• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

প্রতি রাতে মনে হতো এটাই জীবনের শেষ রাত: প্রধান প্রকৌশলী

আরটিভি নিউজ

  ১৫ মে ২০২৪, ২২:৩৩
স্ত্রী-সন্তানসহ এমভি আবদুল্লাহর প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ (সংগৃহীত ছবি)

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি ২৩ নাবিক দেশে পৌঁছেছেন। এমভি আবদুল্লাহর এই ২৩ নাবিকের বিষয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল সারা দেশের মানুষ। ২৩ নাবিকদের বহন করা লাইটার জাহাজ মঙ্গলবার (১৪ মে) যখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় তখন ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। খুশিতে চোখের নোনা জল মুছেছেন নাবিকদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা। একই রকম আনন্দের জোয়ার বইছে এমভি আবদুল্লাহর প্রকৌশলীর বাড়িতে। বাড়িতে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা-মা।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন নওগাঁ শহরের শাহী মসজিদ এলাকার কাইয়ুম হোসেনের ছেলে ও এমভি আবদুল্লাহর প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ। বুধবার (১৫ মে) সকালে রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নেমে বেলা ১১টায় বাড়ি ফেরেন তিনি। এরপর জানান নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ বলেন, ‘দস্যুরা সব সময় একে-৪৭ এর মতো অস্ত্র তাক করে রাখত। ফাঁকা গুলি ছুড়েও ভীতি প্রদর্শন করত সোমালিয়ার দস্যুরা। সোমালিয়ার পুলিশদের সঙ্গে প্রায়ই বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত। তখন আরও বেশি ভয় পেতাম। প্রতি রাতে মনে হত এটাই বোধহয় জীবনের শেষ রাত। শেষ পর্যন্ত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারের সহযোগিতায় কোম্পানি আমাদের সুস্থভাবে মুক্ত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘দস্যুদের শেষ পর্যায়ে জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার মুহূর্ত আমাদের ২৩ জন নাবিকের কাছে ছিল স্মরণীয় মুহূর্ত, যা আমাদের নতুন করে বাঁচার আনন্দ দিয়েছে। এয়ারপোর্টে স্ত্রী আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে। ওইখানেই মিষ্টি খাওয়ানোর পর আমাকে বাড়িতে এনেছে। এখন ঘরে ফিরে অন্যরকম স্বস্তি পাচ্ছি। তবে জিম্মিদশার সেই দৃশ্যগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসছে। ওই স্মৃতিগুলো ভুলতে পারলে তবেই স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ ফিরতে পারব।’

স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে স্বামী মুক্তি পাওয়ার পর ওইদিনটা আমাদের কাছে ঈদের দিনের মতো মনে হয়েছে। এরপর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম তার ঘরে ফেরার। অনেক দিন পর তাকে দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালো।

কেএসআরএম গ্রুপ জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৬ হাজার টন পণ্য চুনাপাথর রয়েছে। এতে প্রায় ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ মিটার। জাহাজটির ড্রাফট বেশি থাকায় কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু পরিমাণ পণ্য খালাস করে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বন্দর জলসীমায় আনা হয়। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এ জন্য দেশে পৌঁছানোর পরও নাবিকদের ঘরে ফিরতে একটু সময় লেগেছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হাতির আক্রমণে ৪ শ্রমিক আহত
ট্রাক্টরচাপায় শিশুর মৃত্যু
ইন্টারনেট চালু, চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক
এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিক হচ্ছে চট্টগ্রামের নগরজীবন