• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সোমালিয়ান জলদস্যু কেন এত শক্তিশালী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৪:২১
ছবি : সংগৃহীত

সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা মূলত এই উপকূলে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। বিদেশি জাহাজ থেকে এই উপকূলের জলের মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের পরিবেশ বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ এ অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই শুরু করে।

২০০৯ সালের ওয়ার্ডিরনিউজ কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে।

জলদস্যুদের বিশ্বাস, তারা তাদের মাছ ধরার অঞ্চল রক্ষা করছে, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক সম্পদ বহির্দেশের কাছ থেকে রক্ষা করে চলেছে।

দস্যুরা কীভাবে এত শক্তিশালী?

উত্তর-কেন্দ্রিক সোমালিয়ার গ্যালমাদাগ প্রশাসন এ সকল জলদস্যু গ্যাংদের দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করে থাকে। সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যাবসায়ী এই লুটের টাকার ভাগ পেয়ে থাকে।

জলস্যুদের মুক্তিপণের অর্থায়নে সেখানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। দেশটির অন্যান্য অংশ থেকেও বিনিয়োগকারীরা সেখানে অর্থ খাটাচ্ছে। জলদস্যুতা এখন সোমালিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমালিয়ায় উপযোগী কোস্টগার্ড বাহিনী না থাকায় এবং দেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ায় সামরিক বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় জেলেরা একত্রিত হয়ে দেশের জলসীমা রক্ষায় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পাহারায় নিয়জিত রয়েছে। এ ধরনের সংবাদ মূলত জলদস্যুতা সমর্থিত নেটওয়ার্ক থেকেই বেশি শুনতে পাওয়া যায়। যেমন—জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক কোস্টগার্ড, যা জলদস্যুদের প্রাথমিক প্রেরণা হিসেবে তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। জলদস্যুতা যেহেতু অত্যধিক লাভজনক হয়ে উঠেছে সুতরাং, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার ইচ্ছাই জলদস্যুদের জলদস্যুতা পেশা বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ভাষ্যমতে, দেশটির সাবেক ও বর্তমান উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত পান্টল্যান্ড অঞ্চলের উভয় প্রশাসনই জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিক জোট জলদস্যুদের সমুদ্রে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি তাদের লোকানো বিভিন্ন স্থানেও আক্রমণ করে থাকে। ফলে ২০১০ এর প্রথম ছয় মাসেই জলদস্যুদের দ্বারা আটক জাহাজের সংখ্যা ৮৬ থেকে কমে ৩৩-এ নেমে আসে। এ ছাড়াও এর ফলে জলদস্যুরা এ অঞ্চল ত্যাগ করে সোমালি বেসিন ও ভারত মহাসাগরের প্রতি ঝুঁকে পরে। ২০১১-এর শেষ দিকে জলদস্যুরা এডেন অঞ্চল থেকে মাত্র চারটি জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে নিতে সমর্থ হয়। অবশ্য তারা ৫২টি ভেসেলে হামলা পরিচালনা করে যদিও সফল হতে পারেনি। ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর জলদস্যুরা একটি বড় জাহাজ ছিনতাই করে এবং ৫২ জনকে বন্দি হিসেবে আটক রাখে।

আক্রমণের সময় হিসেবে তারা মূলত রাত কিংবা ভোরের দিকটাকেই বেছে নেয়। জলদস্যুরা বড় জাহাজগুলোর কাছে পৌঁছাতে ছোট ছোট মটরচালিত নৌকা ব্যবহার করত। যা দ্রুত গতির পাশাপাশি বড় জাহাজের রাডারে সহজে ধরা পড়ে না।

জানা যায়, সমুদ্র বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার কারণে সোমালিয়ান জলদস্যুরা এতটা সংঘবদ্ধ আক্রমণ করতে পারে। কেবল ক্ষিপ্রগতিতেই নয় বরং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা হানা দেয়। আক্রমণের সময় হিসেবে তারা মূলত রাত কিংবা ভোরের দিকটাকেই বেছে নেয়। বড় জাহাজগুলোর কাছে পৌঁছাতে তারা ছোট ছোট মটরচালিত নৌকা ব্যবহার করত। যা দ্রুত গতির পাশাপাশি বড় জাহাজের রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। জলদস্যুরা সাধারণত জাহাজগুলোর পেছন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এক মাথায় হুক লাগানো লম্বা দড়িতে চেপে তারা দ্রুত জাহাজে উঠে যায়। যা মূলত জাহাজের পেছন দিকে লাগানো হুকের সঙ্গে আটকানো হয়। এই কাজগুলো তারা এত দ্রুত করে যে জাহাজের ক্রুরা কিছু বুঝে ওঠা কিংবা এলার্ম বাজানোর আগেই তারা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তাছাড়া গভীর সমুদ্রে আক্রমণ সাজানোর সময় তারা একটি মাদারশিপ থেকে অভিযান পরিচালনা করে।

গণমাধ্যমের দাবি, জলদস্যুদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য AK47, AKM, Type56, TT33, RPK, RPG-7 এবং PK অস্ত্র ব্যবহার করে। তাছাড়া RGD-5 ও F1 এর মতো শক্তিশালী হাত বোমাও তারা ব্যবহার করে থাকে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি জাহাজ। সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছেন জাহাজটির ২৩ জন নাবিক। এরই মধ্যে ভয়ানক হুমকির খবর ভেসে এসেছে জিম্মি জাহাজটি থেকে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যেভাবে দেশে ফিরবেন ২৩ নাবিক
২৩ নাবিকসহ আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে ভিড়ল এমভি আবদুল্লাহ
আরব আমিরাত উপকূলে এমভি আবদুল্লাহ
একদিন আগেই নোঙর করবে এমভি আবদুল্লাহ
X
Fresh