• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সঞ্চয়পত্রের সুদ কি কমবে?

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:০৯

জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরণ করার নাম সঞ্চয়পত্র। কিন্তু বর্তমানে সঞ্চয়পত্র এতো জনপ্রিয় হয়েছে যে তা সরকারের দায় বাড়াচ্ছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭৭২ কোটি টাকার। বাড়তে বাড়তে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরেই বিক্রি বেড়েছে ৬৭ গুণ।

অর্থবিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে করে সরকারের দায় বাড়ছে। যা সরকারের মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কেনার এ লাইন যত লম্বা হচ্ছে, সরকারের মাথাব্যথা ততই বাড়ছে।

এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে আনার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক বিষয়ে সরকারের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের আগামী বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সুপারিশের বিষয়ে আলোচনা হবে।

আগামী ২৬ নভেম্বর সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় সামগ্রিক অর্থনীতির পাশাপাশি মুদ্রা ও ঋণ, মূল্যস্ম্ফীতি এবং প্রবাসী আয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রে বেশি সুদ থাকায় সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশ এ খাত থেকেই আসছে। এতে বাজারে সুদ হার কমানো যেমন সহজ হচ্ছে না, তেমনি সরকারের বেশি সুদবাহী দায় বাড়ছে। অন্যদিকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য জমছে, যা সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিল বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদ হার যৌক্তিকীকরণে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে।

বেশ কিছুদিন ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে কি-না, তা নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। গেলো বাজেটের সময়ও অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু তা সফন হয়নি।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটার পর গ্রাহকরা মাসে ৯১২ টাকা সুদ পাচ্ছেন।

সঞ্চয়কারীরা অবশ্য চান না কোনোভাবেই এই সুদ কমে যাক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকার বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। শুধু সেপ্টেম্বর মাসে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। সেপ্টেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রে সুদ হার সমন্বয় দরকার কিনা তা জানতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্র্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সঙ্গে।

তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আসলে সেটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তবে তার আগে তাদের স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিত এ সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা কারা? এদের মধ্যে কতভাগ ধনীক শ্রেণি; কত ভাগ মধ্যবিত্ত আর কত ভাগ নিম্ন বিত্ত?

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে যে সুদ আসে তার মাধ্যমে এক শ্রেণির প্রবীণ একসময়ে গিয়ে তাদের প্রয়োজন মেটান। তাদের কথা ভেবে এ সুদ কমানো উচিত হবে না। তবে সমন্বয়ের ব্যাপারে ভেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সেটাও নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের কথা মাথায় রেখেই করতে হবে। যেন সঞ্চয়পত্রের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়।

এসআর

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৯ মাসে সুদ পরিশোধ ১০০ কোটি ডলারের বেশি
সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশে সংকট বাড়বে জনতা ব্যাংকের
ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়ল
সীমা লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তির মুখে ৩৩ ব্যাংক ও ৬ প্রতিষ্ঠান
X
Fresh