• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সাংবাদিক আরিফুলের সারা শরীরে মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিহ্ন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি (উত্তর), আরটিভি অনলাইন

  ১৫ মার্চ ২০২০, ২১:১৯
সাংবাদিক আরিফুলের সারা শরীরে মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিহ্ন
নির্যাতনের শিকার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। ছবি: আরটিভি অনলাইন

মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর নির্যাতনের শিকার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এখন তিনি হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

আজ রোববার দুপুর দেড়টায় আরিফুলকে কারাগার থেকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। এর আগে সকালে কুড়িগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা তার জামিন মঞ্জুর করেন।

আরিফুলের দেয়া তথ্যে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে সদলবলে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে প্রথমে আরডিসি নাজিম উদ্দিন তাকে চর থাপ্পড় দিতে থাকে এবং টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ ও হাত বেধে মারতে মারতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে এনকাউন্টারে দেয়ার হুমকি দেন আরডিসি। তিনি বলেন ‘আমি কাকুতি-মিনতি করি। আল্লাহর কসম দেই। সন্তানের কসম দেই। প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। তারা আমাকে বারবার কলেমা পড়তে বলছিলেন। এ সময় আরডিসি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’

পরে তাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে আরেক দফা অমানুষিক নির্যাতন চালান এবং তার ভিডিও ধারণ করা হয়।

আরিফুল ইসলাম আরও জানান, চোখ বাঁধা অবস্থায় তার কাছ থেকে জোর করে ৪টি কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে তাড়াহুড়ো করে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার আঘাতের চিহ্ন আমার শরীরে আছে।

এদিকে আজ দুপুর দেড়টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরিফুল ইসলামকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে দেখতে আসেন স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুসহ তার স্বজনেরা। এসময় আরিফের হাতে-পায়ে, শরীরে ও মাথায় অসংখ্য লাঠির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন হাসপাতালে দেখতে আসা সচেতন মহল।

নির্যাতনে আরিফের হাত ফুলে গেছে, তার দুই বাহুর পেশি, পিঠের শিরদাঁড়ায়, হাঁটুর নিচে লাঠির আঘাতে দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এছাড়া মাথা এবং পায়ের পাতায় আঘাত রয়েছে। যার কারণে আরিফ সোজা হয়ে দাড়াতে পারছেন না।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখেছি। কিন্তু, এভাবে কাউকে পেটানো হয়, তা দেখিনি, শুনিওনি। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম একজন কলেজ শিক্ষকও। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্দয় ভাবে পেটানো হয়েছে। তিনি আরিফুলের নিঃশর্ত মুক্তি চান এবং জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। আমরা শুনেছি একটি মোবাইল কোর্ট তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। তারপর এভাবে তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়, ইতোপূর্বে আমরা কখনও শুনিনি। হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও নার্সকে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া আছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এসময় তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। যদিও আরিফ অধূমপায়ী।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় টিআইবির উদ্বেগ 
এফডিসিতে মারামারি, যা বললেন অঞ্জনা
রাত ৮টার পর মার্কেট-দোকান বন্ধে মাইকিং, না মানলে ব্যবস্থা
X
Fresh