বরগুনার আশ্রয় কেন্দ্রে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ
বরগুনা জেলার ৬১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার নারী ও শিশুসহ আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে খিচুড়িসহ শুকনো খাবারের।
বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নূর হোসেন সজল জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে ডিম দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্না করে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের দেয়া হচ্ছে রাতের এবং ভোর রাতের খাবার হিসেবে। এছাড়া শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে চিড়া, মুড়ি, গুড়, টোস্ট, বিস্কুট। রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও। পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি এসব খাবার প্রস্তুত এবং বিতরণে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে একজন করে ট্যাগ অফিসার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার জন্য জেলা সদর থেকে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে প্রতিটি উপজেলায়।
বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ইউপি সচিব মনজুরুল ইসলাম বলেন, তাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউপি সদস্যরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ভাগ করে নিয়েছে। ইউপি সদস্যরা নিজেদের বাড়িতে রান্না করে তারপরে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের জন্য খাবার সরবরাহ করছেন। বরগুনা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার সরাসরি এসব কাজ তদারকি করছেন।
বরগুনার বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা জানান, সবগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে রান্না করে আশ্রিতদের দফায় দফায় খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা সদরেও পৃথকভাবে পর্যাপ্ত খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে কোনও আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট পড়লে দ্রুততার সঙ্গে সেখানে পৌঁছে দেয়া যায়।
তিনি বলেন, ইফতারের জন্য চিড়া, চিনি অথবা গুড়, মুড়ি, বিস্কুট, টোস্ট ইত্যাদি শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক জমাদ্দার জানান, তার ইউনিয়নে ছয়টি বড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং আরও ছয়টি ছোট ছোট স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় তার বাড়িতে চাল ডাল ও সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
বামনা উপজেলায় বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান জানান, ইফতারের আগেই তিনি বামনা সদর থেকে প্রায় চার শতাধিক প্যাকেট নিয়ে রওনা হয়েছেন দুটি আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর নির্দেশনায় তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া সকল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে পৃথক পৃথক ভাবে রান্না করে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিতদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। কোথাও খাবারের সংকট দেখা দিলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। উত্তাল রয়েছে জেলার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর। বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার লঞ্চ চলাচলসহ খেয়া-পারাপার। সকাল থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। থেমে থেমে বৃষ্টি এবং প্রচণ্ড দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। সন্ধ্যার পর থেকে প্রধান তিনটি নদীসহ অভ্যন্তরীণ খালগুলোতে বেড়েই চলেছে জোয়ারের পানির উচ্চতা।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনও ট্রলারডুবির তথ্য তার কাছে নেই তবে বঙ্গোপসাগর যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে তাতে যে কোনও সময় খারাপ কোনও খবর শুনতে হতে পারে।
এসএস
মন্তব্য করুন