লালমোহনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের গায়ে হাত তোলার হুমকি আ.লীগ নেতার
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে ভোলার লালমোহনে একজন প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে অন্য প্রার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিদারুল ইসলাম অরুণের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার সাড়ে ৮ মিনিটের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয় ও শঙ্কা। অনিরাপদ বোধ করছেন প্রার্থীরাও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শোনা যায়, লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিদারুল ইসলাম অরুণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন হাওলাদারের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সময় প্রতিপক্ষ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে হুংকার দেন তিনি। প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলছেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আপনারা নির্বাচন করছেন, কত বড় বুকের পাটা। আপনারা ঘুঘু দেখছেন ঘুঘুর ফাঁদ দেখেননি। যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করবে তাদের গায়ে হাত উঠতে দেরি হবে না। তাদের দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।
এ সময় ভোটকেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর স্থান হবে না বলেও হুংকার দেন আওয়ামী লীগের উপজেলা সহসভাপতি দিদারুল ইসলাম অরুণ।
টানা দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনকে হুংকার দিয়ে বলেন ‘তুই একটা মিথ্যা বাদী। তুই বেটা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছিস। কত বড় বুকের পাটা।’
এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও মার্কা না থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের নাম ভাঙিয়ে প্রতিপক্ষকে নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল ইসলাম অরুণ।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গেলে বরদাশত করা হবে না। যারা দলের বাইরে যাবে তাদের দলীয় সব পদ-পদবি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এ সময় অন্যপ্রার্থী ও তাদের সহযোগীদের হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা (চেয়ারম্যান প্রার্থী)। তার গায়ে হাত দিতে একটু দেরি কবরো। কিন্তু আপনাদের গায়ে হাত তুলতে দেরি হবে না।
এছাড়া আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতারুজ্জামান টিটবকে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অরুণ বলেন, ‘টিটব কেন, টিটবের বাপও কেন্দ্রে থাকতে পারবে না। আমরা বদরপুরের মানুষ, আমাদের কথা পরিষ্কার’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন আরটিভিকে বলেন, আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনকে দলের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দলেরই একজন নেতা অরুণ সাহেব, তিনি প্রধানমন্ত্রীর নীতির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। একজনের পক্ষ নিয়ে অন্য প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, গায়ে হাত তোলার কথা বলেছেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রচারণা সভায় অরুণ সাহেবের এমন বক্তব্য দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার সাহেব পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি কোনো বাধা দেননি। আমি মনে করি এমন বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই এবং অভিযুক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চাই। ইতোমধ্যে আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ করার সময় আমার পায়ে গুলি লেগেছে। আমাকে উদ্দেশ করে এমন হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়ে শুধু আমাকেই অপমান করা হয়নি, সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভোলার লালমোহনে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন। এবারের নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি। তাই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসব মুখর করতে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় মার্কা দেওয়া হয়নি। দল থেকে একাধিক প্রার্থী হলেও দলের কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলীয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন