• ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
logo

ভয়াল ২৯ এপ্রিল : এখনও অরক্ষিত উপকূল 

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৩
ভয়াল ২৯ এপ্রিল: এখনও অরক্ষিত উপকূল 
ছবি : আরটিভি

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এ দিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারান।

নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ’৯১-এর এই ঘূর্ণিঝড় একটি। ’৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ দিনটি। গভীর রাতে বেঁচে যাওয়াদের আজও ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বারবার ফিরে আসে তাদের জীবনে।

চারদিকে নদী আর সাগরবেষ্টিত সন্দ্বীপ দেশের মূলভূণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে এখানকার মানুষদের নিত্য বসবাস। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত এখানকার বাসিন্দারা। ভয়াল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সন্দ্বীপের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান। বাড়িঘর, ফসলের মাঠ, রাস্তা-ঘাটসহ পুরো সন্দ্বীপ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দিনটির কথা আজও ভোলেনি সন্দ্বীপের মানুষ। দ্বীপবাসী আজও মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ দিনটি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বারবার ফিরে আসে তাদের জীবনে।

দীর্ঘ ৩৩ বছর পরেও অরক্ষিত দ্বীপের বেড়িবাঁধ। ৫৬ কিলোমিটার ব্লক বেড়িবাঁধের মধ্যে ব্লক বেড়িবাঁধ হয়েছে মাত্র ১০ কিলোমিটার। বাকি মাটির বেড়িবাঁধগুলো বেশিরভাগ জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

জলোচ্ছ্বাসের সময় দ্বীপের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো- সন্দ্বীপ পৌরসভা, মগধরা ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ, সারিকাইত ইউনিয়নের দক্ষিণ ও মাইটভাঙ্গা, মুছাপুর, আজিমপুর, রহমতপুর, কালাপানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমাংশ। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার হলে এসব এলাকার লোকালয়ে পানি ঢোকে।

সন্দ্বীপে বসবাসরত প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের জন্য শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। প্রতি চার হাজার মানুষের জন্য সাইক্লোন শেল্টার একটি। একটি সাইক্লোন শেল্টারের ধারণ ক্ষমতা তিন শ’রও কম মানুষ। সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় ৭০-৮০ হাজার মানুষ।

মাঈটভাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান আরটিভিকে বলেন, ১৯৯১ সালের স্মৃতি আমরা সন্দ্বীপবাসী কখনও ভুলতে পারব না। এ দিনে আমরা অনেক স্বজন হারিয়েছি। সন্দ্বীপকে সুরক্ষিত করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।

সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন আরটিভিকে বলেন, ‘সেদিনের স্মৃতি মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে। লাশ পানিতে ভাসতেছিল। এ ছাড়া অনেক গবাদি পশুও মারা যায়। দুঃখের বিষয় আমরা আজও আতঙ্কে দিন কাটাই টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে।’

৬৫ বছরের বয়োবৃদ্ধ সারিকাইত বাংলাবাজার বেড়িবাঁধের বাসিন্দা বাসু জলদাস আরটিভিকে বলেন, ‘১৯৯১ সালের বন্যায় আমি আমার ২ ছেলেকে হারিয়েছি। আমি বর্তমানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখনও এই বৃদ্ধ বয়সেও সাগরে যেতে হয়।’

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা আরটিভিকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে সন্দ্বীপ সুরক্ষায় নতুনভাবে ৫৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ১২ কিলোমিটার টেকসই ব্লক বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবে। এ কাজ সম্পন্ন হলে সন্দ্বীপ সুরক্ষিত হবে।’

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টিপু-প্রীতি হত্যা: অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
X
Fresh