• ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কাজেই লাগলো না ২০ লাখ টাকার ব্রিজটি

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

  ১০ জুন ২০১৮, ১৬:৩১

১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ব্রিজটি কোনো কাজেই লাগলো না। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছিল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট কর্মসূচী ২০১২-২০১৩’র আওতায় দিয়াবাড়ী বেইলী ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বের রাস্তায় ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট উঁচু এই ব্রিজটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় ঠিকাদার দীপক কুমার সরকার।

সম্প্রতি ব্রিজ ভাঙনের পর দুর্ভোগে পড়া সেখানকার জনসাধারণ তাদের সীমাহীন কষ্টের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ২০১৩ সালে এই ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ব্রিজটির দুই পার্শ্বের মাটি না ফেলায় এই ব্রিজটি তখন তাদের কোনো কাজেই আসে নাই। চার বছর ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় গেলো বর্ষায় পানির স্রোতে ব্রিজটি ভেঙে যায়। ফলে গোপালপুর এবং খোদানওদা গ্রামের হাজারো মানুষ মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে।

সরকারের একটি বিরাট অংকের টাকা খরচ করে নির্মিত ব্রিজটি ব্যবহার করার আগেই ভেঙে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র কাজ করে চলে যেতে পেরেছেন। আসলে এই দেশে সব সম্ভব।

তারা বলেন, গোপালপুর এবং খোদানওদা গ্রামে ৫শ’ পরিবারের বাস। এই দুটি গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ব্রিজ না থাকার কারণে তাদের উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, সরিষা, পেয়াজ, মরিচ, আলু, মৌসুমী সবজিসহ অন্যান্য ফসল সময়মত বাজারজাত করতে পারছেন না। গর্ভবতী মাসহ অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

জানা যায়, ওই গ্রাম দুটির হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য দিয়াবাড়ি-গোপালপুর-খোদানওদা কাঁচা রাস্তাটি। এই রাস্তার ওপর পাকা ব্রিজটি নির্মাণে এলাকাবাসী খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার কোনো রকমে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শেষ করলেও ব্রিজের দুই প্রান্তে মাটি না ফেলায় তারা এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারেনি। নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ব্রিজটি অবশেষে গেলো বন্যায় ব্রিজটি ভেঙে যায়।

তাদের অভিযোগ, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেননি।

চালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিশ্বাস বলেন, ব্রিজটির ব্যাপারে তিনি সবসময় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেছেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। খুব সহসাই এখানে ব্রিজ পুনর্নির্মাণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ভাঙা ব্রিজটি অকশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি জানান।

ব্রিজটির ঠিকাদার দীপক কুমার সরকার বলেন, কাজটি মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদার পেয়েছিল। সংসদ সদস্যের অনুরোধেই এই ব্রিজ তিনি নির্মাণ করেছেন।

ব্রিজটি তিনি যথাযথ নিয়ম মেনেই করেছেন, বন্যায় ভেঙে গেলে তো কারো কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মরিুল ইসলাম শোভন বলেন, সেতুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। মাসখানেক আগে প্রকল্প পরিচালকসহ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশল উক্ত সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি মেরামত কিংবা পুনর্নির্মাণ বিষয়ক কোনো নির্দেশনা দেননি।

এদিকে ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার পর ওই দুই গ্রামবাসী চালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিশ্বাসকে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরির দাবী করেছিলেন। তিনি তাদের সেই দাবীও রক্ষা করেননি। ফলে বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। তবে কোনো রকমে পায়ে হেটে চলাচল করতে পারলেও তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না তারা।

শ্যামল কুমার রাজবংশী, বাদশাহ বিশ্বাস, শেখ মমেজ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তারা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এই বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। এতে তাদের খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। যারা টাকা দিতে পারেননি তারা গায়ে খেটেছেন।

অপরদিকে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো কেন তৈরি করা হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, বাঁশের সাঁকো তৈরির জন্য ১০ হাজার টাকা রেখেছি। এখনও দেয়া হয়নি।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মোরেলগঞ্জে স্টিলব্রিজের সঙ্গে আটকে গেলো বাস, যাত্রীদের দুর্ভোগ 
ব্রিজের নিচে পড়ে ছিল কিশোরের মরদেহ
সিরাজগঞ্জে ব্রিজের গার্ডার ধস, নিহত ১
ফুটওভারব্রিজে আটকে যায় উড়োজাহাজ, সরানো হলো লেজ খুলে
X
Fresh