচি
কর্ম পরিবেশকে বিরক্তিকর উল্লেখ করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ভারতের পুনের এক ব্যক্তি। বিক্রয় সহযোগী হিসেবে কাজ করা অঙ্কিত চাকরি ছেড়েই বসের সামনে ঢোল বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। এ ঘটনার দৃশ্য ভিডিও করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেন তারই বন্ধু জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আনিশ বাগাত।
ওই কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলেন, এ ধরনের ঘটনা সামনে আরও দেখা যাবে, কর্ম পরিবেশ দিন দিন অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। কারণ কর্মপরিবেশ ভালো না হলে চাকরি করা কঠিন।
বাগাত বলেন, তিন বছর ধরে কর্মপরিবেশ নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন অঙ্কিত। ইনস্টাগ্রামে ওই ভিডিও শেয়ার করে অঙ্কিত বলেন, বসের কাছে আমার কোনো সম্মান ছিল না। মধ্যবিত্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে এতদিন চাকরি করতে হয়েছে।
অঙ্কিত তার অফিসের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বন্ধু বাগাতের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাগাতই তাকে অফিসের বাইরে ঢোল বাজানোর পরামর্শ দেয়। যখন ওই অফিসের ম্যানেজার বাইরে বের হন তখনই অঙ্কিতের বন্ধুরা ঢোল বাজাতে শুরু করে। ম্যানেজার এ দৃশ্য দেখে রেগে গিয়ে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
হারাপ্পা ইনসাইডের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মী বান্ধব বস এবং কর্মপরিবেশ ভালো না হলে অনেকে চাকরি ছেড়ে দেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বসের খারাপ ব্যবহারের কারণে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর্মী চাকরি ছাড়েন।
View this post on Instagram
A post shared by Anish Bhagat (@anishbhagatt)
মিয়ানমারে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে মিয়ানমার। দেশটির সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল হিসেবে গতকাল রোববার ৪৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮.৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) মিয়ানমারের আবহাওয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ম্যাগওয়ে অঞ্চলের চাউক শহরে তাপমাত্রার পারদ ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। ৫৬ বছর আগে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর দেশটিতে এপ্রিল মাসে এত গরম আর দেখা যায়নি।
একই দিন বাণিজ্যিক শহর ইয়াঙ্গুনের তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ ছাড়া মান্দালয় শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মিয়ানমারের শুষ্ক কেন্দ্রীয় সমভূমিতে অবস্থিত চাউকের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে খুব গরম ছিল এবং আমরা সবাই বাড়িতেই ছিলাম। এ রকম হলে আমরা কিছুই করতে পারি না।
দেশটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অনুসারে, গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের শুষ্ক প্রাণকেন্দ্রে দিনের তাপমাত্রা এপ্রিলের গড় থেকে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা গত বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, এশিয়া বিশেষ করে দ্রুত গতিতে উষ্ণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে তাপপ্রবাহের প্রভাব আরও গুরুতর হয়ে উঠছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছেম, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ দীর্ঘতর, ঘনঘন ও তীব্রতর হচ্ছে।
এদিকে, জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, বিশেষ করে এশিয়া দ্রুতগতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে, আর এর প্রভাবও গুরুতর হয়ে উঠছে।
সূত্র : এএফপি
কোভিড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার করলো অ্যাস্ট্রাজেনেকা
কোভিড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করলো ব্রিটিশ-সুইস ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে খুব বিরল থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) এর ঘটনা ঘটতে পারে। যার ফলে মানুষের রক্তে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়। খবর টেলিগ্রাফ।
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তৈরি কোভিড-১৯ এর টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন ডজনখানেক ঘটনার কথা উল্লেখ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বছর অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেছিলেন জেমি স্কট নামের এক ব্যক্তি। তিনি ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও তা জমাট বেঁধে যায়। যার ফলে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে গেছে।
এর আগে স্কটের আইনজীবীর কাছে পাঠানো এক মেইলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকার কারণে টিটিএস'র সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিল তবে হাইকোর্টে জমা দেওয়া নথিতে এর দায় স্বীকার করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ হাইকোর্টে ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ভুক্তভোগীরা মোট ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্রিটিশ-সুইস এই কোম্পানিটির স্বীকারোক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা গুনতে হতে পারে।
মা-ভাইয়ের সামনে বাংলাদেশি যুবককে হত্যা, ভিডিও প্রকাশ
হত্যাকাণ্ডের ৩৬ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মা ও ভাইয়ের সামনে বাংলাদেশি ১৯ বছরের তরুণ উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩ মে) নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল (এজি) লেটিশা জেমস গত ২৭ মার্চ ওই হত্যাকাণ্ডের পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করেছেন। খবর এবিসি নিউজের।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ দুপুরে নিউইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করেন উইন রোজারিও। এতে তার মা ও ভাই জরুরি হেল্পলাইন ৯১১-এ ফোন করে পুলিশের সহয়তা চান। বেলা আড়াইটা পুলিশের দুই সদস্য উইনদের নিজ ফ্লাটে এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। চেষ্টার এক পর্যায়ে টেজার গান ছোঁড়া হয়। সে সময়ে উইনের মা তাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের প্রতি আকুতি জানান গুলি না করার জন্য। তখন মানসিক ভারসাম্যহীন উইন আতঙ্কে চেয়ারের ওপরে রাখা মাছ-মাংস কাটার ছুরি নিয়ে পুলিশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর গুলি চালান কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় উইনের পরিবারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক মাসের বেশি আগে উইনকে হারিয়েছি আমরা। আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ তার শূন্যতা গভীর বেদনার সঙ্গে অনুভব করছি। নিদারুণ এই কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছি না। এ ভিডিও জনসম্মুখে প্রকাশের প্রয়োজন নেই। যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তাতে পুরোপরি স্পষ্ট যে উইনের বেঁচে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ এসে আমাদের রান্নাঘরে তাকে হত্যা করল। আমাদের এবং উইনের সুরক্ষার পরিবর্তে পুলিশ কর্মকর্তারা উইনকে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় গুলি করার মত পরিস্থিতি তৈরি করলেন। তাই আমরা চাইছি, এ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হোক এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’
নিউ ইয়র্কের জাস্টিস কমিটির পক্ষ থেকে শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লইডা কলোন বলেন, ভিডিওগুলো খুবই কষ্টদায়ক এবং তা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার শামিল। উইনকে গুলি করার বিষয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছিল, তার সঙ্গে ভিডিওর কোনো মিল নেই। মুহূর্তের মধ্যে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় উইনকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ এ ঘটনার পর থেকেই উইনের পরিবার ও বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানানো হচ্ছিল। কিন্তু নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তা দেখাইনি। ফলে রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল তা প্রকাশ করেন।
সেই ভিডিওতে নিজেকে নাচতে দেখে যা বললেন মোদি
প্রায় মাসখানেক ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনসার্টের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, উৎফুল্ল ভঙ্গিতে নাচের ঢংয়ে এই গায়ক মঞ্চ মাতাচ্ছেন। ভাইরাল হওয়া সেই কনসার্টের ভিডিওটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় নিজের মুখ বসিয়ে অনেকেই ভিডিও প্রচার করছেন। অনেকেই আবার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি জুড়ে দিয়ে এই মিম ভিডিও (ফানি ভিডিও) বানাচ্ছেন। এমনই নিজের একটি নাচের এক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সোমবার (৬ মে) এক্স হ্যন্ডেলে ভিডিওটি শেয়ার করে মোদি ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আপনাদের সকলের মতো আমিও নিজেকে নাচতে দেখে আনন্দ পেয়েছি। ভোটের ভরা মৌসুমে এই ধরনের সৃজনশীলতা সত্যিই আনন্দ দেয়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় ভিডিওটি শেয়ার করেছেন যখন দেশটিতে লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মোদির ভিডিওটি প্রথমে এথেয়িস্ট কৃষ্ণ নামের একটি এক্স হ্যন্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। আর এই ভিডিওটিই ফের শেয়ার করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
উল্লেখ্য, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি মূলত মার্কিন র্যাপ সঙ্গীত শিল্পী লিল ইয়াচটির মঞ্চে প্রবেশ করার। ২০২২ সালের ২১ জুন ইউটিউবে ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করা হয়েছিল।
রণক্ষেত্র রাফাহ, মুখোমুখি হামাস-ইসরায়েল
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ উপেক্ষা করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুক্রবার (১০ মে) রাফাহর পূর্বাঞ্চল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। পূর্ব ও পশ্চিম রাফাহকে পৃথককারী মাঝামাঝি সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দখলদার বাহিনী। তাদের প্রতিহত করতে এবার সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসও।
ইসরায়েল জানিয়ে দিয়েছে, গাজার মাটি থেকে হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে হলে তাদের রাফাহতে অভিযান চালানো ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। আর হামাসও বলেছে, তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধে পরাজিত করবে। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশরের শেষ চেষ্টাও ভেস্তে গেছে। হামাসের শেষ প্রস্তাবও মেনে নেয়নি ইসরায়েল।
রাফাহর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রায় সারাদিন রাফাহর পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে হামাস। রাফাহর সমরে হামাসের সঙ্গ দিচ্ছে ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারাও।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাফাহর পূর্বাঞ্চলে একটি মসজিদের কাছে একাধিক ইসরায়েলি ট্যাংকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে তাদের যোদ্ধারা। এতে বোঝা যাচ্ছে, রাফাহ সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
এদিকে ইসরায়েলের এই রাফাহ অভিযানের কারণে পুরো গাজা উপত্যকায় ত্রাণ কার্যক্রম কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বেপরোয়া এ অভিযান থেকে সরে আসার জন্য নেতানিয়াহু প্রশাসনকে বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েক দফায় কঠোরভাবে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অন্য ঘনিষ্ঠ মিত্ররা। কিন্তু তাতেও অনড় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু; ঘোষণা দিয়েছেন, মিত্ররা পাশে না দাঁড়ালে প্রয়োজনে একাই রাফাহতে অভিযান চালিয়ে যাবে তার বাহিনী।
নেতানিয়াহু বলেন, আমাদেরকে যদি একাই দাঁড়াতে হয়, তাহলে আমরা একাই দাঁড়াব। প্রয়োজনে আমরা আমাদের নখ দিয়ে লড়াই করব। কিন্তু আমরা জানি আমাদের আঙুলের নখের চেয়ে অনেক বেশি কিছু আছে। তার কথামতো ইতোমধ্যে রাফাহতে অভিযান এগিয়ে নেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে দখলদার রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।
টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশ থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল এ রাফাহ শহর। কিন্তু যুদ্ধের এ দামামায় শেষ আশ্রয়স্থলটুকু ছেড়ে আবারও অনিশ্চিত গন্তব্যে ছুটতে শুরু করেছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা।
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, এরই মধ্যে ত্রাণের মজুদ ও সরবরাহ কমে এসেছে। সেইসঙ্গে জ্বালানি ও খাদ্যের মজুদও কমে আসছে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ সমন্বয়কারী হামিশ ইয়াং বলেছেন, পাঁচদিন ধরে কোনো জ্বালানি ও মানবিক সাহায্য গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেনি এবং আমরা বন্দুকের নলের মুখে বসবাস করছি।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, হাজারে হাজারে ফিলিস্তিনিরা শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১০ মে) ইউএনআরডব্লিউএ এক্সে এক পোস্টে বলেছে, রাফাহতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ জোরদার হওয়ার পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে। নিরাপত্তার খোঁজে লাখো মানুষ পালিয়ে গেলেও তাদের জন্য প্রকৃতপক্ষে কোথাও নিরাপদ জায়গা অবশিষ্ট নেই।
হামিশ ইয়ং আরও বলেন, রাফাহর লোকজন খুব ক্লান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধের ফলে গাজার বাসিন্দাদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে হেঁটে হেঁটে স্থানান্তরিত হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি তাদের শরীরে নেই। হেঁটে যাওয়া ছাড়া বেশিরভাগের ক্ষেত্রে আর কোনো উপায়ও নেই। এদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, রয়েছে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করা এবং অপুষ্টিতে ভোগা অসংখ্য মানুষ।
রাফাহর পশ্চিমে তেল আল-সুলতানের বাসিন্দা আবু হাসান রয়টার্সকে বলেন, আমাদের জন্য আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই, কারণ সব জায়গায় ট্যাংকের গোলা এসে পড়ছে। আমি চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার পরিবারের জন্য একটি তাঁবু কিনতে আমি দুই হাজার শেকেল জোগাড় করতে পারছি না।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো ইতোমধ্যে দক্ষিণ থেকে পূর্ব রাফাহ বন্ধ করে দিয়েছে, গাজা ও মিশরের মধ্যে একমাত্র ক্রসিংটিও দখল করে বন্ধ করে দিয়েছে তারা। শুক্রবার সালাহউদ্দিন রোডের দিকে গাজা উপত্যকাকে ভাগ করে ‘রেড জোন’ ঘেরাও সম্পন্ন করেছে দখলদার বাহিনী। ফলে রাফাহ থেকে বাসিন্দাদের বের হয়ে যাওয়ার প্রায় সব পথ আক্ষরিক অর্থে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, হামাস নির্মূলের নামে গত সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন অবরুদ্ধ গাজায়। নিহতদের বেশির ভাগই নিরীহ নারী ও শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। এরই মধ্যে গাজায় দখলদার ইসরায়েলের এই নির্বিচার আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সব বাসিন্দাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
দুবাইয়ে ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি
বিলাসবহুল জীবনযাপনের শহর দুবাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের বিপুল পরিমাণ গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে। এসব সম্পদের তথ্য ফাঁস করেছে ‘দুবাই আনলকড’ নামে বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার একটি প্রকল্প। এতে দেখা গেছে, দুবাইয়ে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন ৩৯৪ বাংলাদেশি।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোরের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ ছয় মাস ধরে এই প্রকল্পে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ওসিসিআরপি।
দুবাইয়ের সরকারি ভূমি দপ্তরসহ অন্যান্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালানো হয়। ওসিসিআরপি বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ দুবাইয়ে বিদেশিদের মালিকানায় থাকা সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে বিদেশিদের সম্পদের মালিকানার তালিকায় শীর্ষে আছেন ভারতীয়রা। দেশটির ২৯ হাজার ৭০০ নাগরিকের ৩৫ হাজার সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দুবাইয়ে ভারতীয়দের এসব সম্পত্তির মোট মূল্য ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। ভারতের পর এই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানির হাতে ২৩ হাজার সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।
আমিরাতের এই শহরে গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানেরও গোপন সম্পদের খোঁজ মিলেছে দুবাইয়ে। দুবাইয়ের কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাতে মুকেশ আম্বানির প্রায় ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।
ওসিসিআরপির তথ্য বলছে, দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়েছেন অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। শহরটিতে এই বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে ৬৪১টি সম্পত্তি। বাংলাদেশিদের মালিকানায় থাকা এসব সম্পত্তির মূল্য ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারেরও বেশি।
তবে বাংলাদেশিদের সম্পদ ও মালিকানার তথ্য জানানো হলেও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ওসিসিআরপি।