তিন বছর অনুপস্থিত, নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক
মাদরাসায় অনুপস্থিত দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় প্রতিদিন দেওয়া আছে উপস্থিতির স্বাক্ষর। শুধু তাই নয়। বেতন বিলের সিটেও নিয়মিত দেওয়া আছে স্বাক্ষর। আর সেই বিল উপস্থাপন করে ব্যাংক থেকে প্রতি মাসের বেতন উত্তোলন করা হয়। পুরো বিষয়টি মাদরাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানলেও নেয়নি কোনো ব্যবস্থা।
সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদরাসা পরিদর্শন করেন। তাতে পুরো ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। পরে এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারসহ মাদরাসার সবাইকে আদেশ দিয়ে আসেন। ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালী হাতিয়ার খাসের হাট মাজেদিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসায়।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. ইয়াকুব নুরী ওই মাদরাসার এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক। তার শিক্ষক ইনডেক্স নাম্বার ৩০১৬৮০-টি-৪০৪। তিনি গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৩ সাল থেকে এই মাদরাসায় শিক্ষকতা করে আসছেন।
হাতিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (সদ্য বিদায়ী) আমির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ইয়াকুব নুরী নামে একজন শিক্ষক মাদরাসা অনুপস্থিত। নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। এটি জানার পর মাদরাসায় গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সুপার জানান, তিনি অসুস্থ। কিন্তু মেডিকেল ছুটিসহ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। এই কাজটি সম্পূর্ণ আইন বিরোধী বলে বিবেচিত। কোনো ভাবে তারা এই কাজ করতে পারেন না। মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মাদরাসার পাশে বসবাস করেন চরকিং ৯নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আল আমিন। তিনি জানান, দীর্ঘ তিন বছরের ও বেশি সময় ধরে এই শিক্ষক মাদরাসায় আসেন না। কিন্তু প্রতি মাসে বেতন উত্তোলন করেন। প্রতিদিন মাদরাসার উপস্থিতির স্বাক্ষরও অন্য একজন দিয়ে দিচ্ছেন। এই বিষয়ে অভিভাবকরা অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পায়নি। তিনি নিজেও মাদরাসায় গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সুপার সম্পূর্ণ নিজ ক্ষমতা বলে বিশাল এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মাদরাসার শিক্ষক উপস্থিতির সিটের একটি কপি পাওয়া যায় তাতে শিক্ষক নুরীর উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়া আছে। আবার একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বিলের সিটের একটি কপি পাওয়া যায় তাতেও শিক্ষক নুরীর স্বাক্ষর দেওয়া। কিন্তু দুটি সিটে একই ব্যক্তির স্বাক্ষরেও কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে মাদরাসার সহসুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানান, ইয়াকুব নুরী নামে এই শিক্ষক দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ হয়ে হাতিয়ার বাহিরে অবস্থান করছে। তার পরিবর্তে অন্য একজনকে মৌখিক ভাবে নিয়োগ দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টি থেকে এটি করানো হয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে মানবিক দিক বিবেচনা করে সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এই ঘটনায় মাদরাসার সুপার আবু জাফর মো. ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সাংবাদিকদের এসব তথ্য কে দেয় বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। এসব কিছু তিনি স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে করছেন বলে জানান।
মন্তব্য করুন