লকডাউনের কথা শুনে বাজারে উপচে পড়া ভিড়
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলাকে ‘লক ডাউন’ঘোষণা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ও শুক্রবার সকালে উপজেলা প্রশাসন এবং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে পুরো উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে মাইকিং করা হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত আট দিন পুরো উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে মাইকিং করা হয়। কিন্তু এ উপজেলাকে লকডাউন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা।
আপনার উপজেলা প্রশাসনের কথা বলে শহর লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম ঠেকাতে কাঁচা বাজার বন্ধ করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তা বিক্রির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লকডাউনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের মাইকিং বন্ধ করতে বলেছি। এদিকে লকডাউন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার কাঁচাবাজার করতে হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
তবে কালীগঞ্জ হাঁট চাঁদনী কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ থেকে ১২ টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বাজার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের নিয়ে এক সভা হয়। সেখানে সবাই মিলে শহরকে লক ডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার কারণে তারা লকডাউন ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেও লকডাউন ঘোষণা করে মাইকিং করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, লকডাউন ঘোষণার কোনও খবর তার জানা নেই।
তবে সভায় উপস্থিত থাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, সারা বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রতিদিন দ্বিগুণ ও আড়াইগুণ আকারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কোনোভাবেই জনগণকে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, লকডাউন করতে হলে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের অনুমতি লাগে। কিন্তু আমরা মূলত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম ঠেকাতে কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেয়ে কাঁচামাল বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। এটা লকডাউন নয়। ব্যবসায়ীর না বুঝে সেটা লকডাউন বলে মাইকিং করেছে। আমি জানার পর তাদেরকে লকডাউন ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি বন্ধ করতে বলেছি। মূলত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম ঠেকাতে কাঁচা জার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে গেল দুই দিন ধরে লকডাউনের মাইকিং করার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে কাঁচাবাজারে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। হাজার হাজার মানুষ কাঁচাবাজার করতে সেখানে ভিড় করেন। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছুই বিক্রি হয়ে যায়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে প্রতিটি কাঁচাবাজার অধিক মূল্যে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কালীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দীন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সভায় কালীগঞ্জ উপজেলা লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আমি সভায় বলেছিলাম কাঁচাবাজার বন্ধ হলে ৪-৫শ’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বেকার হয়ে যাবে। তারা কিভাবে চলবে, কি খাবে? তখন সবাই বলেন, আপনি এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী এবং তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি ‘লক ডাউন’ ঘোষণার মাইকিং করি।
জেবি
মন্তব্য করুন