• ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কুইক রেন্টাল-ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে জানতে চায় আইএমএফ 

আরটিভি নিউজ

  ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৬
কুইক রেন্টাল-ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে জানতে চায় আইএমএফ 
ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ক্যাপাসিটি চার্জ আর কত দিন টানতে হবে, তা জানতে চেয়েছে। সংস্থাটি বিদ্যুতে ভর্তুকির বদলে বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

বুধবার (২ নভেম্বর) বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে আইএমএফকে অবহিত করা হয়। পিডিবি বলেছে, বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে ভর্তুকি তাদের জন্য সুবিধাজনক।

এদিকে একইদিন আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সুবিধা ও রপ্তানি, তৈরি পোশাক রপ্তানি একক খাত-নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখীকরণ, আঞ্চলিক ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক্কহারসহ নানা ইস্যুতে সচিবালয়ে আলোচনা হয়।

বুধবার সকালে প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান। পিডিবির বৈঠকে নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।

জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ছে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির ভর্তুকি লেগেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থবছরে ভর্তুকি বেড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে মনে করছে পিডিবি। এদিকে গত ১২ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের ৮৬ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎ না কিনলে চুক্তি অনুসারে উদ্যোক্তাদের পরিচালন ও অন্য খরচ হিসেবে দেওয়া হয় যে অর্থ) দিতে হয়েছে সরকারকে।

সম্প্র্রতি আইএমএফের কাছে অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে বাংলাদেশ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে। এই সহায়তা চাওয়ার পর আইএমএফ বিভিন্ন খাতের, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমাতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি দল ঢাকা সফর করছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বৈঠক বসে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক করার কথা রয়েছে।

এদিকে সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সংকটকালীন স্থাপিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ-সংক্রান্ত চুক্তি ছিল। চুক্তি অনুযায়ী তাদের ক্যাপাসিটি চার্জের টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন এসব চুক্তি থেকে সরে আসছে সরকার। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তারা কোনো অর্থ পাবে না। প্রতিনিধি দলের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অধিকাংশেরই চুক্তি শেষ হয়েছে। কয়েকটি রয়েছে, যা আগামী দু-এক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।

আলোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিশেষ বিধান আর কত দিন চলবে, তা জানতে চেয়েছেন। স্বচ্ছতার জন্য তাঁরা দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্প নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় দরপত্র ছাড়াই সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দেওয়া হচ্ছে এক যুগ ধরে। দুই বছরের জন্য প্রণীত আইনটির মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে। এ আইনের আওতায় গৃহীত প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন খাত-সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এ আইনের আওতায় গৃহীত প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিনিধি দল পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেলের ব্যবহার, লোডশেডিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় ভর্তুকি বাড়ছে। এই অর্থবছরে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বলা হয়, এটি নির্ভর করে জ্বালানির ওপর। জ্বালানি বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত তেল ও গ্যাস সরবরাহ করা হলে লোডশেডিং হবে না। তবে বিশ্বে তেল-গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সরবরাহ কমেছে, তাই লোডশেডিং হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্র্রসারণের সম্ভাবনা কম।

বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের কাঝে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিনিধি দল কোনো পরামর্শ দিয়েছে কিনা- জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

অন্যদিকে ভর্তুকি, ক্যাপাসিটি চার্জ, সিস্টেম লোকসানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পিডিবির সঙ্গে আলোচনা করেছে আইএমএফ। ভর্তুকি না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পিডিবিকে চলার বিষয়ে জানতে চায় প্রতিনিধি দল। পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান এ সময় ঋণের বিষয়ে বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলে ঋণ ও সুদ দুটিই পরিশোধ করতে হবে। তবে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিলে তা পরিশোধ করতে হয় না, এটা সুবিধাজনক। লোকসান কমাতে বাণিজ্যিক ঋণ পিডিবির জন্য বাস্তবসম্মত নয়। ভর্তুকি বন্ধ হলে পিডিবি কী করবে- এমন প্রশ্নে কর্মকর্তারা জানান, সরকারের নীতি মেনেই কাজ করবে পিডিবি।

বাজেটে বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়। যদিও অর্থ বিভাগ টাকা ছাড়ের সময় শর্ত দেয়, ২ শতাংশ সুদে এটি পিডিপির জন্য ঋণ সহায়তা। তবে পিডিবি এখন পর্যন্ত এই ঋণ ফেরত দেয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েও আইএমএফ প্রতিনিধি দলের প্রশ্ন ছিল। তারা জানতে চেয়েছে, ২০৩০ সালের পরও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে কিনা? পিডিবি তাদের জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ, নতুন নতুন বেশ কিছু বেসরকারি কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। তাদেরও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। তবে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় না চালানোয় গত দুই অর্থবছরে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হয়েছে পিডিবিকে। আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতের আদানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, রামপালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটসহ বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রিডে যুক্ত হবে। চাহিদা না বাড়লে এসব কেন্দ্রের অনেকটিই বসে থাকবে। এতে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্নিষ্টদের আশঙ্কা।
বৈঠকের বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।

বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
ওই বৈঠকে আইএমএফ বলেছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বৈশ্বিক বাস্তবতায় নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আগে থেকেই এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা না হলে বাংলাদেশের উত্তরণ টেকসই হবে না। এর জন্য সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন প্রতিনিধিরা। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে, বিশেষ করে জিএসপি প্লাস পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে- সে বিষয়েও আলোচনা করেছে আইএমএফ। বাংলাদেশ কোন কোন দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে কোন ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে এবং তার আলোচনা ও সম্ভাব্য অগ্রগতি কতটুকু- সেটিও আইএমএফ জানতে চেয়েছে।

বৈঠকে সংস্থাটির প্রতিনিধিরা বলেছেন, বৈশ্বিক সংকটে মানুষের ভোগ ও চাহিদা দুটোই কমতে শুরু করেছে। এটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। আইএমএফ মনে করে, একক রপ্তানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাকের ওপর রপ্তানি আয়ের অতি নির্ভরতা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় রপ্তানি ঝুঁকি কমাতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পণ্যের বহুমুখীকরণে কার্যকর উদ্যোগ দরকার।

বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এলডিসি উত্তরণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে। এ ছাড়া তৈরি পোশাকের ওপর একক নির্ভরতা কাটিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও গড় ট্যারিফ নামিয়ে আনা এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যবসা করার খরচ কমিয়ে আনতে ২৯ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ ও কর্মপরিকল্পনাও আইএমএফকে জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রপ্তানিতে সিআইপি হলেন ১৮৪ ব্যবসায়ী
সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না খেজুর বিক্রেতারা
রমজানের আগে ৯০০ পণ্যের দাম কমাল কাতার
গ্রাহক পর্যায়ে যত টাকা বাড়ল বিদ্যুতের দাম
X
Fresh