• ঢাকা রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

 ৪০ বছর পর দেশে ফিরলেন নেপালি নাগরিক বীর বাহাদুর

পঞ্চগড়  প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৩ মে ২০২৪, ২৩:৪২
ছবি : আরটিভি

নেপালি নাগরিক বীর বাহাদুর রায়। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশেই কেটেছে তার জীবনের দীর্ঘ ৪০টি বছর। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকায় নেপালি ভাষা ভুলে বাংলা ভাষা শিখে ফেলেন। বাংলা ভাষা এতটাই রপ্ত করেছেন যে বর্তমানে নেপালি ভাষায় কথা বলতে পারছেন না তিনি। এদিকে দীর্ঘ ৪০ বছর পরে দেশে ফিরে গেলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ী সীমান্তে তাকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় বীর বাহাদুরের ভাতিজা রাজন চাচাকে কাছে পেয়ে বুকে জরিয়ে ধরেন। দীর্ঘদিন পরে স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বীর বাহাদুর। পরে ভাতিজা রাজন চাচাকে উত্তরীয় ও টুপি পড়িয়ে দেয়। পরে রাজন দুপচাঁচিয়া এলাকার বাসিন্দা ফরেন, অলকসহ কয়েকজনের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন। এ সময় বীর বাহাদুরকে তার ভাতিজা রাজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি, নেপালের দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত মিস ললিতা সিলওয়াল, দ্বিতীয় সচিব মিস ইয়োজানা বামজান, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী, বীর বাহাদুরের ভাতিজা রাজন রায়সহ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বীর বাহাদুরের হাতে নেপাল অ্যাম্বাসি ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার স্থানীয় মানুষদের দেওয়া আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেওয়া হয়। পরে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পর্যন্ত বীর বাহাদুরকে এগিয়ে দেন নেপাল অ্যাম্বাসির সেকেন্ড সেক্রেটারি ইউয়েজানা বামজাম।

জানা যায়, বীর বাহাদুর ছোটবেলা থেকে কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পরে ঘুরতে ঘুরতে অজান্তেই নেপাল থেকে ঢুকে পড়েন ভারতে। পরে সেখান থেকে সীমান্ত দিয়ে কখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন এখন কিছুই মনে নেই তার। এরই মাঝে প্রায় ১০ বছর কেটেছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটসহ উত্তরের কয়েকটি জেলায়। এসব জেলায় তিনি দিনমজুর, হোটেল শ্রমিকের কাজ করেছেন। পরে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাস্টার পাড়া এলাকায় চলে যান। সেখানেই কাটে তার জীবনের দীর্ঘ ৩০টি বছর। সেখানে তিনি পলক বসাক নামে এক ব্যক্তির মিল চাতালে শ্রমিকের কাজ করেছেন। কাজের বিনিময়ে শুধু পেট পুরে খাবার চাইতেন। নিতেন না কোন টাকা পয়সা। তবে তার মধ্যে দেশে ফেরার টান ছিল। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তার কাছে তার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে গোরখে বাঙ্গিনা বললেও বিস্তারিত বলতে পারেননি তিনি। অনেকে তাকে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা মনে করেন। পরে তাকে নেপালী ভাষা লিখতে দিলে স্বাচ্ছন্দে লিখে ফেলেন তিনি।

দুপচাঁচিয়া মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ফরেন বীর বাহাদুরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ঠিকানা জানতে চান। স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে নিউজ হলে প্রশাসনিক ভাবে বীর বাহাদুরের ঠিকানা খুঁজতে নেপাল অ্যাম্বাসিতে তার ছবি দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় পরে নেপালের গোরখে বাঙ্গিনাতে তার পরিবারের কাছে ছবি দেখানো হলে তার বড় ভাবি বীর বাহাদুরকে চিনতে পারেন। পরে বীর বাহাদুরকে দেশে পাঠাতে শুরু আইনি প্রক্রিয়া। দীর্ঘ ৬ মাস পরে তাকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার এলাকার বাসিন্দা পলক কুমার বসাক বলেন, বীর বাহাদুর দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমাদের মিল চাতালে কাজ করেছেন। কাজের বিনিময়ে শুধু খাবার খেয়েছেন কোনো পারিশ্রমিক নেননি। আজকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তবে দীর্ঘ দিন আমাদের বাসায় থাকায় নিজের পরিবারের সদস্যের মতো মনে করি। আজকে তাকে বিদায় দিতে এসে কান্নায় বুক ভেসে যাচ্ছে। তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের আমন্ত্রণ করেছেন তাদের দেশে যেতে। দেখি সুযোগ পেলে তাকে একবার দেখতে যাব।

দুপচাঁচিয়া মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ফরেন বলেন, আমি বীর বাহাদুরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করি যাতে তাকে কোনভাবে দেশে পাঠানো যায়। দীর্ঘ দিন পরে তাকে দেশে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

নেপালি দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর রিয়া ছেত্রী বলেন, আমরা বীর বাহাদুরের পরিবারের পক্ষ থেকে জেনেছি তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো ছিলেন। একটি ভিডিওতে তাকে দেখে তার ভাবি চিনতে পারেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তার স্বজনেরা তাকে নিতে এসেছেন। আমরা তার ভাতিজা রাজনের হাতে বীর বাহাদুরকে তুলে দিয়েছি। আমরা চাই তার জীবনের বাকি সময়টুকু কাটুক পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়