৮০ বছর বয়সেও বিনা পয়সায় কুরআন শেখান তিনি
আছিয়ার বয়স ৮০। বয়সের ভারে অনেকটা নুয়েও পড়েছেন। মুখের দিকে তাকালেই বলিরেখা চোখে ভাসে। এই বয়সে এসেও থেমে নেই। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ আর শিশুদের কুরআন শেখাচ্ছেন তিনি। একদিন দু’দিন নয়, গত পঞ্চাশ বছরেও বেশি সময় ধরে। তাও আবার টাকা পয়সা ছাড়াই।
ভাবছেন এখনও এমন মানুষ আছে! হ্যাঁ-গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া এলাকার আছিয়া বেগম নামে এমন এক বৃদ্ধাকে পাওয়া গেছে। মরহুম আবুল হাশেমের স্ত্রী শুধু কুরআনই শিক্ষা দিচ্ছেন না- ধাত্রী হিসেবেও তার রয়েছে বেশ খ্যাতি। আশেপাশের অন্তত ৫-৬টি গ্রামে গত অর্ধশতাব্দীতে কয়েকশ’ শিশু জন্ম হয়েছে তার হাতে। এলাকাবাসীর কাছে ‘কুরআনের নানী’ হিসেবে পরিচিত এই লড়াকু মহিলা।
এই নারী চরম অর্থ সংকটেই জীবন কাটিয়েছেন। সুখের ছোঁয়া লাগেনি জীবনে। স্বামী মারা গেছেন পঁচিশ বছর আগে। এক পুত্র আর তিন কন্যা সন্তানের জননী আছিয়া গর্ভবতী নারীদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো আর মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার মধ্যেই জীবনের সব সুখ-শান্তি খুঁজে পান। জীবনের দেনা পাওনার হিসেব করেননি কখনো। জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসেও শৈশবে দেখা একটা স্বপ্ন আছিয়াকে ঘুমোতে দেয় না। পবিত্র কাবা ঘর দেখা আর প্রিয় নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করা। মৃত্যুর আগে অন্তত একবার যেতে চান প্রিয় নবীর জন্মভূমিতে। ইমন নামে তার এক ছাত্রকে গত কয়েকদিন আগে আছিয়ার স্বপ্নের কথা শোনান।
তিনি বলেন, আস্তে আস্তে তো মৃত্যুর কাছাকাছিই চলে এসেছি। কবে যেন চলে যাই! আছিয়ার এই আফসোসের কথা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন ইমন। লেখাটি চোখে পড়ে শ্রীপুর থানায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম মোল্লাহ নামে এক পুলিশ অফিসারের। আছিয়ার কাছে ছুটে যান তিনি। আছিয়ার ইচ্ছার কথা মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন ওই লোক। মাত্র কয়েকদিনে সেই ভিডিওর দর্শক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখে। আছিয়ার শেষ ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসেন সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
পুষ্পদাম নামে একটি রিসোর্টের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন নিজের খরচে আছিয়াকে প্রিয় নবীর জন্মভূমি দর্শন ও ওমরা পালনের সকল ব্যবস্থা করে দেন। গত ৪ মে রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আছিয়া বেগম যান স্বপ্নের মক্কায়।
এর আগে আছিয়ার জীর্ণকুটিরে গিয়ে যখন ভিসা আর বিমান টিকিট নিয়ে সাদ্দাম হোসেন অনন্ত যান তখন এ সব হাতে পেয়ে আছিয়া আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। এসআই শহিদুল হক মোল্লাহ বলেন, আছিয়া নানী সারা জীবন মানুষের জন্যই নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। স্বীকৃতিও চাননি কখনো। এই মানুষগুলোর কারণই এখনও আমাদের সমাজে ভালো মানুষ আছে।
ওমরা যাওয়ার আগে আছিয়া বলেন, এই জীবনে বহু মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছি। গ্রামের অনেক মানুষের মৃত্যুর পর গোসল করিয়েছি। এখন শুধু শেষ ইচ্ছা প্রিয় নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত ও ওমরা করা।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (বেলদিয়া) মো. নুরুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, উনি খুব ভালো মানুষ। বহুদিন ধরে আমাদের চোখের সামনেই মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। কাওরাইদ, কালিরবাড়ি, সাদুকপাড়া, বাটপাড়া, বেলদিয়া ও পশ্চিমপাড়াসহ আশপাশের গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। বিনিময়ে কোন টাকা পয়সাও নেন না। আমাদের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে উনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। সবার কাছে তার একটাই চাওয়া ছিল, তিনি মক্কায় যাবে।
আছিয়া বেগমের নাতী আলতাফ হোসেন বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে কখনো দাদিকে বাড়িতে বসে থাকতে দেখি নাই। বাড়ির উঠানে এলাকার কিছু ছাত্র পড়ায়ে বেড়িয়ে পড়তো। দাদির সারাজীবনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রতিদিনই দাদির সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে, উনি খুব ভালো আছে। আর সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এসএস
মন্তব্য করুন
কুষ্টিয়ায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নাফিস আহমেদ তুষার (২৮) নামে এক জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এর আগে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় গোলাপনগর বাজারের পাশে একটি চায়ের দোকানে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
নিহত নাফিস আহমেদ তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোলাপনগর বাজারের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন নাফিস আহমেদ তুষার। হঠাৎ ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত তুষারের বাবা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৭ রোজায় সে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তুষারের দুই পায়ের রগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তা ছাড়া পিঠে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন ছিল।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন বলেন, তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তার বাবা ইউনিয়ন জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
মেঘনায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ বিকল
মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদীতে প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে বিকল হয়ে পড়েছে একটি লঞ্চ। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল।
সোমবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১০টায় গজারিয়া উপজেলার ষোলআনি এলাকায় বিকল হলে লঞ্চটি নোঙর করা হয়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গজারিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, বরিশালগামী আল-সাফিন সাত্তার খান-১ নামে লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় ছেড়ে আসে। গজারিয়ায় এসে লঞ্চটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তবে যাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আল-সাফিন কোম্পানির আরও একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে। লঞ্চটি পৌঁছালে যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা দেবো।
মুক্তিপণ নিয়ে ফেরার পথে ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিককে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সোমালিয়ার সময় শনিবার রাত ১২টার দিকে জাহাজটি ছেড়ে তীরে পৌঁছানোর পর অন্তত আট জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
‘গারোই’ নামে সোমালিয়ার একটি স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে রাখা আট দস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে পান্টল্যান্ড পুলিশ। তবে জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা উদ্ধার করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে পান্টল্যান্ড পুলিশের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। এর আগে গত ১৭ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ জিম্মি করার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছিল পুলিশের ওয়েবসাইটে।
এর আগে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে ৩২ দিন পর মুক্তি পান বাংলাদেশি ২৩ নাবিক। সঙ্গে ছাড়া পেয়েছে জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ও। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মুক্তিপণের ডলার ভর্তি তিনটি ব্যাগ জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা।
রোববার (১৪ এপ্রিল) মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জিম্মি জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম।
তিনি জানান, ঈদের আগেই নাবিকদের ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু কিছু জটিলতায় সময় পরিবর্তন হয়। অতীতে জাহান মণির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত সময়ে ২৩ নাবিককে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ নাবিককে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়।
জাহাজটি মুক্ত হওয়ার পর একজন নাবিক হোয়াটসঅ্যাপে পরিবারের সদস্যদের জানান, শনিবার বিকেলে উড়োজাহাজ থেকে ব্যাগভর্তি ডলার জাহাজের পাশে ফেলা হয়। দস্যুরা তা কুড়িয়ে নিলেও জাহাজে অবস্থান করছিল। মূলত নৌবাহিনীর জাহাজ ও পান্টল্যান্ড পুলিশের নজরদারি এড়াতে গভীর রাতে তারা জাহাজ ছেড়ে যায়।
স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে স্ত্রীর আত্মহত্যা
সাতক্ষীরা স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ইরানী আফরোজ তানু (২৭) নামের এক বিউটি শিয়ান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
রোববার (১৪ এপ্রিল) শহরের কামালনগরের ভাড়া বাড়ির নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন তিনি। তিনি পলাশপোল সবুজবাগ এলাকার হান্নান গাজীর মেয়ে।
জানা গেছে, গত মাসে কামালনগর দক্ষিণপাড়ার এই ভাড়া বাড়িতে ওঠেন ইরানী। সাতক্ষীরা শহরে তিনি একটি বিউটি পার্লার চালাতেন। বিভিন্ন বিষয়ে ওই দম্পত্তির সঙ্গে কলহ লেগেই থাকত। এদিন দুই সন্তানকে বাইরে রেখে এসে বাড়ি এসে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা অবস্থায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ইরানী। এরপর স্থানীয়রা তা জানতে পেরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরা সদর থানার তদন্ত (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
যে কারণে জেল থেকে বের হয়েই স্ত্রীকে হত্যা করল স্বামী
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রী শরিফা খাতুনকে (২২) নির্যাতনের মামলায় কারাভোগ শেষে জেল থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আরাফাত শুভর (২৫) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী ও শাশুড়ি ইয়াসমিন খাতুনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৮টায় শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী পূর্বপাড়া (মুরগি বাজার) স্বামীর বাড়ি থেকে পুলিশ ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান। গৃহবধূ শরিফা খাতুন শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা (সুতা পাড়া) গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে এবং একই ইউনিয়নের আরাফাত শুভর স্ত্রী।
স্বামী আরাফাত শুভ একই ইউনয়নের তালতলী পূর্বপাড়া (মুরগি বাজার) গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। তিনি পেশায় প্রাইভেটকার চালক। তাদের ঘরে ইসরাত আক্তার নামে আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
গৃহবধূর মামা ওমর ফারুক বলেন, ‘শুভ ও শরিফা খালাতো ভাই বোন। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তারা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুভ তার স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না হওয়ায় স্ত্রী শরিফা স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় স্বামী শুভ কারাভোগ শেষে সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন। রোববার (১৪ এপ্রিল) রাতে তাদের ঘরে ঝগড়ার আওয়াজ শুনতে পাই। সকালে শুনি আমার ভাগনি মারা গেছে। মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে তার স্বামী ও শাশুড়ি পালিয়ে যেতে চাইলে এলাকাবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়।’
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রহবধূর স্বামী আরাফাত শুভ নারী লোভী ও জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া লেগেই থাকতো।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, গৃহবধূর মৃত্যুর খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে। এলাকাবাসী গৃহবধূর স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শিল্পপতির সংসার ছাড়তে গরিবের মেয়ের সংবাদ সম্মেলন
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নেশাগ্রস্ত এবং বিকৃত স্বভাবের স্বামী দীপের সংসার ছাড়তে মশলা বিক্রেতার মেয়ে প্রিয়ন্তী সাহা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ভাঙ্গা উপজেলা পৌর সদরের চৌধুরীকান্দা গ্রামে নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
জানা গেছে, প্রিয়ন্তীর স্বামী দীপ একজন শিল্পপতির ছেলে। আর প্রিয়ন্তীর বাবা কুমারেশ সাহা ভাঙ্গায় ফুটপাতের পাশে মশলা বিক্রি করে সংসার চালান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়ন্তী জানান, আমার বাবা-চাচাদের অনেক লোভ দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করে দীপ। আমার বাবা সুখের কথা ভেবে আমাকে বিবাহ দেন ভাঙ্গা বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রবিন সাহার ছেলে দীপের সঙ্গে। বিবাহ হয় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। হিন্দু ধর্মের রীতি-নীতিতে অনেক কিছু করতে হয়, যা দীপ প্রথম রাতেই বিবাহ সম্পন্ন না করে নেশায় আসক্ত হন। সে আমাকে একা রেখে নেশা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, ফিরে আসে ভোররাতে। তাই নেশাগ্রস্ত স্বামীর সঙ্গে কোনোভাবেই আমার সংসার করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন স্ত্রী প্রিয়ন্তী।
তিনি জানান, তাকে জোর মদপান করতে হতো। মদ না খেলে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে টয়লেটের মধ্যে আটকে রাখত। এছাড়া আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে সে সেটা চেঞ্জ করে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছেড়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে আমি ভাঙ্গা থানায় অভিযোগ করেছি।
প্রিয়ন্তীর মা শিখা সাহা জানান, নেশাগ্রস্ত ছেলে দীপ আমার মেয়ে প্রিয়ন্তীর জীবনটা বিপন্ন করে ফেলেছে। ছেলে যে এমন নেশাগ্রস্ত তা জানলে কিছুতেই তার কাছে বিয়ে দিতাম না মেয়েকে। এছাড়া দীপের পরিবার অনেক ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
প্রিয়ন্তীর চাচা গোপাল সাহা জানান, নেশাগ্রস্ত ছেলের কাছে আমার ভাতিজি মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রিয়ন্তীকে বিয়ে দেওয়ার পর তার জীবনটা বিপন্ন করে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।
দীপের চাচা রাজকুমার সাহা জানান, আমার ভাইয়ের একমাত্র ছেলে দীপ। আমরা অনেক আনন্দ করে বিয়ে করিয়েছিলাম, কিন্তু দীপ মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। মনে করেছিলাম বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, দীপের বিরুদ্ধে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। দীপ তার স্ত্রীকে দিয়ে মদপানসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতে জোর করত। পরে তার স্ত্রী প্রিয়ন্তীকে আমরা উদ্ধার করে ওর বাবা-মায়ের হাতে দিয়েছি। এরপরও স্বামী দীপ কোনো অন্যায় করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুরে মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডে এলাকা রণক্ষেত্র, ২ ভাই নিহত
ফরিদপুরের মধুখালী মন্দিরের কালী প্রতিমায় আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হামলায় সহোদর দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের বারোয়ারী মন্দিরে আগুনের ঘটনা ঘটে। এরপর এই আগুন দেওয়ার অভিযোগে মন্দিরের পাশের স্কুলে নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা।
নিহত শ্রমিকরা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও আরশাদুল (১৫)।
জানা গেছে, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম নির্মাণকাজে নিয়োজিত মুসলিম সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে মারপিট করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনা স্থলে গেলে হামলাকারীরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে, এবং হতাহতদের উদ্ধারে বাধা দেয়। পরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ৪ জনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মারা যান। আহত আরও দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের জানান, মাগরিবের নামাজ শেষে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবুর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান হাজার হাজার জনতা। তিনি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে ফোনে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, একটি মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, মারপিট করেছে। এতে দুই ভাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল সংখ্যক শটগানের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হলেও ঠিক কতজন সদস্য আহত হয়েছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারিনি। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে। তারা শুক্রবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে।