• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

প্রথম পর্বে পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস, কারচুপি আর ‘কারসাজি'র ভোট

ডয়েচে ভেলে

  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬
কারচুপি
সংগৃহীত

গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মিটলো প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচন। নানা ঘটনায় উত্তপ্ত রইলো কোচবিহার। ভোটকর্মীদের তালাবদ্ধ করে রাখার ঘটনাও দেখলো পশ্চিমবঙ্গবাসী৷ গোটা দেশে শুরু হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে সাত দফায়৷ ৪২টি কেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ৷ আজ প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। আশঙ্কা সত্যি করে সবচেয়ে বেশি গন্ডগোল হয়েছে কোচবিহার কেন্দ্রে। কোচবিহার উত্তপ্ত সারা বছরই রাজনৈতিক উত্তেজনায় ফুটতে থাকে কোচবিহার। তৃণমূলের নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিকের অহি-নকুল সম্পর্ক। নিজেই এখানে প্রার্থী নিশীথ। তার বিপক্ষে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া। ভোট শুরুর পর থেকেই উভয় শিবির একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে থাকে। দিনহাটায় বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। বিজেপি ছাপ্পা ভোট, এজেন্টদের বাধা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ তোলে। দিনহাটায় এক বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে তাজা বোমা উদ্ধার হয়।

গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলখুচিতে আধাসেনার গুলিচালনায় কয়েকজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই শীতলখুচিতে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। লোহার রড, বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয় কয়েকজনকে। গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের সব আসনই জিতেছিল বিজেপি। ফলত কোচবিহার ছিল তাদের দখলে। এবার তৃণমূল সেই জমি ছিনিয়ে নিতে মরিয়া। তাই অশান্তির আশঙ্কা ছিল। সকাল থেকেই ভোট ময়দানে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। দিনহাটার ভেটাগুড়িতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। আহত নেতাকে হাসপাতালে দেখতে আসেন উদয়ন গুহ।

সিতাইয়ে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। একটি স্কুলের লাগোয়া জায়গায় অফিস বসানো নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গন্ডগোল হয়। রুইয়াকুঠি এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তৃণমূলের ভোটারদের বিজেপি বাধা দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। তালাবন্ধ ভোটকর্মীরা মাথাভাঙ্গার শিকারপুরে একটি স্কুলে ভোটকর্মীদের আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিডিও অফিসের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।

ভোটকর্মীদের দাবি, তাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ভোটকর্মীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে গরু-ছাগলের মতো আচরণ করা হয়েছে। প্রশাসনের হাতেই সরকারি কর্মীরা কেন আটক হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই কর্মীরা যে ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়েও দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়াশা ছিল। কমিশনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। ঘটনাস্থলে এসে বিজেপি বিধায়ক বরেন বর্মন বহিরাগত ভোটকর্মীদের বাইরে বার করেন।

ভোটকর্মীরা বলেন, আমাদের জল বা খাবার দেয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তালাবন্ধ করে রেখে চলে গিয়েছেন বিডিও অফিসের কর্মীরা। কোচবিহার থেকে বিপুল সংখ্যায় অভিযোগ আশায় উদ্বিগ্ন জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তারা রিপোর্ট তলব করে কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে। এদিন দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে প্রায় ৫০০ অভিযোগ জমা পড়ে। তার মধ্যে কোচবিহার থেকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে।

আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি কেন্দ্রেও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকায় বিজেপি বিধায়ক শিক্ষা চট্টোপাধ্যায় গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন। তৃণমূল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়, তিনি ঘুরে ঘুরে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন। বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিধায়ককে আটক করার চেষ্টা করে পুলিশ। নির্বাচন শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক আগে শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় তুমল উত্তেজনা ছড়ায়।

বিজেপি অভিযোগ করে, তৃণমূল বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে। সেখানে উপস্থিত হন শিখা। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনী জমায়েত সরিয়ে দেয়। রাজভবনে পিসরুম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নির্বাচনের উপর কড়া নজর রাখবেন। এমনকি সরাসরি রাস্তায় নেমে পর্যবেক্ষণের কথা বলেছিলেন তিনি। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী বোস সরেজমিন সফরে বার হতে পারেননি বটে, তবে রাজভবনের পিসরুম থেকে তিনি পুরো বিষয়টি নজরদারি চালান।

সকাল দশটায় রাজভবনের পিসরুম খুলে যায়। শুরু থেকেই সেখানে ছিলেন রাজ্যপাল। টেলিফোনে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে কোচবিহার থেকে। রাজভবন থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

রাজ্যপাল বলেন, পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় লোকসভা নির্বাচনে হিংসা কম হয়েছে। সন্দেশখালির ঘটনা প্রমাণ করেছে, চিরকাল হিংসা চলতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গে বরাবরের মতো এবারও ভোটদানের হার যথেষ্ট ভালো। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোচবিহারের ভোট পড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ। আলিপুরদুয়ারে ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। জলপাইগুড়িতে ভোটদানের হার ৭৯ শতাংশের বেশি। তিন আসনের গড় ৭৭.৫৭ শতাংশ যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।

বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশে ভোটদানের গড় হার ৬০ শতাংশ। অন্য রাজ্যে ভোট আজ প্রথম দফায় দেশের ১৭টি রাজ্য ও চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ১০২টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়। কোনো রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের মতো গন্ডগোলের খবর আসেনি। একমাত্র ব্যতিক্রম উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর। সেখানে গত বছরের মে মাস থেকে জাতি সংঘর্ষ চলছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা রয়েছে। ইনার মণিপুর আসনের অন্তর্গত একটি বুথে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। যদিও তাতে কেউ হতাহত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের থেকে মাত্র তিনটি কম আসন দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে। সেখানকার ৩৯টি আসনে আজ একটি দফাতেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনের জন্য এই রাজ্যে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। আজ তিনটি কেন্দ্রের জন্য ২৬৩ কোম্পানি আধাসেনা ছিল। রাজ্য পুলিশ ছিল ১২ হাজারের বেশি। কিন্তু তাও গন্ডগোল এড়ানো গেল না।

সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী বা পুলিশ দিয়ে হিংসা থামানো যাবে না। প্রথম দফায় বড় বিপদ হয়নি। যদিও এদিনই বোঝা গিয়েছে, কেন নির্বাচন কমিশন সাত দফায় পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন করাচ্ছে। কমিশন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন ছিল বলে মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে।

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য সদ্য উত্তরবঙ্গ সফর করে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি গত তিন সপ্তাহ উত্তরবঙ্গে কাটিয়ে এসেছি। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খুঁজে পাইনি। সেই বাহিনী উত্তেজনা নিবৃত্ত করতে পারবে, এটা আমাদের অতিরিক্ত ভাবনা। কোনো বাহিনী এখানে কিছু করতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এমন জায়গায় চলে গিয়েছে, সেখানে উত্তেজনার নিবৃত্তি হবে না, এভাবেই চলবে। পশ্চিমবঙ্গ আছে পশ্চিমবঙ্গেই।

মন্তব্য করুন

  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নেপালে পালাবদল, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কেপি শর্মা ওলি
আমি ভোটে দাঁড়াব এবং জয়ীও হবো: বাইডেন
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ, ফলের অপেক্ষা