মেয়রের মৃত্যুতে শোবিজে শোকের ছায়া
মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য আর নেই। তবুও কিছু মৃত্যু আছে যা মানুষ মেনে নিতে পারেন না। তেমনি একটি মৃত্যু সংবাদ গতকাল থেকে কাঁদাচ্ছে দেশবাসিকে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডন স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিট) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান সবখানেই চলছে আনিসুল হককে নিয়ে আলোচনা। এমন স্বপ্নবাজ মানুষের বিদায় কষ্ট দিচ্ছে শোবিজ অঙ্গনের মানুষদেরও। তারকাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘আনিসুল হক’ নামটি ভাসছে সবার টাইম লাইনে। সেখান থেকেই কিছু স্ট্যাটাস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
চিত্রনায়ক ওমর সানী লিখেছেন, জানি না দেশে আনিসুল হকের মতো এমন একজন মানুষ আবার কবে পাওয়া যাবে। দোয়া করছি, আল্লাহ আপনার আত্মার শান্তি দান করুন।
রেনেসাঁ ব্যান্ডের নকীব খান লিখেছেন, পুরোপুরি শোকাহত। আমাদের সবার প্রিয় আনিসুল হক ভাই আর নেই। ইন্না.. রাজিউন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন, আমিন।
চঞ্চল চৌধুরী শোক জানিয়েছেন বলেছেন, আনিস ভাই, মেনে নেয়া সত্যি কঠিন। এভাবে চলে যাওয়া? কিছু বলার ভাষা নেই। হে মানুষ, চিরশান্তিতে ঘুমান। শুধুই শ্রদ্ধা।
সঙ্গীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী লিখেছেন, গত বছর কবির বকুল আইসিইউতে। তিনি এলেন মধ্যরাতে। ঢুকে পড়লেন কবির বকুলের কেবিনে। কাচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপলকে তাকিয়ে রইলেন। ঝট করে দরজা খুলে প্রায় অচেতন কবির বকুলের সামনে গিয়ে বললেন- ‘তোমার কিচ্ছু হবে না- আমরা আছি’। আনিস ভাই- আসলে কি আপনি আজ কোথায় আছেন?
অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ লিখেছেন, বড় অসময়ে আপনি চলে গেলেন। আপনাকে খুব প্রয়োজন ছিল এই দেশের জন্য। কত কি করার ছিল আপনার। আমরা আশায় ছিলাম। ভাবতেও খুব কষ্ট হচ্ছে আপনি নেই। ভেবেছিলাম আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আপনার সেই অদ্ভুত সম্মোহনী কথাগুলো শুনতে পাব। ওপারে ভালো থাকুন শান্তিতে থাকুন মেয়র আনিসুল হক।
সঙ্গীত শিল্পী সালমা লিখেছেন, ‘মানুষ সংঘবদ্ধ হলে পৃথিবী বদলে যেতে পারে’।এই মহৎ উক্তিটি, ঢাকা উত্তরের রূপকার মেয়র আনিসুল হকের। তার অবদান ঢাকার মানুষ আজীবন মনে রাখবে। এই বাংলা আরো একজন যোগ্য সন্তানকে হারালো। এই মহৎ মানুষটিও আজ পরপারে চলে গেলেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমরা সবাই তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তার মতো ভালো মানুষ এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে এটা কখনো কল্পনা করা যায় না। পরপারে ভালো থাকুক এই ভালো মানুষটি।
সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীর লিখেছেন, যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন মহৎ মানুষ। আপনি আমাদের মনে সব সময় থাকবেন। ভালো মানুষ গুণী মানুষ এভাবেই চলে যাবেন? এত তাড়াতাড়ি কেন?
চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী লিখেছেন, তিলোত্তমা এই নগরী তার ক্যারিশমাটিক পিতাকে হারালো। আমরা আপনাকে হারিয়ে শোকাহত। নতুন ঠিকানায় ভালো থাকবেন আপনি। বিনম্র শ্রদ্ধা সুন্দর মানুষ আনিসুল হক।
চিত্রনায়িকা পরীমণি লিখেছেন, মেয়র আনিসুল হক, আপনাকে এত ভালোবাসতাম টের পাইনি আগে।
কণ্ঠশিল্পী বেলাল লিখেছেন, মানুষটার আরো অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। সবদিক দিয়ে এমন পরিপূর্ণ মানুষের এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। জানি না, দেশে এমন একজন মানুষ আবার কবে পাওয়া যাবে। আনিসুল হক, দোয়া করছি, আল্লাহ আপনার আত্মার শান্তি দান করুন।
অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল লিখেছেন, ‘আনিসুল হক চলে গিয়ে প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন’!
১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। শৈশব কেটেছে নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
আশির দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান আনিসুল হক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন তিনি। ২০০৫-০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ব্যবসায়ী আনিসুল হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন।
আনিসুল হক ও রুবানা হক দম্পতির তিন সন্তান রয়েছেন।
এম/ এমকে
মন্তব্য করুন