পলান সরকার আর বই বিলি করবেন না
গ্রামে গ্রামে ঘুরে আর আলোর ফেরিওয়ালা পলান সরকার বই বিলি করবেন না। আজ শুক্রবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের নিজ বাসভবনে ৯৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলান সরকারের ছেলে হায়দার আলী। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন পলান সরকার।
পলান সরকার নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এজন্য পলান সরকার ২০১১ সালে একুশে পদক পান। সারাদেশে তাকে বহু সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটক তৈরি হয়েছে।
এদিকে পলান সরকারের মৃত্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এক শোক বার্তায় বলেন, পলান সরকারের মৃত্যুতে জাতি একজন সমাজকর্মীকে হারালো।
তিনি বলেন, পলান সরকার রাজশাহীর ২০টি গ্রামজুড়ে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। তার অবদান রাজশাহীর মানুষসহ বাঙালি জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।
পলান সরকারের জন্ম ১৯২১ সালে। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে পলান সরকার নামেই তাকে চেনে দশগ্রামের মানুষ। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। টাকাপয়সার টানাটানির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে। তবে নিজের চেষ্টাতেই চালিয়ে যান পড়ালেখা। স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন পলান সরকার। তিনি ছিলেন বই পাগল মানুষ। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান পাবে, তাদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তার বই বিলির অভিযান। এরপরে তিনি সবাইকে বই দিতেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর নিজেই হেঁটে হেঁটে বই বিলি করতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে করেছেন এই কাজ।
জেবি
মন্তব্য করুন