• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণ, বেঁচে ফিরলেন মৌয়াল আবদুল কুদ্দুস

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৫ মে ২০২৪, ১৫:৪০
সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণ, বেঁচে ফিরলেন মৌয়াল আবদুল কুদ্দুস
ছবি : আরটিভি

গভীর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে নদীতে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন আবদুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়াল।

গত শনিবার (১১ মে) পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে কুমিরের আক্রমণের শিকার হন তারা।

আবদুল কুদ্দুস জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে। সোমবার (১৩ মে) লোকালয়ে ফেরার পর মঙ্গলবার (১৪ মে) তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৌয়ালরা জানান, গত ৭ থেকে ৮ দিন আগে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন ছয় মৌয়াল। তাদের দলে ছিলেন দুই ভাই আবদুল কুদ্দুস ও আবদুল হালিম। ঘটনার দিন অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি চাক পাওয়ায় সবাই খোশমেজাজে ছিলেন। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছিয়া নদীর চরে হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় আবদুল কুদ্দুসের ওপর কুমির আক্রমণ করে।

তারা জানান, হঠাৎ আবদুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন সবাই। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন তারা হতবিহ্বল। আবদুল কুদ্দুস পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন, আর পানিতে ভেসে উঠছে রক্ত। হঠাৎ পানির ওপরে উঠে এলো কুমিরের লেজ। বাকিদের বুঝতে আর কিছু বাকি রইল না, আবদুল কুদ্দুসকে কুমির আক্রমণ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে লাগলেন বাকি পাঁচজন। তারা আবদুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করলেন। এভাবে চলতে থাকল তিন থেকে চার মিনিট। হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন আবদুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি দল।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘কুমির যখন আমার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় আমিও সমানতালে পানিতে ডুবে গিয়ে আবার ভেসে উঠি। নিশ্বাস নিতে না পারায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় আর কিছু মনে নেই।’

এ বিষয়ে তার ভাই মৌয়াল আবদুল হালিম জানান, শুরুতে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। ফলে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে কুমিরের লেজ আছড়ে পড়া দেখে তিনি জীবনের মায়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাইকে বাঁচাতে চিৎকার করে দলের অন্য চার সদস্য বক্স গাজী, শহিদুল, সিরাজুল ও এলাই বক্সের সহযোগিতা চান। এক পর্যায়ে সবাই মিলে আবদুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি এবং পানিতে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি করলে কুমিরটি শিকার ছেড়ে চলে যায়।

তিনি আরও জানান, ঝড়ের কারণে দেরিতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন মৌয়ালরা। তাই সোমবার রাতে তারা লোকালয়ে পৌঁছান।

এ দিকে আবদুল কুদ্দুসের বাঁ হাত গুরুতর জখম হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কামড়ের চিহ্ন দেখে শিকারি কুমিরটি তুলনামূলক ছোট মনে হয়েছে।

এ বিষয়ে সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন দুজন।

সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে মৌয়ালদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী।

তিনি বলেন, বৈধভাবে এসব ব্যক্তি মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যান। চিকিৎসা নিয়ে এলাকায় ফিরে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সরকারি সহায়তার জন্য আহত মৌয়ালের নাম প্রস্তাব করা হবে।

উল্লেখ্য, আবদুল কুদ্দুস ও আবদুল হালিম গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে মাছ, কাঁকড়া শিকারসহ মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যাতায়াত করেন। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তারা। তখন দলে ছিলেন সাতজন।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করিডোর দিয়ে শেখ হাসিনা খাল কেটে কুমির এনেছেন: রিজভী
সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে নিহত মৌয়াল
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
ঘের থেকে স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানো কুমির উদ্ধার