ভক্ত-অনুসারীতে মুখর আখড়াবাড়ি, জানছেন অজানাকে
জাতপাত ভুলে লালন ভক্ত-অনুসারীরা কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়ে অজানাকে জানছেন। সাধু সঙ্গে সহজ মানুষের সন্ধান করছেন।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ আধ্যাত্মিক এই বাণীকে সামনে নিয়ে লালন ফকিরের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসবের আজ দ্বিতীয় দিন। গেল রাতে এই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এরপরই একতারা, দোতারা আর ঢোল-বাঁশির সুরে জমে উঠেছে ভবের হাট।
১৩৪ বছর ধরে এই লালন উৎসব চলে আসছে। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক আধ্যাত্মিক সাধক লালন ফকির দেহত্যাগের পর প্রথমে তার অনুসারীরা ও পরে লালন একাডেমি এ উৎসব চালিয়ে আসছে। প্রথম দিকের সাধুসঙ্গের এই উৎসব এখন বিশাল লালন স্মরণোৎসবে পরিণত হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিনে দেশি- বিদেশি ভক্তদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে এ সাধুর হাট। লালন ভক্ত, বাউল, ফকির ও অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে এসে মানুষ ভজনার মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন। পাশাপাশি মনের হিংসা, রাগ দূর করতে লালন ফকিরের দেখানো মতের দারস্থ হচ্ছেন।
ঢাকা থেকে আসা লালন অনুসারী নাদিম সাহা ফকির বলেন, প্রত্যেকবার লালন উৎসবে আসতে একটি সৎ উদ্দেশ্য থাকে। এবার দেহকে চালাতে ফকির লালনের কাছ থেকে যতসামান্য দীক্ষা নিতে এসেছি। লালন সাঁইজি পবিত্র কোরআনের আঙ্গিকে দেহ নিয়ে অনেক তত্ত্ব দিয়ে গেছেন।
লালন ভক্ত রহিমা বলেন, লালন ফকির একটি সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি ধরে আমরা এখানে আসি। এখানে আসলে বহু আশেকান, সহজ মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের দেখলেই মনের ভেতরের হিংসা দূর হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত আখড়াবাড়ির ভেতরে গানে-গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। একইসঙ্গে রাতে আখড়াবাড়ির বাইরে মূল মঞ্চে লালন দর্শনের আলোচনা ও গানে-গানে লালনের বাণী প্রচার হচ্ছে। এ ছাড়া লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা।
একইসঙ্গে উৎসব নির্বিঘ্ন করতে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে লালন স্মরণোৎসব ও সাধু সঙ্গ শেষ হবে আগামীকাল (১৯ অক্টোবর) ।
এ বিষয়ে লালন গবেষক ও অনুসারী হৃদয় সাহা ফকির আরটিভি অনলাইনকে বলেন, লালন সাঁইজির ধারা বা দর্শন কিংবা সত্যবাণী মানুষকে উজ্জীবিত করে। জীবনকে বাঁচিয়ে রেখে প্রেমের প্রয়োজনে মানুষ মানুষের কাছে আসে। একজন ফকিরের সাদা দৃষ্টির মধ্যে সবাই নিজেকে নতুনভাবে রাঙিয়ে তোলে। আমরা যদি সম্প্রীতিকে অটুট রাখতে পারি, ভেতরের অহংকারকে দূর করতে পারি, ঘৃণাকে দূরে রাখতে পারি তবেই মানুষ আমাদের কাছে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্য জ্ঞানে’ ফকির লালনের এ সহজ ধারায় নিজেকে যদি নতুন করে রাঙানো যায়, তবে একটি সংঘাতহীন নতুন পৃথিবী গড়া যাবে।
আরটিভি/আইএম/এআর
মন্তব্য করুন