• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নতুন বছরে দেশবাসীর উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০০

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং খ্রিষ্টিয় নতুন বছর তার দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে তিনি বলেন,২০২৩ সালে আমরা টানা পরিশ্রম করে সামনে এগিয়েছি। ঝড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টির কঠিনতা কাটিয়ে, আমরা সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেরেছি এবং বড় সাফল্য অর্জন করেছি। সবাই বছরের কঠিনতা মনে রেখেছেন, তবে ভবিষ্যতের ব্যাপারে সবাই আশাবাদী।

সি চিন পিং বলেন, ২০২৩ সালে আমরা দৃঢ়ভাবে পা ফেলেছি। কোভিড-১৯ মহামারির নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা স্বাভাবিক হবার পর, চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন-প্রক্রিয়াও বেগবান হয়েছে; আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া হয়েছে আরও সুবিন্যস্ত। এ সময় বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের স্মার্ট ও সবুজ শিল্পের জন্ম হয়েছে। চীনে খাদ্য উত্পাদন টানা বিশ বছর ধরে বাড়ছে। পরিষ্কার পানি ও সবুজ পাহাড়ের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ছিল আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের কাজে নতুন নতুন সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সার্বিক গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের কাজে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে। সিয়োং আন নতুন অঞ্চল দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ইয়াং জি নদীর বদ্বীপের অর্থনৈতিক অঞ্চল আরও প্রাণবন্ত হয়েছে। কুয়াং তোং-হংকং-ম্যাকাও উপসাগরীয় অঞ্চল প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। চীনের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়েছে।


তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আমরা দৃঢ়ভাবে সামনের পানে পা ফেলেছি। দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে চীনের উদ্ভাবনী শক্তি, উন্নয়নের প্রাণশক্তি আরও মজবুত হয়েছে। সি-৯১৯ বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয়েছে। দেশে তৈরি বড় আকারের প্রমোদতরী পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করেছে। শেন চৌ মহাকাশযান পরিবার মহাকাশ রিলেতে ব্যস্ত আছে। ‘পরিশ্রম’ নামের গবেষণা-জাহাজ গভীর সমুদ্রে অভিযান সম্পন্ন করেছে। দেশে তৈরি পণ্য আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং দেশে তৈরি কোনো কোনো ব্র্যান্ডের মোবাইল এতো জনপ্রিয় যে, ভোক্তাদের পক্ষে তা সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ব্যাপার। নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি, ফটোভোল্টাইক পণ্য ‘মেড ইন চায়না’-র প্রতীক। চীন আত্মনির্ভরশীলতার পাহাড়ে আরোহণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, অনেককিছু হালনাগাদ ও উদ্ভাবন করেছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০২৩ সালে আমরা ছেং তু বিশ্ববিদ্যালয় গেমস এবং হাং চৌ এশিয়ান গেমস সফলভাবে আয়োজন করেছি। ক্রীড়াবিদরা সুন্দর ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়েছেন। ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল, চলচ্চিত্র বাজার ছিল চাঙ্গা। বিভিন্ন গ্রামের সাংস্কৃতিক গালা ছিল আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত। নিম্ন কার্বন জীবন-যাপন এখন নতুন বাস্তবতা। উষ্ণ ও ব্যস্ত সুন্দর জীবনের প্রতি মানুষের আগ্রহের প্রতিফলন আমরা দেখেছি; একটি প্রাণবন্ত চীন ফুটে উঠেছে সবার চোখের সামনে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে আমরা স্বস্তির পা ফেলেছি। চীন একটি মহান দেশ, যার রয়েছে মহান সভ্যতা। এ বিশাল ভূমিতে রয়েছে মরুভূমির সৌন্দর্য, চিয়াং নান অঞ্চলের কোমর বৃষ্টি। মানুষের মন সেসব স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ইয়েলো রিভার এবং ইয়াং জি নদী দেখে সবার মন ও আত্মার শক্তি বাড়ে। লিয়াং জু ও এরলিতৌ’র সভ্যতার আলো, ইন রাজবংশের ধ্বংসাবশেষ চিয়া কু অক্ষরের ধারাবাহিকতা, সান সিং তুই’র সাংস্কৃতিক বিরল সম্পদ, এবং চীনের ন্যাশনাল আর্কাইভস অব পাবলিকেশন্স অ্যান্ড কালচারে প্রদর্শিত হয়েছে বিশাল চীনের দীর্ঘ ইতিহাস। সভ্যতা বিশাল ও মহান। এটি আমাদের আস্থার ভিত্তি এবং শক্তির উত্স।

সি চিন পিং বলেন, চীন শুধু নিজেকে উন্নত করে না, বরং বিশ্বকেও আলিঙ্গন করে এবং বড় দেশের দায়িত্ব পালন করে। আমরা সাফল্যের সঙ্গে চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষসম্মেলন, তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষফোরাম আয়োজন করেছি। আমাদের ধারাবাহিক কূটনৈতিক মিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। আমি কয়েকটি দেশ সফর করেছি এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকেছি। সে সব অনুষ্ঠানে আমি অনেক পুরানো বন্ধু এবং নতুন অংশীদারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের সঙ্গে চীনের উদ্যোগ শেয়ার করে, পারস্পরিক মতৈক্য গভীরতর করার প্রয়াস পেয়েছি। বিশ্ব পরিবর্তনশীল হলেও, শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন বরাবরই বিশ্বের প্রধান সুর। সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন কল্যাণ অর্জন করা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আগামী বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। আমাদের উচিত দৃঢ়ভাবে চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন বেগবান করতে এবং সম্পূর্ণ, সঠিক ও সার্বিকভাবে নতুন উন্নয়নের চেতনা বাস্তবায়ন করতে অবিচল থাকার পাশাপাশি, নতুন উন্নয়নের কাঠামো দ্রুত গড়ে তোলা, গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন বেগবান এবং উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন, প্রবৃদ্ধির মধ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, এবং প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সার্বিকভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীরতর করতে হবে, উন্নয়নের ব্যাপারে আস্থা বাড়াতে হবে, অর্থনীতির প্রাণশক্তি জোরদার করতে হবে, যাতে দৃঢ়ভাবে শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং জনশক্তি লালন করা যায়। অব্যাহতভাবে হংকং ও ম্যাকাওকে নিজের সুবিধা কাজে লাগিয়ে চীনের উন্নয়নের কাঠামোতে মিশে যেতে এবং দীর্ঘকালীন সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সমর্থন দিতে হবে। দেশের ঐক্য ইতিহাসের অনস্বীকার্য বাস্তবতা। তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের সবার উচিত হাতে হাত রেখে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের আলোকে গৌরব বোধ করা।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh