• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অমর প্রেমের নিদর্শন মাথিনের কূপ

শাহীন শাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার)

  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:২৭

মাথিন এক রাখাইন জমিদার কন্যার নাম। তিনি প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অনিদ্রা আর অনাহারে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। বেদনাবিধুর প্রেমের বহুল আলোচিত সেই ঘটনার কালজয়ী সাক্ষী টেকনাফের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। এটি মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।

এই মাথিন কূপে পর্যটকদের আনতে সম্প্রতি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে হাজারও তরুণ-তরুণীর পাশাপাশি সকল স্তরের মানুষ মাথিনের কূপটি দর্শন করে থাকেন।

ঐতিহাসিক এই মাথিনের কূপ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত একটি পুরান পাতকুয়া। এটি দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও সম্প্রতি স্থানটিকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য করা হয়েছে টি স্টল, বাহারি ফুলের বাগান, বিশ্রামাগারসহ নানা স্পট। সেইসঙ্গে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। সব মিলিয়ে অপূর্ব একটি পর্যটন স্পট।

জানা যায়, কলকাতার ঔপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে দারোগা হিসেবে সুদূর কলকাতা থেকে টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসেন। টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে ছিল একটি পানির কূপ। যেখানে প্রতিদিন পানি নিতে আসতেন আশপাশের রাখাইন কন্যারা। তখন টেকনাফের রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্যা মাথিনও থানার সামনের কুয়া থেকে সকাল-বিকেল পানি নিতে আসত।

ধীরাজ ভট্টাচার্য তার কাজের ফাঁকে প্রায় সময়ই থানার বারান্দায় আনমনা হয়ে চেয়ার নিয়ে বসে থাকতেন। যেখানে প্রতিদিন পানি নিতে আসতেন আশপাশের রাখাইন যুবতিরা। রং বেরংয়ের পোশাক পড়ে কলসি হাতে পানি নিতে আসা এসব সুন্দরী রাখাইন যুবতির মৃদু কণ্ঠে ভেসে আসা সুরেলা মধুর গান শুনে মুগ্ধ হতেন দারোগা ধীরাজ। সেখানে ১৪-১৫ বছর বয়সী সুন্দরী রাখাইন কন্যারা বেশ ভালোই আড্ডা জমাতো। পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিদিন থানার বারান্দায় বসে বসে অপূর্ব সুন্দরী মাথিনের পানি নিতে আসা-যাওয়া দেখতেন। একপর্যায়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে মাথিনের প্রেম হয়।

বিষয়টি থানার ব্রিটিশ ওসির নজরে পড়ে যায়। তিনি গোপনে খবরটি ধীরাজের বাবাকে জানান। কিছুদিন যেতে না যেতেই কলকাতা থেকে হঠাৎ দারোগা ধীরাজের কাছে ব্রাহ্মণ পিতার জরুরি বার্তা আসে। যেখানে তার বাবা লিখেছেন- খুব জরুরিভাবে তাকে এক মাসের ছুটি নিয়ে কলকাতা যেতে হবে। ছুটি না পেলে চাকরি ছেড়ে দিয়েই যেতে হবে। মাথিনকে বিষয়টি জানান ধীরাজ। এতে মাথিন রাজি হলেন না। তবু বাবার বাধ্যগত ছেলে ধীরাজ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে দ্রুত ফিরে এসে মাথিনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ধীরাজ আর ফিরে আসেননি।

এদিকে ধীরাজের অপেক্ষায় দিন গুণতে গুণতে আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মাথিন। কোনও ডাক্তার-কবিরাজ মাথিনকে আর সুস্থ করতে পারেনি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জমিদার কন্যা মাথিন। সেই ঘটনার কালজয়ী সাক্ষী ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। যা এখনও আকর্ষণীয় হয়ে আছে সীমান্ত উপজেলার টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে।

এ প্রেমগাঁথা নিয়ে ১৯৩০ সালের পরে লাহোরের ইউনিক পাবলিকেশন্স থেকে ‘যখন পুলিশ ছিলাম’নামে ধীরাজ ভট্টাচার্যের আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ একটি অমর প্রেমের সাক্ষী। নষ্ট পড়ে থাকা স্থানটিকে সংস্কার ও মনোমুগ্ধকর করে তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে স্থানটিকে বাহারি ফুলবাগান দিয়ে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি মাথিনের কূপের বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রেমিকার ১৯ দিন পর প্রেমিকের আত্মহত্যা
প্রেমিকাকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রেমিক গ্রেপ্তার
প্রেম করে বিয়ের ২ মাসের মাথায় প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা 
প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পাগলা মসজিদের দান বাক্সে চিঠি
X
Fresh