• ঢাকা বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সন্দ্বীপের পুলিন গুহের জমিদার বাড়ি 

অপু ইব্রাহিম, সন্দ্বীপ প্রতিনিধি

  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৬
ছবি : আরটিভি

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের পুলিন গুহের জমিদার বাড়ি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দক্ষিণ সন্দ্বীপের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। যুদ্ধ শুরুর পর এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছিল জমিদার বাড়িটি। এখানে বসেই মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা করা হতো। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আজিজুর উল্লাহ জানিয়েছেন পুলিন গুহের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

তিনি আরটিভিকে বলেন, প্রতিদিন আমরা এ বাড়িতে একত্রিত হতাম। আমাদের টিমে আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু, জগলুল হায়দার, মোহাম্মদ ইয়াছিন, আমি আজিজ উল্লাহসহ ১০/১২ জন ছিলেন। জমিদার পুলিন গুহ আমাদের সহযোগিতা করতেন। পুলিন বাবু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এখানে বসেই মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের পরিকল্পনার বৈঠক হতো। ফলে আমাদের জন্য রান্না হতো প্রতিদিন এ বাড়িতে৷ পুলিন বাবুর বাড়িতে আমরা যে একত্রিত হতাম এ বিষয়ে কিছু মুসলীম লীগের নেতা জেনে যায়। পরে বাড়িটিতে আক্রমণ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। সেখানে আমাদের না পেয়ে পুলিন বাবুর ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘরের অনেকগুলো দেয়াল ভেঙ্গে যায়।

জানা গেছে, ১৯৪১ সালে (বাংলা ১৩৪৮) জমিদার প্রাণহরি চন্দ্র গুহ ২তলা বাড়িটি নির্মাণ করেন৷ এ বাড়িতে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী ভারত থেকে জাহাজে করে আনা হয়। ১৯৬০ সালে জমিদারির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার নাতি পুলিন চন্দ্র গুহ বংশের হাল ধরেন। তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক ও ভালো মনের মানুষ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়।

স্থানীয় সারিকাইত ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান আরটিভিকে বলেন, জমিদার পুলিন গুহ ছিলেন অসম্প্রদায়িত চেতনার মানুষ। হিন্দু মুসলিম সকলের কাছে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। প্রতি রমজানে তিনি বাড়িতে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে রোজাদারদের ইফতার করাতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। শুধু তাই নয় বাহির থেকে সন্দ্বীপে কেউ বেড়াতে আসলে তার বাড়িতে আশ্রয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিন বাবুর বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সব থেকে ভরসার স্থল। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পুলিন গুহের বাড়িটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

জমিদার পুলিন গুহের নাতি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রাম ইউনিটের কর্মকর্তা সঞ্চয় গুহ আরটিভিকে বলেন, আমার দাদা ছিলেন পরোপকারী মানুষ। কখনও কোনো কাজের প্রতিদান চায়তেন না। তিনি যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশ থেকে সহযোগীতা করেছেন। এজন্য আমাদের বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় পাক হানাদাররা। যার স্মৃতি চিহ্ন আজও আছে। আমার দাদা কখনও মুক্তিযুদ্ধার স্বীকৃতি চান নাই। চাইলে হয়তো পেতেন। দাদার স্বীকৃতি সরকার যদি মনে করে দেয়া উচিত তাহলে দিবে। প্রায় শত বছরের বসতঘরে আমরা এখনও বসবাস করছি স্বগৌরবে৷ যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। তাই বাড়ির দরজায় বা বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি হিসেবে নেইম-প্লেট স্থাপন করে অন্তত বাড়িটিকে স্বীকৃতি দিলেও আমাদের ভালো লাগবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোরশেদ আলম চৌধুরী আরটিভিকে বলেন, বিষয়টি আমরা ভেবে দেখবো। কিছু করণীয় থাকলে অবশ্যই করবো।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সন্দ্বীপে পথচারীদের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ 
সন্দ্বীপে ইসতিসকার নামাজ আদায় 
সন্দ্বীপে শতাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ 
সন্দ্বীপে বিদেশি মদসহ অটোরিকশাচালক গ্রেপ্তার 
X
Fresh