• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সাত খুনের ১০ বছর : বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১৬
সাত খুনের ১০ বছর: বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ স্বজনরা
ছবি : আরটিভি

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের দশ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে ভুক্তভোগীর পরিবার। স্বজনহারার কষ্ট বুকে চেপে কান পেতে আছে বিচারের শেষ রায় শোনার প্রতীক্ষায়। আর সচেতন মহল বলছে, নৃশংস এ ঘটনার দ্রুত রায় হলে মানুষ বুঝবে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না।

নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হলেও আপিল করে উচ্চ আদালতে হয় এ মামলার নিষ্পত্তি। এর মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেন উচ্চ আদালত। তবে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানি বন্ধ থাকায় এখনও কার্যকর হয়নি চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রায়। এতে নিহতের স্বজনরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।

আলোচিত এই সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে খুন করা হয়। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এ মামলার বাদী। মামলার রায়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

মামলার রায়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানি নিয়ে সাত খুনের এ মামলার বাদী ও নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আসলে এখন আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। আমরা শুধু বিচারটুকুই চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ তিনি যাতে সন্তান হারানো মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে বিচারটা করেন।’

নজরুল ইসলামের স্ত্রী আরও বলেন, ‘নানা দুঃখ-দুর্দশা ও ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আমার মতোই দীর্ঘ দশ বছর পার করেছেন নিহত অন্য ৬ জনের পরিবারের সদস্যরাও। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিচার এখনও কার্যকর না হওয়ায় আমরা সবাই হতাশ।’

এ প্রসঙ্গে নিহতদের স্বজনরা জানান, সরকার যদি বিচার করত, সেটা দেখে মরতে পারলেও কিছুটা শান্তি পেতেন তারা। তারা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

আসলে কি এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন নিহতদের স্বজনরা।

এ নিয়ে নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের মেয়ে রোজা বলে, ‘আমার জন্মের পর বাবাকে দেখিনি। বাবার আদর-ভালোবাসা পাইনি। আমার জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছি।’

নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুর বলেন, ‘আমার বাচ্চা প্রতিরাতে কান্না করে। ওর চাচারা তাদের ছেলে মেয়েকে কত আদর করে। অথচ আমার মেয়েকে কেউ একটু আদর করে না। আমার মেয়ে বাবার আদর কেমন সেটা জানে না।’

তথ্যসূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরা শেষে প্রাইভেটকারযোগে বাড়ি ফিরছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম। পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সাদা পোশাক পরিহিত র‌্যাব সদস্যরা তাদের অপহরণ করেন। আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার গাড়িচালক ইব্রাহিম পেছন থেকে এ চিত্র মুঠোফোনে ভিডিও করলে ওই র‌্যাব সদস্যরা তাদেরও ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা থেকে তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে আলাদা দুটি হত্যা মামলা করেন। পরে দুই মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সাত খুনের এই হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ হোসেন, চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত।

পরে ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন।

২০১৮ সালের নভেম্বরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১৯ সালে র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এম মাসুদ রানা, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেনসহ দণ্ডিত আসামিরা আলাদাভাবে আপিল করেন।

তবে আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানি এখনও হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীর সাখাওয়াৎ হোসেন খান।

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের যাতে বিচার না হয় সে চেষ্টা কিন্তু হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা চাই, যে রায় হয়েছে সেটি দ্রুত কার্যকর করা হোক।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ২৩ জন কারাগারে এবং ১২ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিখোঁজের ২ দিন পর মিলল যুবকের মরদেহ
নারায়ণগঞ্জে ৬২৪ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ
বস্তা থেকে বের হচ্ছিল দুর্গন্ধ, মিলল স্কুলছাত্রীর মরদেহ 
মাথায় গুলি চালিয়ে আনসার সদস্যের আত্মহত্যার অভিযোগ
X
Fresh