• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মানুষের মল দিয়ে জ্বালানি

ডয়েচে ভেলে

  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৯
জ্বালানি
সংগৃহীত

কেনিয়ার এক কোম্পানি মানুষের মল ব্যবহার করে ব্রিকেট তৈরি করছে৷ সেই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটেশন, পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাও মোকাবিলা করা হচ্ছে৷ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ মোটেই অফুরন্ত নয়৷ তবে যতদিন মানুষের অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন একটি সম্পদ কখনোই ফুরিয়ে যাবে না৷ সেটা হলো মল৷

স্যানিভেশন নামে কেনিয়ার এক কোম্পানি মানুষের মল প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহারের কাজে হাত পাকিয়েছে৷ উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিকারক প্যাথোজেন সরিয়ে ফেলার পর সেই কাঁচামাল ব্রিকেট বা কাঠকয়লায় রূপান্তরিত করা হয়৷

কোম্পানির প্রতিনিধি ডেক্সটার গিকাস বলেন, প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা সব সময়ে কৌতূহল দেখতে পাই৷ আসলে আগে সম্ভব মনে হয়নি, এমন আইডিয়ার মুখোমুখি হলে তখন বোঝা যায়, সেটা শুধু সম্ভবই নয়, তা খেকে মুনাফাও করা যায়৷ কিছু মূল্য সৃষ্টি করা যায়, কিছুটা উদ্ধার করা যায় এবং বর্জ্য থেকে আয় করা যায়৷

নাইরোবি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে নাইভাশায় এই কোম্পানি সক্রিয়৷ ট্রাক চালকরা আশেপাশের জনপদে গিয়ে বাসার বাথরুম থেকে মল সংগ্রহ করেন৷ জন কারিউকি ভ্যাকুয়াম ট্রাক অপারেটর হিসেবে প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে কাজ করছেন এবং সেই প্রক্রিয়া তাকে মুগ্ধ করছে৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটা বেশ খারাপ হবে৷ হয়তো স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে৷ কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম যে এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধোঁয়া সৃষ্টি হয় না৷ ক্ষতিকারক গ্যাসও বের হয় না৷ কাঠকয়লার মধ্যে কার্বন মোনোক্সাইড থাকে৷ কিন্তু এই ব্রিকেটের মধ্যে তা নেই৷

প্রতি মাসে ১২টি ট্রাক বোঝাই কাদার আকারের মল সংগ্রহ করা হয়৷ প্রত্যেকটি ট্রাকে প্রায় ২০ হাজার লিটার তরল থাকে৷ কোম্পানি বেশিরভাগ বাথরুম তৈরি করে দিয়েছে৷ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সেই বিনিয়োগের সুফল ভোগ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত স্যানিভেশনের প্রকল্প ভালোভাবে চলছে৷ স্থানীয় মানুষও সন্তুষ্ট৷ প্লাস্টিকসহ সব রকমের বর্জ্য পয়ঃপ্রণালীতে গিয়ে পড়ে৷ কিন্তু সংগৃহীত কাদায় সে সব আলাদা করা হয়৷
ডেক্সটার গিকাস বলেন, আমরা মানুষকে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সুবিধা দিচ্ছি৷ যে বর্জ্য রোগব্যাধি সৃষ্টি করতো এবং পরিবেশ দূষণ করতো, আমরা তা সরিয়ে দিচ্ছি৷ আমরা জনপদে কাজ করছি, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান করছি৷ এই কোম্পানি পরোক্ষভাবে প্রায় একশো মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব করেছে৷ সরাসরি ৫৬ জন কোম্পানির কর্মী হিসেবে কাজ করেন৷ গোটা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁরা সক্রিয়৷ সবার আগে তরল ও কঠিন আলাদা করা হয়৷ তারপর তরল পদার্থ জেলার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কঠিন পদার্থ বেশ কয়েকশো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়৷ তারপর সেটি প্রক্রিয়াজাত করে জৈব পদার্থের সঙ্গে মেশানো হয়৷ চূড়ান্ত ব্রিকেটে পাঁচ থেকে তিরিশ শতাংশ শুকানো মল থাকে৷ এই কোম্পানি মাসে প্রায় ১০০ টন মলযুক্ত ব্রিকেট তৈরি করে৷

জন কারিউকির মতে, রান্নাসহ নানা কাজে এই ব্রিকেট ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে৷ এটি আরো কার্যকর, অনেক বেশি টেকসই এবং এতে খাবার ভালোভাবে রান্না করা যায়৷ জ্বালানি হিসেবে এটির আরো ব্যবহার রয়েছে৷ চারকোলের অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব ছিলো, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে৷ কিন্তু ব্রিকেট পরিষ্কারভাবে ব্যবহার করা যায়৷ কোনো ক্ষতিকারক নির্গমন ঘটে না৷

একটি ক্যাফের মতো নাইভাশার কিছু রেস্তোরাঁও সেই ব্রিকেট ব্যবহার করছে৷ আগে সেখানে পাথরের চুলায় লাকড়ি ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু সেগুলির দাম আরো বেশি ছিলো৷ বর্ষার মৌসুমে লাকড়ি পাওয়াও কঠিন হতো স্থানীয়দের৷

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিশ্ববাজারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম
জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধে রাজধানীতে র‌্যালি
জ্বালানি তেলের দামে দুঃসংবাদ
দেশে জ্বালানি ও ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা চাচ্ছে এক্সিট
X
Fresh