• ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবসতি এলাকায় ১৩৭ ইটভাটা

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০২:২৮
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবসতি এলাকায় ১৩৭ ইটভাটা
কিশামত সর্বানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাখা কাঁচা ইট

গাইবান্ধা জেলায় চলতি বছর মোট ১৩৭টি ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এ মধ্যে ১২১টিই অবৈধ বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাটাগুলোর অবস্থান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায়।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধায় প্রায় ১৭২টি ইটভাটা রয়েছে। এ বছর ৩৫টি ইটভাটা চালু করা হয়নি। বর্তমানে চলমান ১৩৭টি ভাটার মধ্যে মাত্র ১৬টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। এ ছাড়া জেলায় লাইসেন্স বিহীন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ১২১টি ভাটা অবৈধভাবে চলছে।

পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধা জেলার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবসতি এলাকায় ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ইট পোড়ানোর গন্ধে শিশু শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এগুলো উচ্ছেদে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে বাঁধা কোথায়, তা বোধগম্য নয়।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গাইবান্ধা-ধর্মপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কের পশ্চিম পাশে এমআরবি ইটভাটা। সড়কের পূর্বপাশে ধর্মপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটার একদিকে বিদ্যালয়, তিনদিকে আবাদি জমি ও বসতবাড়ি। ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো চলছে। চিমনিতে প্রচুর ধোঁয়া উড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ভাটার কালো ধোঁয়া, বালুর কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। শিশুদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। লেখাপড়ার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

ভাটা সংলগ্ন ধর্মপুর গ্রামের জমিরুল ইসলাম বলেন, ভাটার কারণে আমার বাড়ির গাছের ফল ধরছে না। ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। একই কথা বলেন মেহেরুল ইসলাম। তাদের দাবি ইটভাটায় আবাদি জমির ওপরের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি করায় ওইসব জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না।

ভাটা মালিক মাহবুবর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়না। তবে প্রতিবছর সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ভাটা চালাচ্ছি।

গাইবান্ধা-বামনডাঙ্গা-রংপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন কিশামত সর্বানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের অন্তর্গত। বিদ্যালয়ের পাশে কেএনএম নামে একটি ভাটা রয়েছে। ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। সেখান থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। বিদ্যালয় মাঠের পাশেই কাঁচা ইট রাখা আছে। পাশে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।

শিশু-শিক্ষার্থীরা জানায়, ধুলাবালি উড়ে আসায় আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। ক্লাসেও থাকতে পারি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, পাঠদান চলাকালীন ট্রাক্টর চলাচলের সময় ধুলাবালুর কারণে শ্রেণিকক্ষের বারান্দা, চেয়ার বালুতে ঢেকে যায়। ইট ও মাটি পরিবহনের কারণে বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তা নষ্ট হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে ভাটার লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।

সর্বানন্দ গ্রামের কৃষক ফজলার রহমান বলেন, ভাটার কারণে জমির ফসল ও গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। গতবার কালো ধোঁয়ায় উঠতি বোরো ফসলের মাঠ পুড়ে গেছে। একই গ্রামের আবু তালেবও একই কথা বলেন।

ভাটা মালিকদের একজন মোকলেছ মিয়া বলেন, আমাদের ইটভাটা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে ২০০৭ সালে স্থাপন করা হয়। ভাটায় অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে। এখন কিভাবে সরিয়ে নেব? পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকলেও অন্যান্য কাগজপত্র আছে।

কিশামত সর্বানন্দ থেকে আধা কিলোমিটার দুরে একই গ্রামে গড়ে উঠেছে মহিউল ইসলামের এফকেএম ইটভাটা। ভাটা থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে খাজেমুল ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ও আলহাজ্ব ইমান উদ্দিন জামিউল হাফিজিয়া মাদরাসা। মাদরাসা দুটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভাটার কারণে পাঠদান সঠিকভাবে হচ্ছে না এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

ভাটার মালিক মহিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই। তবে অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।

একইভাবে সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর-ঠুটিয়াপাকুর সড়কের পশ্চিম পাশে এসআরবি ইটভাটা। পূর্বপাশে কুঞ্জমহিপুর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা।

গাইবান্ধা জেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া বলেন, অবৈধ ভাটার কারণে বৈধ ভাটা মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা অবৈধভাবে ইট পুড়িয়ে কম দামে বিক্রি করছেন। আমরাও তাদের বৈধভাবে ইট পোড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অবৈধ ভাটা মালিকদের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। এগুলো উচ্ছেদ করা দরকার।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এর ৪ ধারা অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। লাইসেন্সের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। সেই বিধান লঙ্ঘনের দায়ে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪ লাখ টাকা জরিমানা ও দুইটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে।

এসব বিষয়ে রংপুরস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, গত একমাসে গাইবান্ধায় জরিমানাসহ বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমার নেতৃত্বে পাঁচটি এবং জেলা প্রশাসন পাঁচটি ভাটা ভেঙে দেয়। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শনিবার যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
শুক্রবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি
আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২ মে পর্যন্ত ছুটি বহাল
X
Fresh