• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

২২ বিয়ে করেও দুঃখ কাটেনি ভিক্ষুক নূরুল ইসলামের!

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:৪৬
ছবি : আরটিভি

কাগজ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি অনেকটা পাখির বাসার মতো জরাজীর্ণ এক কুঁড়ে ঘরে বসবাস ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভিক্ষুক মো. নূরুল ইসলামের। উপজেলার ভাইকান্দি গ্রামের বেরাক পুর এলাকায় তার বাড়ি।
ভিক্ষা করেই চলে তার দুঃখ গাঁথা জীবনের জীবিকা। তবে তার ৭০ বছরের দীর্ঘ জীবনে দুঃখ ঘুচিয়ে সংসারী হতে চেষ্টা করেছেন বার বার। এজন্য তিনি একে একে বিয়ে করেছেন ২২টি। কিন্তু কোনো স্ত্রীই তার সংসারে টিকেনি বেশি দিন।

এনিয়ে এলাকাবাসীসহ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ভিক্ষুক নূরুল ইসলামের মনের দুঃখ ঘুছেনি আজও। এনিয়ে প্রায়ই মনোকষ্টে বিরহের গান গেয়ে আপন মনে পথ চলতে দেখা যায় তাকে।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভিক্ষুক নূরুল ইসলাম শুয়ে আছেন নিজগৃহে বাঁশের তৈরি জরাজীর্ণ এক মাচার বিছানায়।

কিন্তু তার এ ঘরটি এতটাই নিচু যে ওই ঘরে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে নুইয়ে থেকেই ওই ঘরে প্রবেশ ও বাহির হতে হয়। তার ঘরের চারপাশে পুটলায় ঝুলে থাকতে দেখা গেছে সারিসারি প্লাস্টিকের বস্তা ও ব্যাগ। এতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে নূরুল ইসলামের প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র।

কেমন আছেন? জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বলেন, ভালো না, জীবনে দুঃখ নিয়েই আছি। সুখ পাইলাম না। একটা ঘরের জন্য আমার সব বউ পালাইয়া গেছে গা। শুনছি কত মানুষ সরকারি ঘর পায় কিন্তু আমারে কেউ একটা ঘর দিল না।

এ সময় তার ২২ বিয়ের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট বেলায় মানুষের বাড়িতে কাম (কাজ) করতাম। তহন আটা আনা, চার আনা ময়না দিত আর কালাই ভাজা খাওয়াইত। তহন আমার এক ফুফু বলে নূর ইসলাম তর কাছে আমার পাগলি বিয়া দেহালাই (দিয়ে দেই)। তখন আমি বিয়ে করে ঘর জামাই হই। তার নাম ছিল হাজেরা খাতুন। কিন্তু বিয়ের ২/৩ বছর পর বউ খালি ঝগড়া করে, এরপর আমি রাগ করে হেরে থইয়া (রেখে) আয়া পড়ছি। এরপর ভালা ও পাগলি মিলাইয়া ৭/৮ বিয়ে করি। কয়েক মাস থাইক্কা থাইক্কা সবাই চলে গেলে আমার প্রথম বউ আবার আমার ঘরে আসে। এরপর আমার চারটি সন্তান হয়। এর মধ্যে তিনটা সন্তান মারা গেছে। এহন একটি মেয়ে আছে। তার নাম শ্যামলা খাতুন, বিয়ে দিয়ে দিছি।

এরপর প্রথম বউ হাজেরা মারা গেলে অনেক পাগলি ধরে এনে বিয়ে করতে করতে ২২টি বিয়া করেছি। কিন্তু আমার ভাঙা ঘরে কেউ টিকলো না। এদের অনেককে শিকল ও দড়ি দিয়ে বাইন্ধা (বেঁধে) সঙ্গে সঙ্গে রাখছি। পরে সুযোগ পাইয়া সবাই পালাইয়া গেছে, বলতে বলতে আপন মনে গানে সুর ধরেন তিনি। সুরে সুরে বলেতে থাকেন- হতভাগা হইয়া আমি, থাকি আমি এই সংসারে।

জানা যায়, নূরুল ইসলামের বিয়ে করতে কোনো কাবিন লাগে না। মুন্সি দিয়ে তিনবার কবুল বলেই তিনি বিয়ে করেছেন একে একে ২২টি।

স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন জানান, নূরুল ইসলামের প্রথম বউ মারা যাবার পর বিয়ে করা বেশির ভাগ বউ তার পাগলি ছিল। এরা কেউ বেশি দিন তার সংসারে থাকেননি।

নূরুল ইসলামের প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী বলেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে নূরুল ইসলাম বিয়ে করছে ২২টি। কিন্তু তার কোনো ঘর নাই। তিনি খুব কষ্ট করে ভাঙা ঘরে থাকেন। তার একটি ঘর হলে ভালো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। খোঁজখবর নিয়ে তার (নূরুল ইসলাম) জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যেদিন থেকে হজের প্রথম ফ্লাইট
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ধর্মমন্ত্রী
ময়মনসিংহে বাসের ধাক্কায় সিএনজির ২ যাত্রী নিহত 
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৯ নেতাকে শোকজ
X
Fresh