• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আকাশে উড়ে যাচ্ছে হাওরের পানি (ভিডিও)

মৌলভীবাজার (স্টাফ রিপোর্টার), আরটিভি নিউজ

  ২৪ জুলাই ২০২২, ১২:৪১

সিলেট-মৌলভীবাজারের ছয় উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় হাকালুকি পানিতে টইটম্বুর। মিনি কক্সবাজারখ্যাত হাকালুকি অল্প বাতাসেও দেখা যায় ঢেউয়েরা গর্জন। এবার এ হাওরে দেখা মিললো টর্নেডো বা জলস্তম্ভের।

শনিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার চাতলার পার বা চাতলবিল এলাকায় এ দৃশ্য দেখতে পান তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হাকালুকি হাওরের এই টর্নেডো স্থায়িত্ব হয় তিন মিনিট।

৫০ বছরের মধ্যে হাওরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, সৃষ্ট টর্নেডোতে হাকালুকির পানি জোয়ারের ন্যায় টেনে আকাশে তুলে নেয়। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে বিজলী চমকে গর্জন করতে থাকে। জল আর আকাশে পানির পিলারের তৈরি হওয়া স্তম্ভ দেখতে হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতুহল ভরে দেখতে থাকেন। ওই সময় হাওরে উপস্থিত অনেকে ছবি তোলেন এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

হাকালুকির তীরবর্তী জুড়ী উপজেলার সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাকালুকিতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল। আগে কখনো দেখা যায়নি। শনিবার যে টর্নেডো দেখা মিলে সেটি বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী ছিল। তখন আকাশ কালো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। হাওরে নৌকা নিয়ে থাকা অনেকে সেটি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তীরে চলে আসেন।

সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনা সত্য। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে এমন দৃশ্য এলাকার শত শত মানুষ দেখেছেন। অলৌকিক এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, জলভাগের পানি শোষণ করে উপরে তুলে সৃষ্ট টর্নেডো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। যে কারণে সেটি ছেড়ে দেয়। নয়তো সেটি ধ্বংসাত্মক হতে পারতো। স্থলভাগের স্পর্শে আসলে সবকিছু গুড়িয়ে দিতো।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, হাকালুকি হাওর জলরাশিতে যেটা দেখা গেছে, সেটি মূলত টর্নেডো ছিল। এ ধরণের টর্নেডো অন্তত ১০/১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। সেটি হয়তো আরও বেশি বিস্তৃত হতে পারতো। এছাড়া যে লোক ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে, সেও এটার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেনি, এর ঘুর্ণয়ন গতি বিস্তৃত হতে থাকলে নৌকাসহ তাকেও আকাশে তুলে উড়িয়ে নিতে পারতো। কয়েক বছর আগে নেত্রকোণা হাওরেও ১০/১২ কিলোমিটার জুড়ে এরকম টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শক্তি সঞ্চার ঘটাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তেমনি হাকালুকি হাওরেও ঘূর্ণ্যমান তীব্রগতিতে পানি আকাশে উঠেছিল। সেটি কোনো দিকে মুভ করলে প্রলয়ঙ্করী হতে পারতো।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জল দিয়ে মোড়ানো বাতাসের তৈরি টর্নেডোর ফলে এটি সৃষ্টি হয়। জলভাগের ওপর শক্তিশালী টর্নেডো সৃষ্টি হলে প্রবল বেগে ঘূর্ণমান বায়ুর টানে জলভাগের জল টর্নেডোর কেন্দ্র বরাবর স্তম্ভাকারে ঘুরন্ত অবস্থায় ওপরে উত্থিত হয়। একে জলস্তম্ভ (Water Spout) বলে। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি ‘মেঘশূর’ নামে পরিচিত।

দেখতে টর্নেডোর মতো হলেও টর্নেডোর সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য উপাদানে। টর্নেডোতে থাকে বায়ু আর জলস্তম্ভে বায়ুর পরিবর্তে থাকে পানি। জলস্তম্ভ সাধারণত পানিতেই থাকে বলে জনপদে আহামরি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাতে পারে না। আর স্থলভাগের স্পর্শে আসলে এটি গুঁড়িয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হাওরের পাকা ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক, শ্রমিক সংকট
বিশ্বের সর্ববৃহৎ আলপনার উদ্বোধন
বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হচ্ছে হাওরে
৫০ বছর উদযাপনে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সোলস’
X
Fresh