মোংলায় ভূমি দখল নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বাঘা বাজারে প্রায় এক হাজার শতক ভূমির মালিকানা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতা আ. হান্নান শেখের জোরপূর্বক দখল চেষ্টার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিকে উড়িয়ে দিলেও আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ওই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর দাপট ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাঘা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বাঘা মৌজার এস এ খতিয়ানের চার হাজার শতক সরকারি জমি থেকে ৯০০ শতক জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস করে আসছে স্থানীয়রা।
ওই জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চারটি ধর্মীয় উপাসনালয়(মন্দির), একটি কলেজ, একটি ছাত্রী নিবাস(শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস) এবং পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বসতবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পর্যায়ক্রমে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে তারা এসব স্থাপনা তৈরি করেন।
কিন্তু ২০১৫ সালে এ জমি নিজের দাবি করেন হান্নান শেখ। এরপর সুকৌশলে নিজ নামে ওই সম্পত্তি রেকর্ড করে নেন তিনি।
পরে হান্নান শেখ, রামপাল উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার(ভূমি)এ কে এম জহিরুল আলম, অফিস সহকারী জুলফিকার আলীসহ কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে এসব জমি রেকর্ড করে দেয়ার অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন দখলকারীরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(আইসিটি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) মোমিনুর রশিদকে দায়িত্ব দেন।
তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার আবু রাহা মো. আরিফ ওই সম্পত্তির রেকর্ডীয় নাম জারি বাতিলের আদেশ দেন এবং একই আদেশে বন্দোবস্ত বসবাসকারীদের নামে রেকর্ড বহাল রাখেন।
বাঘা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার মণ্ডলের অভিযোগ, এই আদেশের পর হান্নান আরো ক্ষিপ্ত হন। প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে ভাড়া দাবি করেন। কিন্তু ভাড়ার টাকা ব্যবসায়ীরা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি ওই জমি দখলের চেষ্টা চালান।
সুন্দরবন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এম এ খালিদ জানান, কলেজের জায়গাও দাবি করেন ভূমিদস্যু হান্নান। পরে দেখা যায় তিনি যে দলিল নিয়ে জায়গাটি দাবি করেন সেটি জাল দলিল।
এদিকে অভিযুক্ত হান্নানের সঙ্গে কথা বললে তিনি দাবি করেন, খরিদ সূত্রে তার বাবা ওই সম্পত্তির মালিক। বাবার মৃত্যুতে ওয়ারিশ সূত্রে তিনি ওই জায়গার মালিক। তাই আইনের মাধ্যমে তা ফিরে পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
বাঘা সর্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি রথিন্দ্র নাথ হালদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, হান্নান যেভাবে তাদের হুমকি দিচ্ছেন তাতে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে।
এ বিষয়ে রামপাল থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে পুলিশের কিছু করার নেই। তবে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
জেবি/কে
মন্তব্য করুন