• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মধুমতির ভাঙনে সর্বহারা তিন গ্রামের মানুষ

নড়াইল প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০৯
মধুমতি নদী ভাঙন
মধুমতির অব্যাহত ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে তিন গ্রামের মানুষ

চলতি বর্ষায় মধুমতি নদীর ভাঙনে ৬৯টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে অন্তত দেড়শটি পরিবার। একের পর এক নদীতে যাচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, মসজিদসহ নানা সামাজিক স্থাপনা। বিলীন হচ্ছে জনপদ।

এই অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের আমডাঙ্গা, আস্তাইল ও চরআড়িয়ারা গ্রামের। ঐতিহ্যবাহী জনপদ ছিল ওই তিনটি গ্রাম। গত তিন দশকে ওই তিন গ্রামের ৯৫ ভাগ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এর অধিকাংশ পরিবার ৩-৭ বার ভাঙনের কবলে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছেন। অস্বচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্যত্র যেতে পারেননি, তারা একবার এ পাড়ে, আরেকবার অন্য পাড়ে বসতি গড়ছেন। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন মধুমতীর সঙ্গে। কিন্তু এ ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কোনও পদক্ষেপ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আমডাঙ্গা গ্রাম নদীতে ভেঙে তিনটি জনপদের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর এ পাড়ে পিছিয়ে বসতি গড়েছেন অনেকে। বেশিরভাগ পরিবার নদীর অপর পাড়ে বসত-বাড়ি করেছেন। সে অংশের নাম এখন পারআমডাঙ্গা। আরেক অংশ চারপাশ দিয়ে নদীবেষ্টিত আস্তাইল-আমডাঙ্গায় বসতি গড়েছেন। বর্তমানে পারআমডাঙ্গা ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা অংশে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আস্তাইল গ্রামের অধিকাংশ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অপর পাড়ে বসতি গড়েছেন। এ অংশের নাম হয়েছে পারআস্তাইল। পারআস্তাইলে এখন ভাঙন অব্যাহত আছে। চরআড়িয়ারা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার পিছিয়ে আমডাঙ্গা এলাকায় বসতবাড়ি করেছেন। আবার অনেকেই অপর পাড়ে গিয়ে বসবাস করছেন।

মধুমতির অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত দেড়শটি পরিবারের বসতবাড়ি। আস্তাইল গুচ্ছগ্রাম এবং আস্তাইল, আস্তাইল-আমডাঙ্গা ও পারআমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও হুমকির মধ্যে রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, চরআড়িয়ারা ও আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চরআড়িয়ারা মাদরাসা তিনবার, আমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুইবার, আস্তাইল ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একবার নদীতে ভেঙেছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: পাঁচ দিন পর বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ
---------------------------------------------------------------

এ বর্ষায় নদীতে বিলীন হয়েছে আস্তাইল-আমডাঙ্গা গ্রামের মান্নান সরদার, লুৎফার সরদার, দৌলত আলী, লুৎফার আলী, ছুরোত আলী, আরবান সরদার, আকিদুল শেখ, আমির মোল্লা, টুনু শেখ, আরিফ ঠাকুর, তারিফ ঠাকুর, ছোরাপ সরদার, আকবর সরদার, জাকির সরদার, কাদের সরদার, মমিনুল মোল্লা, আমিনুর মোল্লা, হাদিয়ার মোল্লা ও কালু সরদারের বসতভিটা। এছাড়া গেল দুই মাসে আস্তাইল গ্রামের আজগর ফকির, কদম ফকির, রওশাদ সরদার, রিজু সরদার, রাঙ্গু শেখ, ইমরান শেখ, উজির মিয়া, জহুর শেখ, জাহিদুর শেখ ও ফুলমিয়া শেখ এবং চরআড়িয়ারা গ্রামের বাদশা শেখ, মঞ্জু শেখ, আলোয়ার শেখ ও বাচ্চু শেখের বাড়ি গ্রাস করেছে মধুমতী।

আস্তাইল গ্রামের সিরাজ ফকির বলেন, ‘সাতবার মধুমতীতে গেছে আমার বসতভিটা। এখন আমি পথের ফকির।’

পারআমডাঙ্গা গ্রামের লুৎফার মোল্লা বলেন, পাঁচবার নদীতে গেছে বসতভিটা। অন্তত ১০ একর ফসলি জমি নদীতে। চলতি বর্ষায় পাঁচ একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। এখন নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান শেখ ও সার্জিদ মোল্লা জানান, ভাঙনরোধে গেল তিন দশকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চলতি ভাঙনে কোনও ত্রাণও দেওয়া হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, এই এলাকায় ডিপিপি তৈরি করে বড় প্রকল্প নিতে হবে। এজন্য সময়ের দরকার।’

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিপুণের প্যানেলে ভাঙন
যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
ডিইউজের কল্যাণ ফান্ডে মধুমতি ব্যাংকের ১০ লাখ টাকা অনুদান
এবার এশা দেওলের সংসারে ভাঙনের সুর
X
Fresh