• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাসপাতালের ফটকে সন্তান প্রসব, এগিয়ে এলেন না ডাক্তার-নার্স

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২২ জুলাই ২০২১, ২১:২৯
হাসপাতালের ফটকে শ্রমিকের স্ত্রী'র কন্যা সন্তান প্রসব
হাসপাতালের ফটকে সন্তান প্রসব

সুনামগঞ্জে প্রসব ব্যথায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দুর্গম পথ পেরিয়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন এক স্বামী। জরুরি বিভাগে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নারীকে ভর্তি না নিয়ে সিলেটে নিয়ে যেতে বলেন।

পরে রেস্তোরাঁ শ্রমিক তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ফটকের সামনে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করতে থাকেন। এ সময় স্ত্রীর প্রসব ব্যথা তীব্র হয়ে উঠলে তাকে ফটকের সামনে দিরাই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের রাস্তায় নিয়ে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জন্ম দেন তার স্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (২২) জুলাই দুপুরের দিকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক সংলগ্ন উপজেলা নির্বাচন অফিসের প্রবেশপথে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়ার স্ত্রী রাসমিনা (২১)।

ভুক্তভোগীর স্বামী রুবেল মিয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে আমি দিরাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। প্রথমে কাউকে পাইনি। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে একজনকে জরুরি বিভাগে পাই। তিনি আমার স্ত্রীকে সিলেট নিয়ে যেতে বলেন। আমি গরীব মানুষ। এতো টাকা কোথায় পাবে। এই চিন্তা করে বড় ডাক্তারের খোঁজ করতে থাকি। এ সময় ডাক্তার মনি রাণীকে খুঁজে পেয়ে তাকে আমার স্ত্রীর বিষয়ে বলি। তিনি আমার স্ত্রীকে দেখে বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না।

তাড়াতাড়ি সিলেট নিয়ে যেতে হবে। আমি বার বার অনুরোধ করলে বলেন, দোতলায় নিয়ে যেতে। তিনি বলে দেবেন। আমি কোলে করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় যাই। সেখানে একজন নার্স ছিল। আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। নার্স বলে এখানে রাখলে মা-সন্তান দুজনই মারা যেতে পারে।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে কোন পরীক্ষাও করা হয়নি। আমি বারবার অনুরোধ করেছি। অন্তত ২ ঘণ্টা আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে রাখতে। কিন্তু তারা রাখেনি। তাদের কথায় ভয়ে নিরুপায় হয়ে সিলেট যাওয়ার জন্য বের হই। হাসপাতালের গেইটের সামনে যাওয়ার পর আমার স্ত্রীর ব্যথা সহ্য করতে পারছিল না। রাস্তার পাশের অফিসে নিচে নিয়ে গেলে সঙ্গে থাকা আমার মা ও আরেকজন মহিলার সহযোগিতায় কাপড় দিয়ে পর্দা দিয়ে আমার স্ত্রী কিছু সময়ের মধ্যে ১ মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়।

তিনি আরও বলেন, এটি আমার প্রথম সন্তান ছিল। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন নার্সকে ঘটনা বললে তিনি ওই অফিসের বারান্দায় এসে আমার স্ত্রী সন্তানকে দেখে যান। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে এবং তাদের বাড়ি নিয়ে যান।

আক্ষেপ করে রুবেল মিয়ার সঙ্গে থাকা তার ছোট ভাই জাহিদুল আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘যা দেখলাম হাসপাতালে বলার ভাষা নাই। যাদের টাকা আছে তাদের হাসপাতাল আছে। যাদের টাকা নাই তাদের কিছু নেই।’

এ বিষয়ে জানতে আরটিভি নিউজকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মনি রাণীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে ঘটনার সময় দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বাধীন কুমার দাস তার সিলেটের বাসায় ছিলেন।

জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh