ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
টানা বৃষ্টি ও উজানের পানির ঢলে কুড়িগ্রামে হু হু করে ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুইদিন ধরে এ পানি বেশি বাড়ছে। এ অবস্থায় ২য় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এতে নদ-নদী তীরের চর ও দ্বীপচরগুলো নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার ওপর এবং দুধকুমার নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলায় ২য় দফা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বানভাসি মানুষগুলো এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠায় পরিবার-পরিজন নিয়ে উঁচু বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন এসব বানভাসি মানুষ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বাড়িতে থাকা হাঁস, মুরগী, গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু।
পানিতে কাঁচা সড়ক ছাড়াও সদর উপজেলার মধ্যকুমরপুর এলাকায় পাকা রাস্তায় পানি উঠেছে। ফলে এখানকার বাজারে আসা মানুষজনের কষ্ট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ওই এলাকার ছমিয়ন বেগম জানান, ‘হামার বাড়িত বানের পানি উঠচে তাই বিয়ানীর বাড়িতে যাচ্ছি। ওমার বাড়ি উঁচা। পাহা আস্তাত পানি উটচে কষ্ট করি ছাগলকোনা ধরি যাবার নাগচং। যে কয়দিন পানি থাইকপে ওট্টে থাকমো।’
২য় দফা বন্যায় নদী পাড়ের বন্যার্ত মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তারা অনেক কষ্টে পাকা রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন। তাদের এখন কষ্ট নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল সংকট দেখা দিলে অনেকেই কলা গাছের ভেলা কিংবা ডিঙি নৌকো দিয়ে চলাচল করছেন।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া বন্যার চেয়ে ২য় দফা বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে বানভাসিরা খুবই আতঙ্কিত। জেলার সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী মানুষগুলো এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
১ম দফায় তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও সেগুলো আবারও নিমজ্জিত হয়েছে। এবার নতুন কিছু ফসল ডুবে গেছে। সেসব ফসলের আশা আর তাদের নেই। দুই দফা বন্যায় অনেকেই ফসল ও হাস মুরগী গবাদি পশুসহ অনেক সহায় হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এখনও অনেক এলাকায় বানভাসিদের ত্রাণ হাতে না পৌঁছায় বন্যার্তরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
জেলা বন্যা ও ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, নতুন করে ৪০০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ইতোপূর্বে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:
এজে
মন্তব্য করুন