• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

চাঁদপুরে শুরু হয়েছে লেংটা পাগলের মেলা

স্টাফ রিপোর্টার (চাঁদপুর), আরটিভি নিউজ

  ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৪
ছবি : আরটিভি

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বদরপুরের বেলতলীতে ৫ দিনব্যাপী হজরত শাহ্ সোলেমান লেংটা পাগলের মেলা। লেংটা পাগলের মেলায় এসে সোলেমান শাহ ল্যাংটার অনুকরণ করছে তার ভক্তরা। এবার পালিত হচ্ছে শাহ্ সোলেমান লেংটার ১০৫তম ওরশ শরীফ। মেলায় প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। অসংখ্য ভক্ত ল্যাংটা বাবার মাজার জিয়ারত করছেন এবং জিকির আসকার করে ঢোল বাদ্য, বাজনা বাজিয়ে মাজার ত্যাগ করছেন।

কারণ তাদের মতে, ল্যাংটা ফকির ছিলেন একজন ভালো মানুষ। মেলাকে ঘিরে গতকাল শনিবার থেকেই অসংখ্য পাগল ও ভক্তবৃন্দদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মতলবের বেলতলী। রোববার (৩১ মার্চ) থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ মেলা।

শাহ্ সোলেমান লেংটার ওফাত দিবস উপলক্ষে গত ১০৫ বছর যাবত উদযাপিত হয়ে আসছে এ মেলা। স্থানীয়দের মতে বেলতলীর বদরপুর গ্রামে সোলেমান শাহ্ নামে এক ফকিরের মাজার আছে। এই মাজারই ল্যাংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, সোলেমান শাহ্ জীবদ্দশায় একটুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতো বলে তাকে লেংটা পাগল ডাকতো সবাই। প্রতি বছরে অসংখ্য ভক্তরাই লেংটার মেলার আয়োজন করে থাকেন। নামে লেংটা হলেও আদতে এখানে আসা পাগলেরা কেউই লেংটা নন। তবে তারা ভাবের পাগল। শাহ্ সোলেমান শাহ্ জন্মস্থান কুমিল্লা জেলার বর্তমান মেঘনা থানার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলা বঙ্গ ভূঁইয়া। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন মতলবের বদরপুরের বেলতলীর তার বোনের বাড়িতে। সেখানে থেকে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী গ্রামে তিনি বিয়ে করেন। অনেকেই দাবি করেন তার বংশধর এখনও আছে। সোলেমান শাহ্ কাউকে মুরিদ করেননি। তবে মতলব তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও অগণিত ভক্ত।

কয়েকজন ভক্ত জানান, তার বোনের বাড়িতেই হজরত শাহ্ সোলেমান লেংটা পাগলের মাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় লেংটা পাগলের মেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় লঞ্চ, ট্রলার, বাস, মিনি বাস, ট্রাক, মেক্সী, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোবাইক যোগে ওরশে আসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ। তারা নিয়ে আসেন গরু, মহিষ, ছাগল, মোরগ, ডিম, ডাল, চাউল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মানতি জিনিসপত্র।

এই মেলাকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পকেটমার, ছিনতাই, মলমপার্টি, হিজরা, প্রতারকদের তৎপরতা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা লেংটা বাবার দরবারে পুণ্য, রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন কামনা—বাসনা নিয়ে আসেন। এ ছাড়াও ঢোল—কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পুণ্যের আশায়।

ল্যাংটার মেলায় একদিকে আনন্দের হিল্লোল অন্যদিকে বসে গাঁজার রমরমা আসর। মাজারে প্রতিদিন উঠছে কয়েক লাখ টাকা। সব মিলে এখানে বাণিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। মাজার কমিটি প্রতিবছর ভালো অংকের টাকাও উপার্জন করে থাকে। আর এ মাজারে দেওয়া মানতি টাকা কতিপয় কয়েকজনের পকেটে। এ টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। এ টাকায় অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। সারা বছর এ মাজারটি অর্থ পাওয়ার সেক্টরে পরিণত হয়েছে। দোকান বসে প্রায় ৩/৪ সহস্রাধিক। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও এই মেলা যেন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এমন দৃশ্য শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে।

মেলার চারদিকে ঘুরে কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম ও মাদকের স্বর্গরাজ্য চিত্র দেখা যায়। অনেকে নারী—পুরুষ, স্কুল কলেজের ছেলেরা পর্যন্ত মাদক ও অশ্লীলতার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। ছোটখাটো অসংখ্য আসর বসে যার বেশির ভাগ স্থানেই নারী পুরুষ অশ্লীল নৃত্যে মগ্ন থাকতে দেখা গেছে। মাজারের পশ্চিম পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে গাঁজা সেবনের মহোৎসব। এ যেন গাঁজার স্বর্গরাজ্য নিরাপদ স্থান। যেন দেখার কেউ নেই।

লেংটার মেলায় প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের ভিড় ও দূর—দূরান্তে থেকে আসা অসংখ্য লোকের তত্ত্বাবধানকরতে সমস্যা হয় কি না প্রসঙ্গে মাজারে দীর্ঘ ৪৩ বছর যাবত খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খাদেম লাল মিয়া সরকার বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে এখন আর কোনো সমস্যা মনে করি না। তাছাড়া স্থানীয় লোকজন এ কাজে অনেক সহযোগীতা করে থাকেন। প্রতি বছর মেলা ৭ দিন হলেও এবার পবিত্র মাহে রমাজন মাসের কারণে একটু ছোট করা হয়েছে। লাখ লাখ লোকের মিলন মেলায় আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আছে বিধায় প্রতিবছর শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো, শহীদ জানান, ওরশের পবিত্রতা রক্ষা ও নির্ভিঘ্নে ওরশ পালন করার স্বার্থে কোনো প্রকার মাদক বিক্রি করতে দেয়া হবে না। এর সঙ্গে কারও জড়িত পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।

বাংলা ১৩২৫ সালের ১৭ চৈত্র সোলেমান শাহ বেলতর্লী বদরপুর তার বোনের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ চৈত্র তাকে বদপুরের এই বেলতলীতে (যেখানে মাজার) সেখানে তাকে দাফন করা হয়।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চাঁদপুরে ৭ মামলায় গ্রেপ্তার ৪৮
চাঁদপুরে বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস পালিত
চাঁদপুর থেকে সীমিত পরিসরে চলছে যাত্রীবাহী লঞ্চ 
কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল চাঁদপুর