• ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অভাবের তাড়নায় কন্যাসন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন বাবা

কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৭
কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে অভাবের তাড়নায় জন্মের মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে কন‍্যাসন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের বানুরকুটি গ্রামে।

ওই গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলামের (৩২) স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২৮) শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে নিজ বাড়িতে একটি কন‍্যাসন্তানের জন্ম দেন। ভরণপোষণ দিতে না পারার শঙ্কায় জন্মের মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যেই ওই সন্তানকে তুলে দেন প্রতিবেশী এক মামাত বোনের হাতে। এটি ওই দম্পতির পঞ্চম সন্তান।

জানা গেছে, মাত্র ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়েছেন বাবা শফিকুল ইসলাম। অপরদিকে চার বছর আগে ওই দম্পতি আরেক কন্যা সন্তানকে অজানা লোকের কাছে তুলে দেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম একজন বন্দর শ্রমিক। তিনি সোনাহাট বন্দরে শ্রমিকের কাজ করেন। তার তিনশতক জমি রয়েছে। তবে থাকার কোনো ঘর নেই। ছোট ভাইয়ে ঘরে থাকেন পরিবার নিয়ে। ১৩ বছর আগে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের খাষমহল গ্রামের মরিয়শ বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। অভাবের সংসারে ইতোমধ্যে জন্মগ্রহণ করে ৫ সন্তান। প্রথম সন্তান মফিজুল ইসলামের বয়স ৯ বছর, দ্বিতীয় সন্তান মোছা. জান্নাতের বয়স ৭ বছর। এরপর তৃতীয় সন্তান ৪ বছর আগে জন্ম নিলেও নাম রাখা হয়নি। একদিন বয়সে প্রতিবেশী আকলিমার মাধ্যমে রামখানা ইউনিয়নের অজানা এক দম্পতির কাছে দত্তক দেওয়া হয়। চতুর্থ সন্তান মোস্তফার বয়স ৩ বছর। এরপর পঞ্চম সন্তান মুক্তি জন্ম নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে দেন প্রতিবেশী মামাতো বোন নিঃসন্তান লাকী বেগমের কাছে।

লাকী ও আলমগীর দম্পতির বাড়ি ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তবে এই দম্পতি ঢাকায় পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ করে বলে নিশ্চিত করেছেন লাকী বেগমের পিতা আকবর আলী।

স্থানীয় নাজমুল ও শহিদুল জানান, শফিকুলের নিজস্ব ঘর-বাড়ি নেই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন তিনি। স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। শফিকুলের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। এই নিয়ে তিনি দুটি মেয়ে বাচ্চা দত্তক দিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোনো ঘর নেই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিত থাকি। শ্রমের সামান‍্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণপোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবসময় অভাবের মধ্যে থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। এর আগেও আরেক মেয়েকেও অন্যের কাছে দিয়েছি। সেটার খোঁজ-খবর জানি না। বলতে পারেন অভাবের কারণেই এই পথে হাঁটা।

২০ হাজার টাকায় সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। অন্যের কাছে ভালো পরিবেশে আদর যত্নে মানুষ হবে এই ভেবে তাদেরকে দিয়েছি। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। শফিকুলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, অভাব অনটনের জন্য মেয়েকে অন্যের কাছে দিয়েছি।

শিশুকে দত্তক নেওয়া আলমগীর হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, আমরা নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। টাকা পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

ইউপি সদস‍্য মনোয়ার হোসেন জানান, পূর্বে একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের তথ‍্য আমার জানা নেই। তবে লোকটা খুব অভাবী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিবেন বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বৃষ্টির আশায় কুড়িগ্রামে ব্যাঙের বিয়ে
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
কুড়িগ্রামে পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী-শিশুসহ আহত ১০
চিলমারীতে সাপের কামড়ে এক কৃষকের মৃত্যু
X
Fresh